ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট মার খেল, মমতা চুপ কেন? প্রশ্ন বিমানের

ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট মার খেল, মমতা চুপ কেন? প্রশ্ন বিমানের

কলকাতা: ‘কৃষক দরদী’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বামেদের ডাকা সারা ভারত কৃষক ধর্মঘটকে স্বাগত জানাতে বললেন বিমান বসু। একই সঙ্গে প্রশ্ন তুললেন, ত্রিপুরায় বাম কর্মী সমর্থকদের উপর নারকীয় গেরুয়া হামলার প্রতিবাদে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীরব? অন্য কোনও রাজ্যে বিজেপি বিরোধীরা মার খেলে মমতা প্রতিবাদ করেন। ত্রিপুরায় বামপন্থীরা মার খেল। মমতা চুপ কেন?

২৭ সেপ্টেম্বর কৃষক ধর্মঘট। ১২ সেপ্টেম্বর বামফ্রন্টের সব শরিক দল ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের যুক্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার পরে বামফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসু বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, নয়া কৃষি আইন বাতিল, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, বীমা, ট্রেন, রেল স্টেশন, খনি, কারখানা বিক্রি বন্ধ করা, শ্রম কোড বাতিল, নয়া বিদ্যুৎ বিল ও জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিল করা, রান্নার গ্যাস, পেট্রল ডিজেল সহ সব জিনিসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ করার দাবিগুলিকে সামনে রেখে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার ডাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ভারত বনধের সমর্থনে পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র সাধারণ ধর্মঘট পালনের আহবান জানানো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম ও শহর সর্বত্র ধর্মঘটের ব্যাপক প্রস্তুতি ও ধর্মঘটকে সর্বাত্মক সফল করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী দলগুলি রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন জানাচ্ছে।

অন্যদিকে, ত্রিপুরায় শাসক দলের দুর্বৃত্ত বাহিনী বামপন্থীদের বিরুদ্ধে হিংসার বেনজির আক্রমণ সংগঠিত করেছে। গত ৮-৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ সিপিআই(এম)-র রাজ্য দপ্তর, জেলা কমিটি, মহকুমা কমিটি-সহ প্রায় ৫০টি অফিসে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর করা হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্যান্য বামপন্থী দলের দপ্তর, গণ সংগঠনের অফিস। ত্রিপুরার শ্রদ্ধেয় জননেতা কমরেড দশরথ দেবের মূর্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ঢুকে আক্রমণ করা হয়েছে, অনেকের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের অফিসেও হামলা, ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গোমতী জেলার উদয়পুরে আরএসপি এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জেলা দপ্তর নৃশংস আক্রমণ করে ধ্বংস করা হয়েছে।

এই আক্রমণ ঘটেছে পুলিশের সামনে, তারা নীরব, নিষ্ক্রিয় থেকেছে। এমনকি তান্ডবে মদতও দিয়েছে। যেভাবে এই আক্রমণ চালানো হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট পূর্বপরিকল্পিতভাবে এবং রাজ্য প্রশাসনের মদতে বিরোধীদের ওপরে এই জঘন্য আক্রমণ চালানো হয়েছে। ঘটনার পরে একজনও দুষ্কৃতী গ্রেপ্তার হয়নি, বরং রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে এই আক্রমণকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।

বামফ্রন্ট জানিয়েছে, ত্রিপুরায় গণতন্ত্র বিপন্ন। বিজেপি সরকারের আসীন হবার পর থেকেই বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে খুন হয়ে গেছেন। বিরোধীদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কাজকর্ম করার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের নাগরিক অধিকার বারংবার আক্রান্ত হচ্ছে। সংবিধান মেনে আইনের শাসনের বাতাবরণ নেই। এরই মধ্যে জীবনজীবিকা, কাজের দাবি, খাদ্যের দাবিতে মানুষ ক্রমশ প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছেন। সভা-সমাবেশ, মিছিল, বিক্ষোভ হচ্ছে। এই প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করতেই বিজেপি ভয়াবহ আক্রমণ নামিয়ে এনেছে।

বামফ্রন্ট ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের যৌথ সভা এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করছে। এই হিংসার অবসান ঘটাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ত্রিপুরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারও দেশের একটি রাজ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপরে এই আক্রমণে নীরব থাকতে পারে না। আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে তাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে। ত্রিপুরার সংগ্রামী জনগণের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করছে পশ্চিমবঙ্গ বামফ্রন্ট ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশন। ত্রিপুরায় আক্রমণের বিরুদ্ধে এরাজ্যেও প্রতিবাদী কর্মসূচী হয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 7 =