নিজস্ব প্রতিনিধি: শেষ পর্যন্ত বড় অঘটন না ঘটলে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এবং সিপিএম জোট বেঁধেই লড়তে চলেছে। শীঘ্রই কোন দল কটা আসনে লড়বে তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সোমবার সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ত্রিপুরায় গিয়ে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন বলে খবর। আসন ছাড়ার ব্যাপারে সিপিএম বেশ নরম অবস্থান নিয়েছে। তাদের বক্তব্য একটাই, বিজেপিকে হারাতে হবে। সেখানে কে বেশি আসনে লড়বে, বা কে কম আসনে লড়বে সেই পরিস্থিতি সামনে আসা বাঞ্ছনীয় নয়। এই উদার মনোভাব দেখিয়েই কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে চায় সিপিএম তথা বামেরা। তবে সেই জোটে জনজাতি অধ্যুষিত দল তিপ্রা মোথা যোগ দেবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। তারা যদি জোটে যোগ দেয় তবে বিজেপির বিপদ নিঃসন্দেহে বহু গুণে বেড়ে যাবে।
২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম এবং কংগ্রেসের জোট হয়েছিল। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জোর চর্চা শুরু হয়। দশকের পর দশক ধরে এই দুটি দল একে অপরের চির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের দীর্ঘ বাম জমানায় সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে কংগ্রেসের হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছিলেন। তাই এই জোট নিয়ে তখন প্রশ্ন উঠে যায়। যে সমস্ত কংগ্রেস পরিবারের উপর অত্যাচার হয়েছে তাঁরা কি অতীতের কথা ভুলে সিপিএমকে ভোট দেবেন? এই বিষয়টি সেবার পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। এরপর ভোটের ফলে দেখা যায় বেশিরভাগ বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএমের ভোট কংগ্রেসের দিকে এলেও কংগ্রেসের ভোট সেভাবে সিপিএমের দিকে যায়নি। তাই প্রশ্ন, আসন্ন ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের জোটের পর উভয় তরফ থেকে মসৃণ ভাবে ভোট ট্রান্সফার হবে তো? কারণ ত্রিপুরাতেও দীর্ঘদিন সিপিএম- কংগ্রেস মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। অতীতে দুটি দলই একে অপরের বিরুদ্ধে সীমাহীন অত্যাচারের অভিযোগে বারবার সরব হয়েছে। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর কংগ্রেস এবং সিপিএম প্রত্যাশিত ভাবেই কাছাকাছি আসতে শুরু করে।
আর সেই সূত্রেই তারা এখন জোট করতে চলেছে। সে ক্ষেত্রে ভোট ট্রান্সফার ঠিকঠাক হলে বিজেপির লড়াই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ গত বছর ত্রিপুরায় যে চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন হয়েছে সেখানে সিপিএম এবং কংগ্রেসের মিলিত ভোট ছিল চল্লিশ শতাংশ। এরপর দুটি দলের অবস্থা আরও মজবুত হয়েছে ত্রিপুরায়। তাই বাম-কংগ্রেস মনে করে আসন্ন নির্বাচনে এই জোট ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়ার জায়গায় রয়েছে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক মহলও নিশ্চিত যে মসৃণ জোট ও ঠিকঠাক ভোট ট্রান্সফার হলে তার ফায়দা বাম-কংগ্রেস দুটি দলই পাবে। কারণ দু’দলেরই শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন এছাড়া ত্রিপুরায় আর তাঁরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। অর্থাৎ ত্রিপুরায় জোটই একমাত্র তাঁদের ভবিষ্যৎ। এই পরিস্থিতিতে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় যে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে সেখানে বাম-কংগ্রেসের জোট কতটা সাফল্য পায় সেদিকেই চোখ থাকবে রাজনীতির কারবারিদের।