একদিকে দেউচা পাঁচামিতে থানা হচ্ছে, অন্যদিকে অনুব্রতর ছবি নেই বীরভূমে! আস্তে আস্তে কেষ্টকে ছেঁটে ফেলছে তৃণমূল?

একদিকে দেউচা পাঁচামিতে থানা হচ্ছে, অন্যদিকে অনুব্রতর ছবি নেই বীরভূমে! আস্তে আস্তে কেষ্টকে ছেঁটে ফেলছে তৃণমূল?

নিজস্ব প্রতিনিধি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বীরভূম সফরের মধ্যেই বেশ কিছু ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে। যা নিয়ে ব্যাপক চর্চা হচ্ছে বীরভূম তথা রাজ্য জুড়ে। দীর্ঘদিন ধরেই গরু পাচার কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার পর জেল হেফাজতে রয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তৃণমূল বুঝে গিয়েছে পঞ্চায়েতের আগে অনুব্রতর জামিন পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তাই জেলা সংগঠন দেখতে যে কোর কমিটি আগেই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে দিয়েছিলেন তাতে এবার অন্তর্ভুক্ত করা হল জেলার দুই সাংসদ শতাব্দী রায় ও অসিত মালের পাশাপাশি অনুব্রতর ঘোর বিরোধী বলে পরিচিত তৃণমূল নেতা কাজল শেখকে। যে বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রীর বীরভূম সফরের মধ্যেই জেলা জুড়ে যে সমস্ত হোর্ডিং বা তোরণ করা হয়েছে তার কোথাও অনুব্রতর ছবি নেই। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে এবার কি তবে অনুব্রতকে দল থেকে ছেঁটে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল? এর পাশাপাশি বীরভূম জেলা নিয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। রাজ্য প্রশাসনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে মহম্মদবাজার থানাকে ভেঙে  তিনটি থানা হচ্ছে। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বীরভূম সফরের আগেই রাজ্য মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে মহম্মদবাজার থানাকে ভেঙে তৈরি হবে রামপুর, দেওচা ও মহম্মদবাজার থানা। বীরভূম  জেলার আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর।  দেউচা পাঁচামি এশিয়ার বৃহত্তম কয়লা খনির স্বীকৃতি পেয়েছে। শীঘ্রই সেখান থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হবে। একটা সময় এই কয়লা খনির বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা আন্দোলন গড়ে তোলেন। যদিও রাজ্য প্রশাসন মনে করে বহিরাগতদের উস্কানিতেই সেই বিক্ষোভ হয়েছিল। তাই আগামী দিনে নতুন করে যাতে সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয় তাই দেওচাতে নতুন থানা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এতে সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ থাকবে বলেই প্রশাসনিক আধিকারিকরা মনে করছেন।

বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন অশান্তি ও হিংসার ঘটনার জেরে বীরভূম বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। তবে গত বছর বগটুই কাণ্ডের পর জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আরও প্রশ্ন উঠে যায়। বিরোধীরা বীরভূম জেলার পরিস্থিতি নিয়ে বহুবার সরব হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেউচার কয়লা খনি নিয়ে যাতে বিক্ষোভ বা উত্তেজনা নতুন করে ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সেখানে একটি থানা তৈরির  সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার দিয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মনে করছে। আর এই আবহের মধ্যে যেভাবে অনুব্রতর নামগন্ধ দেখা যাচ্ছে না পোস্টার ব্যানারে, তাতে প্রশ্ন উঠছে আগামী দিনে বীরভূম জেলার সংগঠন কী তবে হাতছাড়া হচ্ছে কেষ্টর? এর আগে বীরভূম নিয়ে কলকাতায় বিশেষ বৈঠক করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই বীরভূম নিয়ে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত দল ও প্রশাসন নিচ্ছে তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট যে এই জেলাটি নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তি রয়েছে শাসক দলের। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূম জেলার ফলাফলের দিকে রাজনৈতিক মহলের যে বাড়তি নজর থাকবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − nine =