নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষক নিয়োগ থেকে কয়লা পাচার, গরু পাচার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরা। একই ভাবে পঞ্চায়েত স্তরেও একশ্রেণির তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বহুদিন ধরেই রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম প্রধান হল কাটমানি নেওয়া। মূলত আবাস যোজনা প্রকল্পকে কেন্দ্র করে এই অভিযোগ রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে সরকারের কাছে এসেছে। গত মার্চ থেকে এই প্রকল্পের অনুমোদন বন্ধ রেখেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। গত মাসের মাঝামাঝি ফের তা চালু করা হয়েছে। এবার প্রকল্পটি নিয়ে আরও কড়া অবস্থান নিচ্ছে রাজ্য। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় উপভোক্তাদের যাচাই করতে জেলায় জেলায় কড়া নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন।
এ বিষয়ে পঞ্চায়েত দফতর নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। পর্যবেক্ষকরা জেলাগুলিতে গিয়ে জব কার্ড যাচাই, গ্রাম সভার বৈঠক, উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি, আবাস প্রকল্পের জন্য ওয়েটিং লিস্ট-সহ ইত্যাদি যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় খতিয়ে দেখবেন। এরপর সেই তথ্যগুলি নিয়ে তাঁরা কথা বলবেন জেলাশাসকের সঙ্গে। তার ভিত্তিতেই তৈরি হবে চূড়ান্ত তালিকা। আর প্রশ্নটা উঠছে সেখানেই, বিরোধীদের দাবি এর আগে রাজ্য সরকার উপভোক্তাদের সঠিকভাবে যাচাই করলে দুর্নীতি হতো না। আর দুর্নীতির অভিযোগ যেভাবে উঠেছে তাতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় সমীক্ষার দায়িত্বভার গ্রহণ করতে ভয় পাচ্ছেন আশা কর্মীদের একাংশ। জানা গিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলায় সমীক্ষার দায়িত্বভার থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন জঙ্গিপুরের আশা ও আইসিডিএস-এর বেশ কয়েকজন মহিলা কর্মী। তাঁরা জানিয়েছেন প্রকল্পটি নিয়ে কাটমানির প্রচুর অভিযোগ উঠেছে। তাই বিষয়টি নিয়ে আশা কর্মীদের আশঙ্কা আগামী দিনে তাঁদের করা সমীক্ষার পর কেউ ঘর না পেলে হামলার মুখে পড়তে হতে পারে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
এই একটা ছোট্ট ঘটনাতেই স্পষ্ট দুর্নীতি কতটা ছড়িয়েছে এই প্রকল্পকে ঘিরে। আমফান ঘূর্ণিঝড়ের পর তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। যা নিয়ে তখন সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। স্বাভাবিকভাবেই তাতে মুখ পোড়ে সরকারের। তাই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন। তৃণমূল ভাল করেই জানে আবাসন প্রকল্প নিয়ে নতুন করে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে পঞ্চায়েত ভোটে তার প্রভাব পড়বে। এমনকী কেন্দ্রীয় সরকার আবার টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিতে পারে। এমনিতেই রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছে না বলে বার বার অভিযোগ উঠেছে। তবে কিছুদিন হল নতুন করে কেন্দ্র টাকা পাঠানো শুরু করেছে। সেটা যাতে বন্ধ হয়ে না যায় তার জন্য রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে। আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে যাতে সামান্যতম দুর্নীতির অভিযোগ না ওঠে সেদিকে কড়া নজর রেখেছে নবান্ন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে ভোট বড় বালাই, আর সেই কারণেই তৃণমূল বিষয়টি নিয়ে খুবই চিন্তিত। তাই কোথাও যাতে পান থেকে চুন না খসে সেই চেষ্টা করছে সরকার। যদিও বিরোধীদের দাবি এ কাজ করতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আরও আগে এ কাজ করা উচিত ছিল বলে মনে করে তারা। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আবাস যোজনা প্রকল্প রাজ্য প্রশাসন কতটা সার্থকভাবে রূপায়ণ করতে পারে সেটাই দেখার।