কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে শুধু শিক্ষক-শিক্ষিকা পদে নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকরি হয়েছে বলে এবার খবর উঠে আসছে।
নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত হুগলির বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেরা করেই অয়ন শীলের খোঁজ পায় ইডি। এরপরই অয়নের সল্টলেকের অফিস এবং বাড়িতে হানা দেন তদন্তকারীরা। শনিবার থেকে শুরু হয় তল্লাশি। সেখান থেকে পাওয়া নথিপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতিতে সরাসরি জড়িত ছিলেন অয়ন। ইডি সূত্রে খবর, চাকরি বিক্রি করার জন্য রীতিমতো ‘রেট চার্ট’ করেছিলেন অয়ন। কামারহাটি, পানিহাটি, বরানগর, উত্তর এবং দক্ষিণ দমদম-সহ ৬০টি পুরসভায় তিনি চাকরি বিক্রি করেছেন বলে ইডি নিশ্চিত। পুরসভাগুলিতে শ্রমিক, গাড়ি চালক প্রভৃতি পদে টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি করতেন তিনি।
পদের গুরুত্ব অনুযায়ী চার লক্ষ থেকে আট লক্ষ টাকায় চাকরি বিক্রি করা হতো। শ্রমিক ও গাড়িচালক পদে চাকরির জন্য চার লক্ষ টাকা করে নিতেন নয়ন। যেখানে ক্লার্ক পদের জন্য নেওয়া হতো পাঁচ লক্ষ টাকা। ইডি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, চাকরিপ্রার্থীদের টাকা দিয়ে পরীক্ষা বসলেই কাজ হয়ে যেত। উত্তরপত্র বদলে দিয়ে তাঁদের কাজ পাইয়ে দিতেন অয়ন। এছাড়া টলিউডে ছবি প্রযোজনার পাশাপাশি প্রোমোটিং ব্যবসাও করতেন অয়ন। প্রোমোটিং ব্যবসা করার সময় তিনি নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। অয়নের বাড়ি ও অফিস থেকে উদ্ধার হয়েছে চারশোর বেশি ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র। পাওয়া গিয়েছে প্রচুর অ্যাডমিট কার্ডের কপি। সেগুলি অফিসের ড্রয়ার, জামাকাপড় রাখার আলমারি, ওয়ার্ডড্রোবের ভিতর থেকে পাওয়া গিয়েছে। দশটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ২০১২ সালের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ডও অয়নের বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে।
এদিকে যে সমস্ত নথি উদ্ধার করা হয়েছে তা দেখে তদন্তকারীরা মনে করছেন একাধিক পুরসভার কর্তার পাশাপাশি অন্যান্য প্রভাবশালীদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তাঁর। ইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছে ৬০টি পুরসভায় মোট পাঁচ হাজার ভুয়ো নিয়োগ হয়েছে। তার মাধ্যমে অন্তত পক্ষে পঞ্চাশ কোটি টাকা তোলা হয়েছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। গত এক দশকে বেকার যুবক-যুবতীরা যে চাকরি পেয়েছেন তা কি পরীক্ষা দিয়ে, নাকি টাকা দিয়ে? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠতে শুরু করেছে। পর পর যে সমস্ত ঘটনা সামনে আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে টাকা আর চাকরি এ যেন ‘মেড ফর ইচ আদার’ হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে।
সত্যিই এই লজ্জা যেন ঢাকা যায় না। যে সমস্ত দুর্নীতির ঘটনা ধারাবাহিকভাবে উঠে আসছে তাতে গোটা দেশে পশ্চিমবঙ্গের নাম যে ধুলোয় মিশে যাচ্ছে তা স্পষ্ট। তাই এই দুর্নীতির শেষ কোথায় সেটা বোধহয় কারও জানা নেই। চাকরি বিক্রি গত কয়েক বছরে যেভাবে তথাকথিত ‘ইন্ডাস্ট্রি’ হয়ে উঠেছিল সেখান থেকে কি বদনাম ঘুচিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বেরিয়ে আসতে পারবে? এই চর্চা চলছে রাজ্য রাজনীতিতে। তাই টাকা দিয়ে আরও কোন কোন ক্ষেত্রে বাংলায় চাকরি হয়েছে এখন সেটাই দেখার পালা।