কলকাতা: তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র সম্পাদক পদে রয়েছেন সুখেন্দুশেখর রায়। দলীয় মুখপত্রের বক্তব্য দলের বক্তব্য হিসেবেই বিবেচিত হয়। শুধু পশ্চিমবঙ্গ কেন, গোটা দেশের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। সেই জায়গায় আরজি কর ইস্যুতে দিনের পর দিন কখনও সোশ্যাল মিডিয়ায়, কখনও বৈদ্যুতিন মাধ্যমে যেভাবে সুখেন্দু শেখর রায় মুখ খুলে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়াচ্ছেন, তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।(Sukhendu Sekhar Roy Trinamool Congress)
‘জাগো বাংলা’র সম্পাদক
কিন্তু এরপরেও ‘জাগো বাংলা’র সম্পাদক পদ থেকে তাঁকে কিন্তু সরানো হয়নি। এমনকী তাঁর ধারাবাহিক বক্তব্যের জন্য দলের পক্ষ থেকেও তাঁকে সতর্কও করা হয়নি। তবে সুখেন্দু শেখর রায় তৃণমূলের জন্য যে প্রবল অস্বস্তিকর কাঁটা হয়ে উঠেছেন, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু কী কারণে সুখেন্দুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন তৃণমূলের পক্ষে?
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
সুখেন্দু একবারের জন্যও নিজের দলের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি। তিনি শুধু নির্যাতিতার বিচার চেয়ে সরব হয়েছেন। কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে একটি বারের জন্যেও কোনও কথা বলেননি তিনি। আরজিকর ইস্যুতে তথ্য প্রমাণ লোপাটের কথা বলেছেন, কিন্তু তার জন্য নিজের দলকে দায়ী করেননি। মোট কথা যা বলেছেন সেখানে নিজের দলকে কাঠগড়ায় তোলেননি তিনি।
তৃণমূলের অস্বস্তি
তাই এখন যদি সুখেন্দু শেখর রায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূল কোনও ব্যবস্থা নেয় সেটা আদৌ কি যুক্তিসঙ্গত হবে? কারণ তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতৃত্ব নির্যাতিতার বিচার চাইছেন এবং অভিযুক্তের ফাঁসির দাবি করছেন। সেই জায়গায় সুখেন্দু একই ভাবে নির্যাতিতার বিচার চাইছেন। যদিও সুখেন্দু যেভাবে বা যে ভাষায় বিচার চাইছেন সেখানে কিন্তু ‘টুইস্ট’ রয়েছে। আর সেটাই তৃণমূলের অস্বস্তির কারণ হয়েছে।
ঘটনা হল বুধবার সুখেন্দু সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন,
“রাত দখলের সঙ্গেই বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার দখল করুক মানুষ। মর্যাদা নিয়ে বাঁচা সংবিধানের ২১ নম্বর মৌলিক ধারায় বর্ণিত।”
এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তিনি। কিছুদিন আগেই লিখেছেন,
“১৭৮৯ সালের জুলাই… বিক্ষোভকারীরা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিলেন বাস্তিল দুর্গ। জন্ম হয়েছিল ঐতিহাসিক ফরাসি বিপ্লবের!”
শুধু এইটুকুই লিখেছেন তিনি। তবে তাতেই যা বোঝানোর বুঝিয়ে দিয়েছেন। যে ঘটনায় রাজ্য রাজনীতি নতুন করে অন্দোলিত হয়। এছাড়া সন্দীপ ঘোষ গ্রেফতার হতেই সুখেন্দু সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন,
“মিডল স্ট্যাম্প আপরুটেড, হোয়াট নেক্সট?”
মহিলাদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচি
আর গত ১৪ আগস্ট মহিলাদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়ে নিজেও প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন সুখেন্দুশেখর। সেদিন যোধপুর পার্কের নেতাজি মূর্তির সামনে বিকেল পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ধর্নায় বসেছিলেন সুখেন্দু। তবে এখানেই শেষ নয়, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল ও আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে হেফাজতে (সেই সময় গ্রেফতার হননি সন্দীপ ঘোষ) নিয়ে জেরা করারও দাবি জানিয়েছিলেন সিবিআইয়ের কাছে।
সুখেন্দুর সুকৌশল
সবমিলিয়ে সুকৌশলে সুখেন্দু ধারাবাহিকভাবে এমন সব মন্তব্য করেছেন যাতে তৃণমূল প্রবল অস্বস্তিতে পড়লেও, তিনি দলবিরোধী কাজ করছেন সেটা প্রমাণ করা যাবে না। আর সুখেন্দুর এই কৌশলের জন্যই দল কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নিতে পারবে না। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাই ভবিষ্যতের ‘সুখেন্দু এপিসোড’ কোন দিকে মোড় নেয় এখন সেটাই দেখার।.
আরও পড়ুন-
আরজি কর-কাণ্ড: ‘বেসুরো’ শাসক ঘনিষ্ঠ কবি সুবোধ! বিলম্বিত সু-বোধ?
বামেদের মতোই কি হাল হচ্ছে তৃণমূলের?
আরজি কর আবহের মধ্যে কোন তথ্য অস্বস্তি বাড়াল তৃণমূলের?
চেন সিস্টেমে এবার উঠে আসবে পরপর নাম?
লালবাজারের নতুন নির্দেশিকায় বিতর্ক, উঠছে কোন কোন প্রশ্ন?
আরজি কর আবহে অভিষেককে চিঠি দিয়ে দল ছাড়লেন তৃণমূল নেতা!
আর কতবার আদালতে মুখ পুড়বে রাজ্যের?
জুনিয়র চিকিৎসকদের ‘প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি’ মুখ্যমন্ত্রীর!
Politics: Sukhendu Sekhar Roy, the editor of the Trinamool Congress mouthpiece, has been openly critical of the party’s handling of the Arzi Kar incident. Despite the controversy, the party seems reluctant to take action against him.