সাগরদিঘি উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের জোট! ত্রিপুরার পর মুর্শিদাবাদ, রাজ্য রাজনীতিতে ফের নয়া সমীকরণ

সাগরদিঘি উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের জোট! ত্রিপুরার পর মুর্শিদাবাদ, রাজ্য রাজনীতিতে ফের নয়া সমীকরণ

নিজস্ব প্রতিনিধি: বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে সিপিএম তথা বামেরা চেয়েছিল তাদের প্রার্থীকে সমর্থন করুক কংগ্রেস। কিন্তু সেটা হয়নি। তবে একা লড়ে বালিগঞ্জে সিপিএম খুব একটা খারাপ ফল করেনি। বালিগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত দুটি ওয়ার্ড  থেকে সিপিএম প্রার্থী লিড পর্যন্ত পেয়েছিলেন। সেই দুটি ওয়ার্ড ছিল সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। এরপর রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে বাম-কংগ্রেসকে বিক্ষিপ্তভাবে পাশে আসতে দেখা গেলেও সার্বিকভাবে তারা কিন্তু একসঙ্গে চলছিল না। এমনকী ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় তাদের অংশ নিতে বলা হলেও পশ্চিমবঙ্গে সেই কর্মসূচিতে সিপিএম নেতৃত্ব অনুপস্থিত ছিলেন। এই আবহের মধ্যে ত্রিপুরায় যখন জোট বেঁধে লড়ছে সিপিএম এবং কংগ্রেস, তখন মুর্শিদাবাদের ছবিটা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিল রাজ্যের  বাম-কংগ্রেস শিবিরকে। কারণ মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি বিধানসভার উপ-নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীকে সিপিএম সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পঞ্চায়েতের আগে যে বিষয়টিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহল তাই নিশ্চিত পঞ্চায়েতে জেলায় জেলায় হাত আর কাস্তে-হাতুড়ি-তারা একজোট হয়েই তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামবে।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতা করে লড়াই করে। কিন্তু একটি আসনেও সেই জোট জিততে পারেনি। সেই জোট করার জন্য সিপিএমের দক্ষিণী লবি বঙ্গ নেতাদের ব্যাপক সমালোচনা করে। তাদের বক্তব্য ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের কারণেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা বাম-হীন হয়েছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা প্রতিনিধিদের অনেকেরই যুক্তি ছিল ২০১৮ সালের পার্টি কংগ্রেসে বলা হয়েছিল বিজেপির বিরুদ্ধে সব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে এক করে লড়াই করতে হবে। সেই সূত্রেই পশ্চিমবঙ্গে জোট করা হয়েছিল বলে বঙ্গ সিপিএম দাবি করে। তবে যাই হোক না কেন এরপর থেকে দেখা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম-কংগ্রেস এক সঙ্গে চলছে না। বিভিন্ন নির্বাচনে দুটি দলই প্রার্থী দিয়েছে। এভাবেই যখন সবকিছু চলছিল তখনই ত্রিপুরায় বিজেপিকে রুখতে সিপিএম-কংগ্রেস জোট গঠন করে। এরপরই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুকে চিঠি দিয়ে সাগরদিঘি কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে তাঁদের সমর্থন চান। আর অধীরের অনুরোধ রেখেছেন বিমানবাবু। উল্লেখ্য চিঠিতে কংগ্রেস এই আবেদন করেছে যে সাগরদিঘি কেন্দ্রের সমস্ত বাম কর্মী-সমর্থকরা যেন কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের পাশে এসে দাঁড়ান। আর এই আবেদনে সবুজ সংকেত দিয়েছে আলিমুদ্দিন। সাগরদিঘিতে বামেরা প্রার্থী না দেওয়ায় সেখানে ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে। কংগ্রেস প্রার্থীর পাশাপাশি রয়েছে শাসক দল তৃণমূল এবং বিজেপির প্রার্থী। সাম্প্রতিককালে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার ফায়দা সাগরদিঘির উপ-নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটবদ্ধ ভাবে তুলতে পারে কিনা সেদিকে বিশেষ নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের। আর সাগরদিঘিতে কংগ্রেস কিস্তিমাত করতে পারলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলার অধিকাংশ আসনে যে এই দুই দলের জোট হবে তা বলাই যায়। তাই সাগরদিঘি কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের সুদূরপ্রসারী অভিঘাত রাজ্য রাজনীতিতে দেখা যায় কিনা এখন তারই অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *