নয়াদিল্লি: বিজেপিতে ৭৫ বছর পেরিয়ে গেলে তাঁকে সরে যেতে হয়। তখন সংসদীয় রাজনীতিতে তাঁকে আর তুলে ধরা হয় না দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। সেই হিসেবে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বয়স ৭৫ হচ্ছে না। তাই চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে মোদির নেতৃত্বেই যে বিজেপি হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে নামবে সেটা স্পষ্ট। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়, তার পরে কে? আগামী দিনে কাকে সামনে রেখে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় থাকবে সেই চর্চা বহুদিন ধরেই রাজনৈতিক মহলে চলছে।
আর এই জায়গায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পাশাপাশি আলোচিত হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নাম নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে যোগী রাজ্যের প্রশাসনের একটি সিদ্ধান্তে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে মোদি শিবির। কারণ আদানি ইস্যুতে এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে যখন বিতর্কের ঝড় বয়ে যাচ্ছে তখন যে সিদ্ধান্ত উত্তরপ্রদেশ সরকার নিয়েছে তা কার্যত কেন্দ্রকে পরোক্ষে আঘাত করেছে বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ।
কিছুদিন আগেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছ থেকে বড় ধাক্কা খেয়েছে আদানি গ্রুপ। আদানি গ্রুপের কয়েক হাজার কোটি টাকার টেন্ডার বাতিল করে দিয়েছে যোগী সরকার। উত্তরপ্রদেশ সরকারের অধীনস্থ সংস্থা মধ্যাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ নিগম লিমিটেড আদানি গ্রুপের স্মার্ট মিটার ডিস্ট্রিবিউশনের টেন্ডার বাতিল করে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে আদানি গোষ্ঠীর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আদানি গ্রুপের দাবি তারা সবচাইতে কম দর দিয়েছিল। যদিও নির্দিষ্ট কোনও কারণ ছাড়াই তাদের টেন্ডার কেন বাতিল করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার তা নিয়ে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। অথচ কিছুদিন আগেই একটি সর্বভারতীয় বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে আদানি ইস্যুতে মুখ খুলেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে যোগী কিন্তু স্পষ্ট বলেছেন এখনই এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলার সময় আসেনি। এটা দেশ বা বিদেশের একাংশের চক্রান্তও হতে পারে। লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিমত তাঁর। অথচ সেই যোগী রাজ্যের প্রশাসন আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে কেন এত বড় সিদ্ধান্ত নিল তার সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
আদানি ইস্যুতে বিরোধীরা তেড়েফুঁড়ে মাঠে নেমেছে। সেই জায়গায় উত্তরপ্রদেশ সরকারের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। অনেকেই মনে করছেন এখন থেকেই মোদি-যোগীর মধ্যে এভাবেই ক্ষমতার ভরকেন্দ্র দখলের লড়াই নিয়ে ছায়াযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। তার কারণ উত্তরপ্রদেশে পরপর দু’বার বিজেপিকে ক্ষমতায় এনে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছেন যোগী। নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি শীর্ষ বিজেপি নেতৃত্বের প্রচার নিয়ে ততটা আগ্রহী দেখায়নি যোগীকে। তিনি একাই যথেষ্ট, এমনটাই বারবার দাবি করেছিলেন যোগী ঘনিষ্ঠরা। আর বাস্তবে হয়েছেও তাই। এরপর থেকেই গেরুয়া শিবিরের একাংশ যোগীকে আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে সক্রিয় হয়েছেন। তবে যোগী বলেছেন তিনি এ ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহী নন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই তিনি কাজ চালিয়ে যেতে চান। যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা যোগীর এই মন্তব্য ‘ডিপ্লোম্যাটিক’ ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই আদানি ইস্যুকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই মোদি শিবিরের উপর উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পরোক্ষে চাপ বাড়িয়ে রাখলেন কিনা সেটা নিয়ে চর্চা চলতেই থাকবে।