আন্তর্জাতিক গোল সংখ্যায় রোনাল্ডো-মেসির পরেই সুনীল ছেত্রী! সুনীলের অনুপস্থিতিতে ব্যাটন যাবে কার হাতে?

আন্তর্জাতিক গোল সংখ্যায় রোনাল্ডো-মেসির পরেই সুনীল ছেত্রী! সুনীলের অনুপস্থিতিতে ব্যাটন যাবে কার হাতে?

নয়াদিল্লি: ৩৮ বছর বয়সেও যেন তরুণ! তাঁকে ছাড়া ভারতীয় ফুটবল দলের কথা ভাবা যায় না। তিনি সুনীল ছেত্রী, ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক। বিরাট কোহলি থেকে শচীন তেন্ডুলকর, সকলেই সুনীল ছেত্রীর গুণমুগ্ধ। সদ্য শেষ হয়েছে কাতার বিশ্বকাপের আসর। আর ঠিক তখনই মোক্ষম প্রশ্নটা নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সুনীল ছেত্রীর অবসরের পর ভারতীয় ফুটবল দলের ব্যাটন কার হাতে যাবে? এর সুনিশ্চিত উত্তর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্তিমাচ এখনও সুনীলের উপরেই সবচেয়ে বেশি ভরসা করে থাকেন।

বাইচুং ভুটিয়া থেকে আই এম বিজয়ন, সকলেই ভারতীয় দলের উজ্জ্বল তারকা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। বহু ম্যাচে তাঁরা নিজেদের ক্লাবের পাশাপাশি ভারতকে জয় এনে দিয়েছেন। কিন্তু সুনীল ছেত্রীর ফুটবল জীবনের দিকে তাকালে দেখা যাবে ক্লাবের চেয়ে দেশের হয়ে তাঁর পারফরম্যান্স অনেক ভাল। বলা যায় দেশের জার্সিতে  সুনীল নিজেকে অনেক বেশি উজাড় করে দেন। তাঁকে তখন আরও উজ্জ্বল দেখায়। দেশের হয়ে খেলে প্রচুর সাফল্য পেয়েছেন সুনীল। সেই জায়গা থেকে আন্তর্জাতিক ফুটবলের নিরিখে ভারতীয়দের মধ্যে সুনীল ছেত্রীই যে সর্বকালের সেরা, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকা উচিত নয়।

বর্তমানে যারা খেলছেন তাঁদের মধ্যে দেশের হয়ে রোনাল্ডো এবং মেসির পরেই গোল সংখ্যায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন সুনীল  ছেত্রী। দেশের ওই তিনি এখনও পর্যন্ত ৮৪ টি গোল করেছে। তাই কাতার বিশ্বকাপের আগে ফিফা বহু ফুটবলারের পাশাপাশি সুনীল ছেত্রীকে নিয়েও তিনটি পর্বে স্বল্পদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র তৈরি করেছে। এভাবেই তারা বিশেষ সম্মান দেখিয়েছে ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ককে। গত ১৭ বছরে ভারতের হয়ে একাধিকবার সাফ গেমস, নেহরু কাপ-সহ বিভিন্ন অন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সুনীল ভারতকে জয় এনে দিয়েছেন।

সুনীল দেশের হয়ে ১০০-তম ম্যাচে তাইওয়ানকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই ম্যাচে সুনীল হ্যাটট্রিক পর্যন্ত করেছিলেন। ২০১৮ সালে এশিয়া কাপের প্রস্তুতি ম্যাচে শক্তিশালী চিনের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে সুনীলের ভারত। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী ম্যাচে গত বছর কাতারের সঙ্গে তুল্যমূল্য লড়াই করে ভারত মাত্র ১-০ গোলে হারে। তবে সুনীল ছেত্রী সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে শুধু তাঁর পরিসংখ্যান নিয়ে কথা বললে ভুল হবে। আসলে সুনীলের নেতৃত্বে ভারতীয় ফুটবলাররা যেভাবে একাত্মতা বোধ করে মাঠে নামেন, সেটা অতীতে সেভাবে দেখা যায়নি। 

বিনা যুদ্ধে বিপক্ষকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া যাবে না, এই উপলব্ধি সুনীল ছেত্রী সবার মধ্যে এনে দিয়েছেন। সকলেই বলে থাকেন সুনীল ছেত্রী আর ভারতীয় দলের নীল জার্সি যেন ‘মেড ফর ইচ আদার’। ক্লাব ফুটবলের চেয়ে সুনীল অনেক বেশি স্বচ্ছন্দে থাকেন ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে দিয়ে। তাই সুনীলের সহ খেলোয়াড় বয়সে তরুণ উদান্ত সিং, লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিংরা সব সময় নিজেদের সেরা  খেলাটা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। আর সেই অনুপ্রেরণা তাঁরা পেয়ে আসছেন সুনীলের কাছ থেকেই।

সুনীলের বাবা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তাই সুনীল এতটা শৃঙ্খলাপরায়ণ হবেন, এতে আর আশ্চর্যের কি আছে? কিন্তু কালের নিয়মে সুনীলকেও অবসর নিতে হবে। প্রায় দু’দশক ধরে তিনি যেভাবে ভারতীয় দলকে টেনে নিয়ে গিয়েছেন তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। তাই প্রশ্ন আগামী দিনে তাঁর অনুপস্থিতিতে হাল ধরবেন কে? সুনীলের উপস্থিতিতে এশীয় পর্যায়ে ভারত যেটুকু সাফল্য পেয়েছে তা ধরে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে সুনীলের উত্তরসূরিদের কাছে।

আগামী বছর এশিয়া থেকে বিশ্বকাপে আটটি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে ফিফা জানিয়েছে। সেই লড়াইয়ে ভারত থাকবে কিনা তা নির্ভর করবে সুনীলের উত্তরসূরিদের উপরেই। দেশের হয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠার যে মন্ত্র সুনীল সবাইকে শিখিয়েছেন, তাতে আগামী দিনে ভারত বিশ্ব ফুটবলে চমক দেখায় কিনা সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 + 19 =