কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় নবযুগের সূচনা, নোবেল গেল ক্লার্ক, ডেভোরে ও মার্টিনিসের ঝুলিতে

Quantum Tunnelling Nobel কলকাতা: কোয়ান্টাম জগতের জটিল গাণিতিক তত্ত্ব এবার ছুঁয়ে ফেলল বাস্তবতার মাটি। বৈদ্যুতিক সার্কিটের মধ্যেই কোয়ান্টাম টানেলিং ও শক্তির নির্দিষ্ট মাত্রার অস্তিত্ব প্রমাণ…

Quantum Tunnelling Nobel

Quantum Tunnelling Nobel

কলকাতা: কোয়ান্টাম জগতের জটিল গাণিতিক তত্ত্ব এবার ছুঁয়ে ফেলল বাস্তবতার মাটি। বৈদ্যুতিক সার্কিটের মধ্যেই কোয়ান্টাম টানেলিং ও শক্তির নির্দিষ্ট মাত্রার অস্তিত্ব প্রমাণ করে বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন দিগন্ত খুললেন তিন বিজ্ঞানী—জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. ডেভোরে এবং জন এম. মার্টিনিস।

তিন বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা

২০২৫ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন এই তিনজন। মঙ্গলবার রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস ঘোষণা করেছে তাঁদের নাম। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “তাঁদের গবেষণা প্রমাণ করেছে—কোয়ান্টাম জগতের অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যকে কেবল পর্যবেক্ষণ নয়, বৃহদাকারে নির্মাণও সম্ভব। হাতে ধরা যায় এমন এক বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার মধ্যেই তাঁরা কোয়ান্টামের বাস্তব উপস্থিতি দেখিয়েছেন।”

গবেষণায় তাঁরা এমন এক সুপারকন্ডাক্টিং ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম তৈরি করেন, যা এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় চলে যেতে পারে যেন দেয়াল ভেদ করে সরাসরি পার হয়ে যাচ্ছে—যাকে পদার্থবিজ্ঞানে বলা হয় “কোয়ান্টাম টানেলিং”। পাশাপাশি তাঁরা দেখিয়েছেন, সেই সিস্টেম শক্তি শোষণ ও নির্গমন করে নির্দিষ্ট মাত্রায় বা কোয়ান্টাইজড রূপে, ঠিক যেমনটা শতবর্ষ আগে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।

এই আবিষ্কার শুধু কোয়ান্টাম তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণই নয়—ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, সুপারকন্ডাক্টর প্রযুক্তি ও শক্তিনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গত বছরের নোবেল: পদার্থবিজ্ঞান থেকে মেশিন লার্নিংয়ের জগতে Quantum Tunnelling Nobel

২০২৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন জন হপফিল্ড ও জিওফ্রে হিন্টন—যাঁরা পদার্থবিজ্ঞানের ধারণাকে প্রয়োগ করে মেশিন লার্নিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি নির্মাণ করেন। হপফিল্ডের তৈরি অ্যাসোসিয়েটিভ মেমরি আজকের নিউরাল নেটওয়ার্কের পূর্বসূরী, আর হিন্টনের উদ্ভাবিত ডিপ লার্নিং পদ্ধতি আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে করেছে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল ২০২৫

এর আগে সোমবার চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পান মেরি ব্রানকো, ফ্রেড রামসডেল ও শিমন সাকাগুচি। তাঁরা আবিষ্কার করেছেন ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’—দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে নিজের কোষের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে বাইরের সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করে, সেই রহস্যময় প্রক্রিয়া উন্মোচন করেছেন তাঁরা।

নোবেল পুরস্কারের উত্তরাধিকার

বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তির সাধনায় শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক নোবেল পুরস্কার। প্রতি বছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে প্রদান করা হয় এই বিশ্বমানের স্বীকৃতি। প্রতিটি পুরস্কারের মূল্যমান ১.১ কোটি সুইডিশ ক্রোনা (প্রায় ১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেছিলেন সুইডিশ রসায়নবিদ ও উদ্যোক্তা আলফ্রেড নোবেল—ডিনামাইটের আবিষ্কারক। তাঁর উইলে লেখা ছিল, “যাঁরা মানবজাতির সর্বোচ্চ কল্যাণে কাজ করেছেন, তাঁদেরই স্বীকৃতি দেবে এই পুরস্কার।”

‘আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে অর্থনীতি বিষয়ক পুরস্কার’

বিজয়ীদের মনোনয়ন ও নির্বাচন করেন আলাদা প্রতিষ্ঠানগুলি—রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান), কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট (চিকিৎসাবিজ্ঞান), সুইডিশ অ্যাকাডেমি (সাহিত্য), এবং নরওয়ের সংসদ (শান্তি)।

এ ছাড়া ১৯৬৮ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক অর্থনীতিতে চালু করে ‘আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে অর্থনীতি বিষয়ক পুরস্কার’, যা এখন নোবেল ফাউন্ডেশনের আনুষ্ঠানিক অংশ।

এই আবিষ্কার কোয়ান্টাম তত্ত্বের রহস্যকে এনে ফেলেছে বাস্তবের দোরগোড়ায়—যেখানে পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব আর প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ একাকার হয়ে যাচ্ছে।

 

 Science: John Clarke, Michel H Devoret, and John M Martinis win the 2025 Physics Nobel for discovering macroscopic quantum mechanical tunnelling and energy quantisation within an electric circuit; their work proves that bizarre quantum properties can be engineered into real-world, hand-held systems.