নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে নজিরবিহীন সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। এছাড়া গত দুটি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতায় এসেছে উত্তরপ্রদেশে। এই সাফল্যের পিছনে অন্যতম ভূমিকা রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তথা সংঘ ঘনিষ্ঠ সুনীল বনশলের। কারণ ওই সময়কালে উত্তরপ্রদেশে বিশেষ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এবার পশ্চিমবঙ্গে পর্যবেক্ষক হিসেবে তাঁকে নিযুক্ত করলেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। সরিয়ে দেওয়া হল দায়িত্বে থাকা কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে।
একটা সময় সুনীল বেশ কিছুদিন পশ্চিমবঙ্গে কাটিয়েছেন। তাই এই রাজ্যের মানুষের সমাজ জীবন, আচার ব্যবহার, সংস্কৃতিক পরিমণ্ডল, শিক্ষা, রাজনৈতিক সচেতনতা ইত্যাদি সম্পর্কে অনেকটাই জানা আছে তাঁর। সেই সুনীল বনশল এবার অত্যন্ত গুরুদায়িত্ব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আসছেন। এর আগে ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেই সময়ে কলকাতার ফল ভাল না হলেও সংগঠন গোছাতে সুনীলেই এবার ভরসা রাখছে বিজেপি।
গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৮টি আসনে জয়লাভ করেছিল বিজেপি। এরপর থেকেই বঙ্গ বিজেপির আত্মবিশ্বাস বহু গুণে বেড়ে যায়। বিধানসভা নির্বাচনে জিতে পশ্চিমবঙ্গ দখলের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে জোর ধাক্কা খায় বিজেপি। এবার নতুন করে তারা ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া। আগামী লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২৫টি আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আর সেই স্বপ্ন সফল করতে গুরুদায়িত্ব দেওয়া হল সুনীল বনশলকে। গত বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর যেভাবে দল ভেঙে পড়েছিল সেই জায়গা থেকে দলকে পুনর্গঠিত করা তাঁর কাছে নিঃসন্দেহে এক বড় চ্যালেঞ্জ।
২০২১ এর নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে আর দেখা যায়নি বঙ্গে। একই সঙ্গে অরবিন্দ মেমন বা শিবপ্রকাশকেও বাংলাতে গিয়ে কাজ করতে দেখেননি কেউ। আর গত বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর পশ্চিমবঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তীব্র আক্রমণ করেছিলেন প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথাগত রায়। তখন বিজেপিতে যোগ দেওয়া একাধিক টলিউড অভিনেত্রীদের নিশানা করেছিলেন তথাগত রায়। তাঁদের ‘নগরের নটি’ কটাক্ষ করে কৈলাস বিজয় বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, অরবিন্দ মেনন, শিবপ্রকাশদের তোপ দেগেছিলেন তথাগত। টুইট করে অভিযোগ করেছিলেন, নগরের নটিরা টাকা নিয়ে কেলি করেছেন। আর বারবার কৈলাসদের বিরুদ্ধে ‘কামিনী কাঞ্চন’ তোপ দেগেছেন তথাগত।
সেই প্রসঙ্গে টুইট করে তথাগত লিখেছিলেন, “কারুর কাছ থেকে বাহবা পাওয়ার জন্য আমি টুইটগুলো করছিলাম না। দলের কিছু নেতৃস্থানীয় লোক যেভাবে কামিনী কাঞ্চনে গা ভাসিয়েছিলেন সেটা সম্বন্ধে দলকে সজাগ করার জন্য করেছিলাম। এবার ফলেন পরিচয়তে!” তথাগতর সেই আক্রমণ নিয়ে রাজ্য বিজেপিতে ঝড় বয়ে যায়। সেই ইস্যুতে শাসক দল তৃণমূল বিজেপিকে নিয়মিত কটাক্ষ করতে শুরু করে। তবে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের জেরে এখন রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে। সেই জায়গা থেকে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে গুরুদায়িত্ব পাওয়া সুনীল বনশল পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে কতটা সাফল্য এনে দিতে পারেন সেদিকেই নজর থাকবে সবার।
