তৃণমূলকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ভাঙড়! কতটা সফল হবেন নতুন দায়িত্ব পাওয়া শওকত মোল্লা?

তৃণমূলকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ভাঙড়! কতটা সফল হবেন নতুন দায়িত্ব পাওয়া শওকত মোল্লা?

নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সাফল্য পায় তৃণমূল। এরপর যতদিন গিয়েছে বিরোধীরা কার্যত নিশ্চিহ্ন হতে শুরু করে বাংলা থেকে। বিক্ষিপ্তভাবে তারা প্রতিবাদ আন্দোলন করলেও সেটা তৃণমূলকে বেকায়দায় ফেলার মতো যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু তৃণমূল বিভিন্ন সময় এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে যার ফল আজ তাদের ভুগতে হচ্ছে। এমনটাই মত রাজনীতির কারবারিদের একাংশের। তাঁদের কথায় যেভাবে সামান্য ঘটনায় ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীকে ৪০ দিনের বেশি জেলে থাকতে হয়েছে, তার ফল রাজ্য জুড়ে ভুগতে হতে পারে তৃণমূলকে। এমনিতেই ভাঙড়ে তৃণমূল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তার উপর সেখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সিংহভাগ মানুষ এখন নওশাদের পাশে রয়েছেন। আরাবুল ইসলাম না কাইজার আহমেদ, ভাঙড়ে কার কথায় তৃণমূল চলবে এই বিতর্কেই শাসক দল সেখানে জমি হারিয়ে বসেছে। এই অবস্থায় রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব ভাঙড়ের দায়িত্ব দিয়েছেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লার হাতে। কিন্তু শওকত কি পারবেন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব জুড়ে নতুন রূপে তৃণমূলকে তুলে ধরতে? এই প্রশ্ন উঠছে।

জেল মুক্ত হওয়ার পর রবিবার ভাঙড়ে গিয়েই নওশাদ তৃণমূলকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাঙড়ে একটি আসনেও তিনি শাসক দলকে জিততে দেবেন না, এমনই হুঙ্কার দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তৃণমূল শওকত মোল্লাকে দায়িত্ব দেওয়ায় সেই বিষয়টি নিয়েও কটাক্ষ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই দায়িত্ব নিলেও তিনি সেখানে আইএসএফকে ভাল ফল করে দেখাবেন। এতটাই আত্মবিশ্বাসী তিনি।

সাগরদিঘির উপনির্বাচনে তৃণমূল হেরে গিয়েছে। সংখ্যালঘু বিধায়ক নওশাদকে যেভাবে দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হয়েছিল তার প্রভাব সাগরদিঘিতে পড়েছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। এর ফলে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরতে শুরু  হয়েছে বলে অনেকের মত। তাই ভাঙড়ের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রুখতে তৃণমূল মরিয়া হয়ে উঠেছে। শাসক দল বুঝতে পারছে আগামী দিনে ভাঙড় পুরোপুরি হাত থেকে বেরিয়ে গেলে তার প্রভাব গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় পড়বে। কিন্তু তড়িঘড়ি যেভাবে শওকত মোল্লাকে দায়িত্ব দেওয়া হল সেই সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, সব গোষ্ঠীর নেতাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে চলার মতো ক্ষমতা শওকতের নেই। তাই তৃণমূলের এই পদক্ষেপেও উঠছে প্রশ্ন।

বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনা তৃণমূলকে অসম্ভব অস্বস্তিতে ফেলেছে। কিন্তু প্রকাশ্যে সেই দুর্নীতির নিন্দা না করে তৃণমূল যেভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ও বিজেপিকে নিশানা করছে, সেটা নিয়ে জোর চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে। বিরোধীদের প্রশ্ন, তৃণমূল কি তবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতে চায়? কেন তৃণমূল চাইছে না তদন্ত নিজের মতো করে এগিয়ে যাক? এই যুক্তি তুলে ধরছে বিরোধীরা। এতেও রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের জমি হারানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাই ভাঙড়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সিংহভাগ মানুষকে পাশে নিয়ে গোটা রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজকে আইএসএফ নেতৃত্ব যে বার্তা দিয়েছেন, তা তৃণমূলকে উদ্বেগে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এই অবস্থায় শওকত মোল্লার হাত ধরে তৃণমূল ভাঙড়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা এখন সে দিকেই চোখ থাকবে সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 2 =