নিজস্ব প্রতিনিধি: পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় সদ্য উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বড় ব্যবধানে তিনি পরাজিত করেছেন বিরোধী জোটের প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে। ধনকড় উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার পরেই পশ্চিমবঙ্গে অস্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে এসেছেন লা গনেশন। তাঁকে নিয়ে এখনও পর্যন্ত তৃণমূল মোটের উপর খুশি। যদিও আগামী দিনে স্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে কে আসবেন তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে রাজ্য। এর কারণ একটাই, অতীতের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ফ্যাক্টর!
ধনকড় রাজ্যপাল থাকাকালীন দীর্ঘ সময় ধরে তৃণমূল সরকারের সঙ্গে চরম বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। রাজ্যপালের সঙ্গে নবান্নের সংঘাত নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ধনকড় সব সময় বিজেপির হয়ে কথা বলেছেন, বিজেপির হয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছেন, এই অভিযোগ তুলে তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সরব হন। তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে নবান্নকে আক্রমণ করে নিয়মিত টুইট করতেন ধনকড়। শুধু তাই নয়, নিয়মিত সংবাদমাধ্যমের সামনে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াতেন তিনি। এমনকী রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবস্থার অবনতির অভিযোগ তুলে বহুবার দিল্লিতে গিয়ে নালিশ জানিয়েছেন এবং সেখানে সাংবাদিকদের সামনে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। এর পাশাপাশি রাজ্য বিধানসভার কাজে ধারাবাহিকভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ধনকড়। বিভিন্ন সময় বিধানসভার স্পিকারের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। সবমিলিয়ে বিগত দিনগুলিতে ধনকড়কে নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়ে তৃণমূল। এই অবস্থায় আগামী দিনে স্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে বাংলায় কে আসেন তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে তৃণমূল।
তৃণমূলের আশঙ্কা স্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে কেন্দ্র যদি এমন একজনকে পাঠায় যিনি ধনকড়ের মতোই নানা ইস্যুতে তৃণমূলকে বিড়ম্বনায় ফেলবেন, তবে তাতে নতুন করে অস্বস্তির মধ্যে পড়বে সরকার। আসলে তৃণমূলের জগদীপ ধনকড়কে নিয়ে অভিজ্ঞতা একেবারেই ভাল নয়। তাই তৃণমূল কখনই চায় না আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে স্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে এমন কেউ আসেন যার সঙ্গে দল বা সরকারের নতুন করে বিরোধ শুরু হয়।
একাধিক সূত্রের খবর, কেরলের রাজ্যপাল মহম্মদ আরিফ খান বা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুক্তার আবাস নাকভি পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী রাজ্যপাল হতে পারেন। আবার তাঁদের বদলে অন্য কেউ স্থায়ী রাজ্যপাল হতে পারেন। তবে স্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে যিনি আসুন, তৃণমূল চায় তাদের সঙ্গে যেন ফের রাজভবনের সংঘাতের পরিবেশ না তৈরি হয়। কারণ রাজ্যপাল যদি ধারাবাহিকভাবে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে যান, তবে তার একটা প্রভাব পড়বে রাজ্যবাসীর মধ্যে। তাতে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারের ‘ফেস লস’ হতে পারে। তৃণমূলের আশঙ্কা লোকসভা নির্বাচনের আগে এরকম পরিস্থিতি রাজ্যে ফের তৈরি হতে পারে। উল্লেখ্য শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, কেরল, তামিলনাড়ু প্রভৃতি রাজ্যে সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের বিরোধ বার বার খবরের শিরোনামে এসেছে। কিন্তু এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জগদীপ ধনকড় উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে অস্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে এসেছেন লা গণেশন। তাই আগামী দিনে স্থায়ীভাবে রাজভবনে কে আসেন, তাঁর সঙ্গে নবান্নের সম্পর্ক কতটা মসৃণ হয়, সেদিকেই চোখ থাকবে রাজনৈতিক মহলের।
