বঙ্গ রাজনীতির ‘চাণক্য’ মুকুল রায় বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী!

বঙ্গ রাজনীতির ‘চাণক্য’ মুকুল রায় বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী!

কলকাতা: বঙ্গ রাজনীতির অলিন্দে মুকুল রায়ের প্রভাব নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। এহেন দক্ষ সংগঠকের রাজনৈতিক অধ্যায়ও বেশ রঙিন।

বরাবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী ছিলেন মুকুল রায়। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কংগ্রেসে করতেন । পরবর্তীতে  সেই মমতার হাত ধরেই তৃণমূল গড়েন । তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড বলা হত তাঁকে। দলনেত্রী তাঁর কাঁধেই দিয়েছিলেন তৃণমূলকে ঢেলে সাজানোর গুরুদায়িত্ব । শোনা যায় , তৃণমূল আমলে প্রশাসনিক রদবদলেও মুকুল রায়ের ভূমিকা থাকতো। মানুষের নার্ভ বুঝতেন মুকুল, সংগঠনের যাবতীয় খুঁটিনাটি  ছিল তার হাতের তালুতে । ২০১৭ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন মুকুল রায় । ২০১১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ভারতের রেলমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন । যদিও সেই সবই তৃণমূলের আমলে। কিন্তু , ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই দলে কার্যত একঘরে হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তারপর ক্রমশ গুরুত্ব হারানো শুরু , সেই থেকেই সিদ্ধান্ত বদল।

২০১৭ সালে নিজের শিবির বদলান মুকুল রায়। ঊনিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দেন তৃণমূলের ‘চাণক্য’। তৃণমূলকে রন্ধ্রে রন্ধ্রে চেনা মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দিতেই চিন্তা বাড়ে ঘাসফুল শিবিরে। উল্টোদিকে মুকুল রায়ের মতো পোড় খাওয়া নেতাকে দলে নিয়ে নির্বাচনী ঘুটি সাজাতে শুরু করে বিজেপি। তৃণমূলের মুকুল বিয়োগ হতেই একে একে দল ছাড়েন মুকুল ঘনিষ্ঠরা। পুরনো সতীর্থদের বিজেপিতে যোগদান করিয়ে ঊনিশের লোকসভায় অসাধারন পারফর্মেন্স দেন মুকুল রায়। বিজেপিকে ১৮ টি আসন জিততে পিছন থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। এরপর বিজেপিতে ক্রমশ গুরুত্ব বাড়তে থাকে মুকুলের। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে যতই দ্বন্দ্ব থাক না কেন ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘কাছের লোক’ হয়ে ওঠেন বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য। দেরিতে হলেও বিজেপিতে পদ পান মুকুল রায়। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি।

একুশের বিধানসভায় বাংলার বুকে পদ্ম ফাটানোর গুরুদায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধেই। কিন্তু ,সার্বিকভাবে সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন মুকুল। তবে ২০১৬ র নির্বাচনে ৩ আসন প্রাপ্ত বিজেপিকে ৭০ আসন জিতিয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে দাঁড় করান তিনি। রাজনৈতিক মহলের মত, বিজেপির এই উত্থানের পিছনে দিলীপ ঘোষ ,কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের থেকেও বেশি অবদান রয়েছে মুকুল রায়ের। অসামান্য দক্ষতা ও পরিচালন ক্ষমতার সৌজন্যে এইভাবেই ক্রমশ প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন কাঁচরাপাড়ার ভূমিপুত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + two =