শিবসেনার নাম ও প্রতীক দুই হারাল ঠাকরে পরিবার, দল ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া নেতারাই বেশি ক্ষমতাশালী?

শিবসেনার নাম ও প্রতীক দুই হারাল ঠাকরে পরিবার, দল ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া নেতারাই বেশি ক্ষমতাশালী?

নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে বড় ধাক্কা খেলেন উদ্ধব ঠাকরে। এবার থেকে শিবসেনা দলের নাম এবং প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন না উদ্ধব বা তাঁর নেতৃত্বাধীন দলের অংশ। সেখানে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে থাকা শিবসেনার বিদ্রোহী অংশ ওই নাম এবং প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে। শুক্রবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাই এদিন থেকেই শিবসেনার দীর্ঘদিনের চেনা প্রতীক তির-ধনুক ব্যবহার করতে আর বাধা রইল না শিন্ডে গোষ্ঠীর। যবে থেকে উদ্ধবের সঙ্গ ছেড়েছেন একনাথ তখন থেকেই শিবসেনার নাম ও প্রতীক নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়। এরপর বিষয়টি গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। তবে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয় ‘আসল শিবসেনা’ কারা সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন।

যতদিন না পর্যন্ত কমিশন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ততদিন শিবসেনার নাম ও প্রতীক কোনও গোষ্ঠীই ব্যবহার করতে পারবে না বলে জানানো হয়। সেই কারণে গত ৩ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের আন্ধেরি পূর্ব কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের আগে উদ্ধব শিবিরকে ‘মশাল’ প্রতীক ব্যবহার করার নির্দেশ দেয় কমিশন। এছাড়া শিন্ডে গোষ্ঠীকে দেওয়া হয় ‘ঢাল তরোয়াল’ প্রতীক। সেই উপ-নির্বাচনে অবশ্য শিন্ডে গোষ্ঠী  প্রার্থী দেয়নি। তবে শুক্রবার যাবতীয় বিতর্কের অবসান ঘটল। কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিল শিবসেনার নাম ও প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে শুধুমাত্র একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠী। বিষয়টি নিয়ে উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন,”এমন সিদ্ধান্তের জন্য নির্বাচন কমিশন তাদের বিশ্বস্ততা হারাল। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়া হবে।” অন্যদিকে একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে,”আমাদের কাছে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। বহুদিন ধরে দাবি করে আসছি যে আমরাই আসল শিবসেনা। আমাদের দিকে দলের সমর্থকদের বেশি সমর্থন রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের ফলে চেনা প্রতীক চিহ্ন দেখে আমাদের কাছে আরও মানুষ আসবেন”। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে,”দলের সমর্থকদের সমর্থনের কথা মাথায় রেখেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়াটি কঠিন ছিল।” সামনেই বৃহন্মুম্বই পুরসভার নির্বাচন। তার আগে নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তে একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠী যে অনেকটাই অ্যাডভান্টেজ পেল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

তাই প্রশ্ন যারা দল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে তারাই কি বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে? রাজ্যে ক্ষমতা দখলের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা আরও শক্তিধর হয়ে উঠছে? এই চর্চা যথারীতি শুরু হয়েছে মহারাষ্ট্রের ঘটনার পর থেকেই। পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীকালে দেখা গিয়েছে কংগ্রেস ক্ষয়িষ্ণু হতে হতে রাজ্য রাজনীতিতে এখন কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশেও একই ঘটনা দেখা গিয়েছে। কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে ওয়াইএসআর কংগ্রেস গঠন করে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন  জগনমোহন রেড্ডি। দক্ষিণের এই রাজ্যটিতেও কংগ্রেসের শক্তি তলানিতে এসে পৌঁছেছে। তবে কি আগামী দিনে মহারাষ্ট্রেও উদ্ধব ঠাকরের একই অবস্থা হবে? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। সবচেয়ে বড় কথা বিজেপির মদতে দল ভাঙার খেলা অব্যাহত রয়েছে রাজ্যে রাজ্যে। গত কয়েক বছরে দল ভাঙিয়ে বিজেপি একাধিক রাজ্যে সরকার গঠন করেছে। মহারাষ্ট্রেও তাদের এই চাল ক্লিক করে গিয়েছে। রাজনীতিতে এটা নিঃসন্দেহে একটা নতুন ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়াল। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে এমন ঘটনা ফের দেখা যায় কিনা সেটা সময়ই বলবে।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − eight =