নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্রের ক্ষমতায় যখন দীর্ঘদিন কংগ্রেস ছিল তখন সিপিএম তথা বামেরা বারবার তৃতীয় ফ্রন্ট তৈরির কথা বলেছে। কিন্তু কোনও দিনই সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। প্রতিবারই সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। পরবর্তীকালে তৃতীয় ফ্রন্টের প্রসঙ্গ উঠলে সেটা নিয়ে সংবাদ মাধ্যম বা রাজনৈতিক মহল ততটা আগ্রহ দেখায়নি। কারণ সেটির ভবিষ্যৎ কি হতে পারে ততদিনে সকলেই বুঝে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন করে তৃতীয় বিকল্পের কথা তুলে ধরে কংগ্রেস এবং বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করছেন। যদিও মমতা তৃতীয় ফ্রন্ট শব্দটির কথা বলেননি। তবে রাজনৈতিক মহল বুঝতে পারছে মমতা আসলে সেটির কথাই বলতে চাইছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে ফের চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। আর ঠিক তখনই তিন দিনের ওড়িশা সফরে গিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের পুণ্যার্থীদের কথা ভেবে পুরীতে একটি গেস্ট হাউস তৈরি করতে চান মমতা। সেই জন্য জমি দেখবেন তিনি। এছাড়া জগন্নাথদেবের মন্দিরে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি তিনি বৈঠক করবেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে। আর মূলত সেই বৈঠক নিয়েই যথেষ্ট জল্পনা ছড়িয়েছে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে।
কংগ্রেস এবং বিজেপিকে বাদ দিলে লোকসভা নির্বাচনে যে দলগুলির বেশি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলি হল তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, বিজু জনতা দল, ডিএমকে, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি (বর্তমানে নাম পরিবর্তিত হয়ে বিআরএস), ওয়াইএসআরকংগ্রেস, শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠী, এনসিপি, আরজেডি, আম আদমি পার্টি, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, জেডি ইউ এবং সিপিএম তথা বামেরা। কিন্তু মজার কথা হচ্ছে এই দলগুলি প্রত্যেকে খুব ভাল ফল করলেও তাদের আসন সংখ্যার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূলের প্রাপ্ত আসন যোগ করলে কি ম্যাজিক ফিগার ২৭২ আদৌ হওয়া সম্ভব? তৃণমূল নিশ্চিত ভাবে বামেদের তৃতীয় বিকল্পের মধ্যে আনতে চাইবেন না। অর্থাৎ সবমিলিয়ে যে সংখ্যাটা হবে তাতে সরকার গঠন করাটা অসাধ্য বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করে। এই আবহের মধ্যে মমতার ওড়িশা সফর এবং নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে বৈঠক ঘিরে উঠছে বহু প্রশ্ন। কারণ সরাসরি এনডিএ-তে না থাকলেও নবীন যে মানসিকভাবে বিজেপির সঙ্গেই আছেন সেটা স্পষ্ট। একটা সময় কেন্দ্রকে তিনি সমর্থন দিয়েছেন এবং বিজেপির সঙ্গে জোট করে ওড়িশায় নির্বাচনে লড়েছেন। মমতা যে তৃতীয় বিকল্পের স্বপ্ন দেখছেন সেখানে নবীনের দলের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই নবীন ও মমতার মধ্যে যে বৈঠক হবে তা নিছক সৌজন্যের খাতিরেই বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে এই বৈঠকের সামান্যতম প্রভাব তৃতীয় বিকল্প গঠনের মধ্যে পড়বে না। তবু মুখ্যমন্ত্রীর ওড়িশা সফরের দিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। সেক্ষেত্রে মমতার সুরে সুর মিলিয়ে নবীনকে কথা বলতে দেখা গেলেও আসল সময়ে তাঁর দল কি করবে সেটা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাবে। তাই এটা বলতেই হচ্ছে মমতার এই ওড়িশা সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই বললেই চলে।