‘নির্ভয়া তহবিল’
আরজি কর হাসপাতালের নারকীয় ঘটনা নিয়ে যখন পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা দেশ উত্তাল, ঠিক তখনই কেন্দ্রের এমন এক তথ্য সামনে এল যাতে অস্বস্তি বাড়ল তৃণমূলের। একটি সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার ‘নির্ভয়া তহবিল’ এক দশক আগে গঠন করলেও সেখান থেকে বরাদ্দ করা টাকা খরচের নিরিখে পিছিয়ে রয়েছে বাংলা। (Nirbhaya Fund West Bengal)
কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ করেছিল ৭৫.৭০৮ কোটি টাকা
এই তহবিল থেকে কোন রাজ্য কত টাকা পেয়েছে এবং তার কতটা খরচ হয়েছে সেই সম্পর্কে পাঁচ বছর আগে সংসদে প্রশ্নের মাধ্যমে জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ মালা রায় ও তৎকালীন কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছিল তখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের জন্য এই খাতে কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ করেছিল ৭৫.৭০৮ কোটি টাকা। সেই সময় পর্যন্ত রাজ্য এই খাতে খরচ করেছিল মাত্র ৩.৯৩ কোটি টাকা।
ইউপিএ সরকার দেশ জুড়ে নারী সুরক্ষার কথা ভেবে ‘নির্ভয়া তহবিল’ গঠন করে
২০১২ সালে দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের জেরে তার পরের বছরে তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার দেশ জুড়ে নারী সুরক্ষার কথা ভেবে ‘নির্ভয়া তহবিল’ গঠন করে। মহিলাদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন রাজ্যে জরুরি কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য তহবিল গঠন করা হয় এবং সেই অনুযায়ী রাজ্যগুলির জন্য বরাদ্দ করা হয়। আর কেন্দ্রে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদি সরকার ২০১৮ সালে আমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি, হায়দরাবাদ, লখনউ, মুম্বই এবং কলকাতা, এই আটটি শহরের নিরাপত্তা বাড়াতে সেগুলিকে ‘সেফ সিটি’ তৈরির তালিকায় রাখে। তার জন্য মোট বরাদ্দ করা হয়েছিল প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। এখনও পর্যন্ত এই খাতে আটটি শহরের জন্য ১৪০৮.৩৩ কোটি টাকা কেন্দ্র পাঠালেও মোট খরচ হয়েছে ৮৩৬.৩৯ কোটি টাকা।
নারী সুরক্ষা খাতে ১১০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ
গত জুলাইতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ নারী সুরক্ষা খাতে ১১০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। নতুন করে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয় নির্ভয়া তহবিল’-এ। কেন্দ্রের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্ভয়া তহবিলের টাকা থেকে মহিলাদের সুরক্ষার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা ও রাস্তায় আলো লাগানো, মহিলাদের জন্য চলমান শৌচাগার নির্মাণ, নির্যাতিতাদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের কথা বলা আছে। সেই সূত্রে এই তহবিলের টাকায় বাংলায় কতটা কাজ হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।
ধর্ষণ মোকাবিলায় কঠোর আইনের পাশাপাশি দোষীদের দ্রুত শাস্তি দেওয়ার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দু’বার চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাল্টা কেন্দ্রের অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গে ২০২৩ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কোনও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট সক্রিয় নয়। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবীর অভিযোগ,
“পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রের নির্ধারিত হেল্পলাইন নম্বর চালু করেনি। বিপদের মুখে পড়া মহিলাদের জন্য ১৮১, এমারজেন্সির জন্য ১১২, শিশুদের সাহায্য করার জন্য ১০৯৮, সাইবার ক্রাইমের জন্য ১৯৩০ নম্বরগুলি কেন্দ্র চালু করেছিল। তবে বাংলার মানুষ এই নম্বরগুলি ব্যবহার করতে পারেন না। বহুবার বলা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার এগুলি চালু করেনি।”
এই পরিস্থিতিতে সামনে এল যে কলকাতাকে ‘সেফ সিটি’ করার জন্য দিল্লি বহু বরাদ্দ করলেও তার খরচের নিরিখে পিছিয়ে রয়েছে বাংলা। যে তথ্য নিঃসন্দেহে অস্বস্তি বাড়াল তৃণমূলের।
আরও পড়ুন-
লালবাজারের নতুন নির্দেশিকায় বিতর্ক, উঠছে কোন কোন প্রশ্ন?
আরজি কর আবহে অভিষেককে চিঠি দিয়ে দল ছাড়লেন তৃণমূল নেতা!
আর কতবার আদালতে মুখ পুড়বে রাজ্যের? গুণতে তো ক্যালকুলেটর লাগবে!
জুনিয়র চিকিৎসকদের ‘প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি’ মুখ্যমন্ত্রীর!
আরজি করের জেরে চর্চায় নেই বহু নিন্দনীয় ঘটনা! কিন্তু কতদিন?
সত্যিই কি মমতা ‘হিংসা’ ছড়াতে চাইছেন? শাহকে কী অভিযোগ করলেন সুকান্ত?
Politics: West Bengal government faces criticism for underutilizing funds from the Nirbhaya Fund. Despite the state’s claims on women’s safety, data reveals a significant gap between allocated and spent funds.