নিজস্ব প্রতিনিধি: একটাই শব্দ বলতে হয়, অবশেষে! বহু প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না সেই প্রশ্ন বহুদিন ধরেই উঠছিল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্ত পদ্ধতি নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছিল আদালতও। কিন্তু তারপরেও তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছিল না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তলে সব মহল। অবশেষে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই গ্রেফতার করেছে তাপস মণ্ডলকে। তাপসের পাশাপাশি নীলাদ্রি ঘোষ নামে অপর এক এজেন্টকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার সকালে দু’জনকে নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা জেরার পর বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার ডেকে পাঠিয়ে জেরা করা হয়েছিল তাঁদের। তবে এদিন তদন্তে অসহযোগিতা এবং সিবিআই আধিকারিকদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে অন্যতম মাথা হিসেবে জড়িত থাকার অভিযোগে বহু আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে। এরপরই তাপস মণ্ডলের নাম উঠে আসে। বারবার তাঁকে ডেকে পাঠায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে বহু তথ্য তাঁর কাছ থেকে পান তদন্তকারী আধিকারিকরা। আর সেই সূত্রেই গ্রেফতার করা হয় হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে। এছাড়া তাপসকে জেরা করেই চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তোলার এজেন্ট নীলাদ্রি ঘোষ সম্পর্কে জানতে পারেন তদন্তকারীরা। কিন্তু ইডির চার্জশিটে তাপসের নাম থাকলেও তাঁকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না সেই প্রশ্ন বারবার ওঠে। ধৃত কুন্তলও দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে তাপসের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন। এই পরিস্থিতিতে কুন্তলকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তাপস এবং নীলাদ্রির সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে সিবিআইয়ের জেরা পর্ব শুরু হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে তাপস, নীলাদ্রি এবং কুন্তল এই ‘ত্রিভুজ’কে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করতে পারলে বহু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।
কিন্তু আদালত যেভাবে সিবিআইয়ের তদন্ত পদ্ধতি ও তদন্তের গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তাতে তাপস এবং নীলাদ্রিকে গ্রেফতার করলেই কি সমাধান হয়ে যাবে? নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত শিক্ষাকর্তা সুবীরেশ ভট্টাচার্য কেন মুখ খুলছেন না, কাদের নির্দেশে তিনি এই দুর্নীতি করেছেন, তা নিয়ে কিছুদিন আগেই কড়া বার্তা দিয়েছিল আদালত। আদালত স্পষ্ট জানায় সুবীরশ মুখ না খুললে বুঝে নিতে হবে গোটা ষড়যন্ত্র তিনি একাই করেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সুবীরেশ তদন্তকারীদের বড় বড় মাথাদের নাম বলেছেন কিনা তা জানা যায়নি। আসলে যোগ্য চাকরিপ্রার্থী যারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন তাঁদের পাশাপাশি গোটা রাজ্যবাসী নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে জড়িত থাকা বড় বড় মাথাদের গ্রেফতারি দেখতে চায়। তাই তাপস এবং নীলাদ্রি গ্রেফতার হলেও প্রশ্ন উঠছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের পরবর্তী ভূমিকা নিয়ে। এবার কি তদন্তের গতি আরও বাড়বে, নাকি সেই আগের মতোই ঢিমেতালে চলবে? আদালত তদন্তের গতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর এই দু’জনকে গ্রেফতার করে কি সমস্যা কিছুটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করল সিবিআই? এই সমস্ত প্রশ্ন অবধারিতভাবে উঠছে। তাই তাপস মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর সেই সূত্র ধরে তদন্ত পদ্ধতি কোন দিকে যায়, বড় বড় মাথারা জালে ধরা পড়ে কিনা সেদিকেই চোখ রয়েছে সবার।