কলকাতা: সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার এক বছর পর লোকসভা নির্বাচন। দুটি নির্বাচনকেই যথারীতি পাখির চোখ করেছে তৃণমূল। শুক্রবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে খবর। এরপর সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এটাই স্পষ্ট করেছেন যে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির পাল্টা মুখ হবেন মমতাই। বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব দানের ক্ষেত্রে মমতার ধারে কাছে কেউ নেই, এটাই বোঝাবার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু ঘটনা হল বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাতে দেশ জুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের কতটা প্রাসঙ্গিকতা থাকবে সেই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।
সদ্য সাগরদিঘির উপনির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় হয়েছে তৃণমূলের। সেখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছিল বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। তাই প্রশ্ন, আগামী দিনে দিল্লি দখল করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূলের শক্ত মাটি আলগা হয়ে যাবে না তো? লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল মুখ থুবড়ে পড়বে না তো? এই চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে। তৃণমূলের সাংবাদিক সম্মেলন লক্ষ্য করে দেখা যাবে তাদের নিশানায় মূলত ছিল কংগ্রেস। শুধু তাই নয়, তৃণমূল এই অভিযোগ করছে যে বিজেপি নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করে তাঁকে প্রধান প্রতিপক্ষ দেখাতে চাইছে। এভাবে তৃণমূলকে ছোট করার চেষ্টা করছে বিজেপি, এমনটাই অভিযোগ জোড়াফুল শিবিরের।
তৃণমূলের দাবি তারাই বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই তাদের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে বিজেপি। সেই কারণে কংগ্রেসকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরে নির্বাচনে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে চাইছে বিজেপি, এমনটাই অভিযোগ তৃণমূলের। কিন্তু সত্যিই কি তাই? নাকি তৃণমূলের এই দাবির পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে? রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন এভাবে রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসকে সরিয়ে দিয়ে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মাথা তুলতে চায় তৃণমূল। দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব দিন মমতা, এটাই চায় তৃণমূল। আর সেই সূত্রেই সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ সিং যাদব কলকাতা এসে মমতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একই লক্ষ্যে শীঘ্রই ওড়িশা সফরে গিয়ে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে বৈঠক করতে চলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া মমতা কথাবার্তা চালাচ্ছেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে। তাই তাৎপর্যপূর্ণভাবে মমতার বাড়িতে বৈঠকের পর তৃণমূলের সাংবাদিক সম্মেলনে বারবার উঠে এসেছে দিল্লি কেন্দ্রিক রাজনীতির কথা। সেখানে রাজ্য রাজনীতির কথা সেভাবে কিন্তু উঠে আসেনি। রাজনৈতিক মহল মনে করছে সাগরদিঘিতে যেভাবে বাম-কংগ্রেসের উত্থান হয়েছে তাতে শঙ্কিত তৃণমূল। তাই কংগ্রেসকে তুলোধনা করছে তৃণমূল। কিন্তু তৃণমূলের গায়ে দুর্নীতির অভিযোগের স্টিকার যেভাবে আটকে গিয়েছে, তাতে বাম-কংগ্রেসকে আক্রমণ করে সেটিকে টান মেরে ফেলে দিতে পারবে তারা? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। তাই তৃণমূলের দিল্লি দখলের স্বপ্ন কতটা বাস্তবায়িত হবে সেটা সময়ই বলে দেবে।