বিরোধী দলনেতার অপরিসীম গুরুত্ব (Rahul-Suvendu: opposition leaders)
রাজ্য বা কেন্দ্র, সেখানে বিরোধী দলনেতার (opposition leaders) অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। তিনি ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদা পেয়ে থাকেন। ভুল ত্রুটি সামনে তুলে ধরে সরকারকে সঠিক দিশা দেখানোর কাজ করে থাকেন বিরোধী দলনেতা। দায়িত্বশীল বিরোধী দলনেতা ধ্বংসাত্মক আচরণ নয়, শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা নয়, রাজ্য তথা দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আসল সত্যটাকে সামনে এনে সরকারকে সচেতন করে দেওয়াটাই তাঁর কাজ। (Rahul-Suvendu )
রাহুল ও শুভেন্দুর মধ্যো তফাৎ কী? (Difference between Rahul and Suvendu)
গত দশ বছর লোকসভায় বিরোধী দলনেতা বলতে কেউ ছিলেন না। কারণ নিয়ম অনুযায়ী কোনও দলের ৫৪ জন সাংসদ না থাকলে লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদ পাওয়া যায় না। এবার কংগ্রেস সেই পদ পেয়েছে এবং তার ভিত্তিতে বিরোধী দলনেতা হয়েছেন রাহুল গান্ধী। অন্যদিকে তিন বছর আগেই পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলনেতা হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু এই দুই বিরোধী দলনেতার মধ্যে বেশ কিছু তফাৎ দেখা যাচ্ছে।
কী সেই তফাৎ?
শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari, Member of the West Bengal Legislative Assembly)
প্রথমে শুভেন্দুর কথায় আসা যাক। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন তিনি। প্রচুর পরিশ্রম করেছেন শুভেন্দু। তবে তাঁর কথাবার্তায় যথেষ্ট ‘উগ্রভাব’ আছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। সব সময় ‘অ্যাটাকিং মোড’-এ থাকা একজন রাজনীতিকের কাছে কতটা অ্যাডভান্টেজ হতে পারে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। অতীতে বিভিন্ন সময়ে শুভেন্দুকে তৃণমূলের এক অন্যতম শীর্ষ নেতার গ্রেফতারি সংক্রান্ত প্রসঙ্গে ‘তারিখ রাজনীতি’র কথা বলতে শোনা গিয়েছে। কিন্তু শুভেন্দু যা বলেছিলেন তার কোনওটাই বাস্তবায়িত হয়নি। এতে তাঁর যথেষ্ট ‘ফেসলস’ হয়েছে।
সদ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্লোগান ‘সব কা সাথ, সব কা বিশ্বাস’-এর বিরোধিতা করে যে বক্তব্য তিনি রেখেছেন তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেখান থেকে তাঁকে সরে আসতে হয়েছে। ঘটনা হল কিছু বলার পর সেখান থেকে যদি তাঁকে সরে আসতে হয় সেটা বিরোধী দলনেতার মতো পদের ক্ষেত্রে মানানসই নয় বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। সবচেয়ে বড় কথা রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে শুভেন্দু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সামিল হতে পারছেন না বলেও গেরুয়া শিবিরের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়। বিভিন্ন সময়ে রাজ্য বিজেপির একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বের উদ্দেশে নাম না করে শুভেন্দু আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন বলেও রাজনৈতিক মহল মনে করে। যে দল ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে পশ্চিমবঙ্গে, সেখানকার বিরোধী দলনেতার বক্তব্যে বা কর্মকাণ্ড নিয়ে কিছু প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দিলে তাতে তো দলেরই ক্ষতি।
রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi, Member of the Lok Sabha)
একই ভাবে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে কংগ্রেস। সেই জায়গায় রাহুল পরিশীলিতভাবে, ঠান্ডাভাবে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তি সহকারে প্রশ্ন তুলছেন। জনসংযোগ করছেন সাধারণ মানুষের মধ্যে গিয়ে। তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরছেন সংসদে বা সংবাদমাধ্যমের কাছে। এখনও পর্যন্ত একবারের জন্যেও তাঁকে মাথা গরম করে কথা বলতে শোনা যায়নি। সবচেয়ে বড় কথা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে কোনও কিছু নিয়ে রাহুলের বিরোধ হয়েছে এমন কথাও শোনা যায়নি।
রাজনৈতিক কৌশল (POLITICAL STRATEGY)
এক কথায় বলা যায় দলের সর্বস্তরের নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করেই রাহুল বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব পালন করছেন। সেই ভূমিকায় পশ্চিমবঙ্গে শুভেন্দুকে দেখা যাচ্ছে না বলেই মনে করেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। লোকসভা নির্বাচনে এবার সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছিল। সেখানে কেউ রাহুলের প্রার্থী, বা কেউ খাড়গের প্রার্থী, এমনটা কিন্তু শোনা যায়নি। তবে পশ্চিমবঙ্গে বহু ক্ষেত্রে শোনা গিয়েছে অনেকেই নাকি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সুপারিশেই প্রার্থী হতে পেরেছিলেন। তাঁরা ‘শুভেন্দুর প্রার্থী’ বলে যথেষ্ট চর্চা হয়েছিল। সবমিলিয়ে রাজ্য ও লোকসভায় বিরোধী দলনেতার মধ্যে বেশ কিছু তফাৎ রয়েছে। যেগুলি নিয়ে চর্চা হবে এটাই স্বাভাবিক।
আরও পড়ুন-
শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগের কেস ডায়েরি চাই! হাইকোর্টের বড় নির্দেশ
ভাঙল কংগ্রেস-আপ জোট, দিল্লিতে একাই লড়বে তারা, খুশি বিজেপি
সিপিএম সবটা ভেবে বলছে তো? ‘গণশক্তি’র হেডিংয়ের মানে কী?
শুধু ভোট লুট অভিযোগ, আদৌ সংগঠন বাড়াতে পারছে বিজেপি
Politics: Explore the crucial role of opposition leaders in state and central politics. Their strategies, criticisms, and impact on governance.