নিজস্ব প্রতিনিধি: সততার চাদর দিয়ে কী ঢেকে ফেলা যাবে সীমাহীন দুর্নীতির ভুরি ভুরি অভিযোগকে? পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ৈর সভার পর থেকেই এই চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। এই সভায় অভিষেক দলের স্থানীয় নেতাদের মঞ্চে তুলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন তাঁরা হতদরিদ্র হলেও সততার পথ থেকে সরে যাননি। তৃণমূলের এক হতদরিদ্র বুথ সভাপতি আবাস যোজনার টাকা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁদের মঞ্চে তুলে অভিষেক পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম পর্যন্ত করেছেন। অভিষেকের ব্যাখ্যা এটাই হচ্ছে নতুন তৃণমূল। তাঁর কথায় দুর্নীতির অভিযোগ নেই যাদের গায়ে তাঁরাই আগামী দিনে জেলা থেকে শহর জুড়ে নেতৃত্ব দেবেন তৃণমূলকে। কথাগুলি শুনতে ভালই লাগে। কিন্তু তা নিয়েই উঠে যাচ্ছে বহু অবশ্যম্ভাবী প্রশ্ন।
একটা সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির নিচে লেখা থাকত ‘সততার প্রতীক’। সেই ছবি কলকাতা থেকে জেলা জুড়ে সর্বত্র দেখা যেত। কিন্তু যবে থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করল দেখা গেল আস্তে আস্তে সেই সততার প্রতীক লেখা মুখ্যমন্ত্রীর ছবি উধাও হতে শুরু করেছে। কেন সেই সমস্ত পোস্টার রাজ্য থেকে সরে গেল তার ব্যাখ্যা দিতে পারবেন একমাত্র তৃণমূল নেতৃত্বই। এছাড়া তৃণমূলের একঝাঁক নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে অস্বাভাবিক সম্পত্তি বৃদ্ধির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের পর্যন্ত হয়েছে। আর অভিষেক কেশপুরে গিয়ে পঞ্চায়েত স্তরের গুটিকয়েক নেতা-নেত্রীর সততার প্রশংসা যেভাবে করেছেন তা নিয়ে তো প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। কারণ আবাস যোজনা প্রকল্পে নাম উঠেছে তৃণমূলের বহু নেতাকর্মীর যাদের একতলা, দোতলা বা তিনতলা পাকা বাড়ি রয়েছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন তাঁরা এলাকায় বিত্তশালী বলেই পরিচিত। অন্যায় ভাবে আবাস যোজনায় নাম উঠেছিল এমন সংখ্যা যে অনেক সে কথা বলেছেন রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষ। সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারাও। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে তাঁরা শাসকদলের সক্রিয় নেতা বা কর্মী- সমর্থক। এই বিষয়গুলি নিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কি কিছুই করার নেই? অথচ তিনি বলছেন সব দিকেই তাঁর নাকি নজর রয়েছে। কেউ নিয়ম না মানলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কি এটা নিছকই কথার কথা? শুধুমাত্র চমক বা গিমিক দেখানোর জন্যেই এমন পদক্ষেপ করছে অভিষেক? এর উত্তর চান সবাই।
কেশপুরের সভায় অভিষেক যেভাবে নীচুতলার তৃণমূল নেতাদের মঞ্চে তুলে তাঁদের সততাকে কার্যত বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার করেছেন, সেটা নিয়ে যথারীতি বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। এভাবে কী সত্যিই পঞ্চায়েতের ভোট বৈতরণী পার করা যাবে? বিগত কয়েক বছরে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেই সমস্ত ঘটনায় জেলবন্দি রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বীরভূম তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য, তৃণমূল যুবনেতা কুন্তল ঘোষ-সহ অনেকেই। এছাড়া এর আগে সারদা-নারদা কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে দলের বহু নেতা-নেত্রীর। তাই সেই বিষয়গুলি নিয়ে অভিষেক নীরব কেন সেই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। তাই অভিষেক যেভাবে ‘নতুন তৃণমূল’ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন তা ভোটবাক্সে কতটা প্রভাব ফেলবে সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে দলেরই একাংশের।