ব্যাপম কেলেঙ্কারির মতোই কি বাংলার নিয়োগ দুর্নীতি? ব্যাপমের মতো বাংলায় বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা!

ব্যাপম কেলেঙ্কারির মতোই কি বাংলার নিয়োগ দুর্নীতি? ব্যাপমের মতো বাংলায় বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা!

কলকাতা:  মধ্যপ্রদেশের ‘ব্যাপম’ কেলেঙ্কারির কথা সামনে আসতেই দেশজুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। কার্যত একই ঘটনা ঘটল পশ্চিমবঙ্গেও। মধ্যপ্রদেশে ‘ব্যাপম’, বাংলায় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে একমাত্র ‘ব্যাপম’ কেলেঙ্কারির তুলনা করা যায় বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷  মধ্যপ্রদেশে সেই দুর্নীতির ঘটনার জেরে বহু যুবক-যুবতী আত্মহত্যা করেছেন। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গেও শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে। যে ঘটনায় উদ্বিগ্ন সব মহল।

 

মধ্যপ্রদেশে ‘ব্যবহারিক পরীক্ষা মণ্ডল’, যার সংক্ষিপ্ত নাম ‘ব্যাপম’ হল সেই সরকারি সংস্থা যারা চাকরি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যালের প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে থাকে। সেই পরীক্ষা নিয়েই পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি সামনে আসে। দেখা যায় বহু যুবক ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় না বসেও ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করছেন। কেউ আবার মেডিক্যাল পরীক্ষা না দিয়েও গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে ডাক্তারি করছেন। একটা দুটো ঘটনা নয়, এরকম অজস্র ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছিল মধ্যপ্রদেশে। যে ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়ে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার। তবে শুধু বিজেপি বলে নয়, সেই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের মদতেও বহু যুবক-যুবতী পরীক্ষায় না বসে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করে মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ও কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ হাতে হাত মিলিয়ে এই দুর্নীতি চালিয়ে গিয়েছেন। একটা সময় আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত শুরু করে। গ্রেফতার করা হয় বহু ব্যক্তিকে। যদিও সেই তদন্ত এখন কি অবস্থায় রয়েছে তা জানা যায় না। তবে ‘ব্যাপম’ কেলেঙ্কারির জেরে বহু যুবক-যুবতী আত্মহত্যা করেছেন বলে খবরে উঠে আসে। অন্তত পক্ষে ৫৪ জন যুবক-যুবতী মধ্যপ্রদেশে আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর। এছাড়া পুলিশ বা জেল হেফাজতেও বহু অভিযুক্তের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গেও শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির জেরে চাকরি হারিয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যা করছেন। স্বাভাবিকভাবেই এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা মন খারাপ করে দিচ্ছে রাজ্যবাসীর।

 

পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরের টুম্পারানি মণ্ডল একটি স্কুলে শিক্ষিকা পদে যোগ দিয়েছিলেন। একটা সময় ভুয়ো শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তালিকায় নিজের নাম দেখতে পেয়ে মানসিক অবসাদে ভুগে আত্মহত্যা করেন বলে পরিবার সূত্রে খবর। চলতি বছরেই মুর্শিদাবাদের লালগোলার প্রাথমিক শিক্ষক পদপ্রার্থী আব্দুর রহমানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসে। তিনিও আত্মহত্যা করেছেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বালুরঘাটের মানিকচন্দ্র সরকার নামে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। জানা যায় চাকরি দেওয়ার নামে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন। কিন্তু চাকরি দিতে পারেননি। এরপর টাকা ফেরাতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি। সদ্য উত্তরবঙ্গেও একই ভাবে এই ইস্যুতে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।  তালিকা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। যদিও, আত্মহত্যা কোনও ভাবেই সব সমস্যার সমাধান নয়৷ জীবনযুদ্ধে হার মেনে নেওয়া কার্যত কাপুরুষত্বের সমান৷ তবে, এই দুর্নীতির শেষ কোথায় এবং তার পরিণতি কি, সেটা কারও জানা নেই। তাই দুর্নীতির ঘটনায় মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ মিলেমিশে যেন একাকার হয়ে গিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + five =