কলকাতা: রাজ্য রাজনীতিতে একটা সময় খবরের শিরোনামে থাকতেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই বঙ্গ রাজনীতিতে দলবদল চালু হয়। সেই বঙ্গ রাজনীতির ‘চাণক্য’ মুকুল রায় বহুদিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছেন। দীর্ঘ দিন স্নায়ুরোগে ভুগছেন কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়। সুস্থ হওয়ার জন্য তাঁর মস্তিষ্কে অপারেশনের প্রয়োজন আছে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। শনিবার ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে মুকুলের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। সেই সঙ্গে মাথায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি চিপ। মুকুলের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বেশ কয়েক মাস ধরে স্নায়ুজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন মুকুল। একাধিক বার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন মস্তিষ্কে অপারেশন করে চিপ না বসালে মুকুল পুরোপুরি সুস্থ হবেন না। এরপরই শনিবার অপারেশন করা হয়। অপারেশন সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জয় পেয়েছিলেন মুকুল। এরপর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। যে বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে উঠে পড়ে লাগেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যদিও বিধানসভার স্পিকার জানিয়ে দেন মুকুল বিজেপিতেই আছেন। এই অবস্থায় অস্ত্রোপচার হয়েছে রাজ্য রাজনীতির ‘চাণক্য’ মুকুলের মস্তিষ্কে।
একুশের নির্বাচনে জয়লাভের পর তৃণমূলে যোগদান করেন মুকুল। কিন্তু এরপর থেকেই দেখা যায় অসুস্থ হওয়ার কারণে ভুলভাল কথা বলছেন তিনি। যে সমস্ত ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়তে হয় তৃণমূলকে। আর স্ত্রী বিয়োগের পর থেকেই আস্তে আস্তে ঘরবন্দি হয়ে যান তিনি।
সেই সঙ্গে মুকুলের দরজায় ভিড় কমতে থাকে। যখন তিনি ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন তখন মুকুলের বাড়িতে এতটাই ভিড় হতো যে তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। কিন্তু ক্ষমতার ভরকেন্দ্র থেকে সরবার পরেই মুকুলের বাড়িতে ভিড় কমতে থাকে। তাই মুকুলের অস্ত্রোপচারের পর ক’জন তাঁর খোঁজ নিয়েছেন সেটা হাতে গুণে বলা যায়। এটা নিশ্চয়ই মুকুলের প্রাপ্য ছিল না। কিন্তু বাস্তবে সেটাই ঘটল।
এখন যারা রাজনীতি করছেন তাঁদের অনেকেই মুকুলের হাত ধরে রাজনৈতিক জগতে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু তাঁদের বড় অংশ মুকুলকে ভুলে গিয়েছেন। হাতে গোনা কয়েক জন ছাড়া নিয়মিত মুকুলের খোঁজখবর কেউই রাখেন না। যে মুকুল একটা সময় তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ ছিলেন তাঁর আজ এই পরিণতি দেখলে সত্যিই অবাক হতে হয়। তাহলে কী এটাই বাস্তব? এই চর্চা স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।