শয়ে শয়ে মহিলা নেচে চলেছেন একভাবে ! ৭০০ বছর আগের ‘ডান্সিং প্লেগ’ আজও রহস্য

শয়ে শয়ে মহিলা নেচে চলেছেন একভাবে ! ৭০০ বছর আগের ‘ডান্সিং প্লেগ’ আজও রহস্য

কলকাতা: গত দু’বছরে করোনার তাণ্ডবে নাস্তানাবুদ গোটা বিশ্ব৷ এই ভাবে বিংশ শতাব্দীতে একটি ভাইরাস মানুষের জীবন-জীবিকাকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে তা এক কথায় ছিল কল্পনাতীত। করোনা মানব জীবনের এক অভিশপ্ত অধ্যায়৷ 

আরও পড়ুন- মাসুদ আজহারের ভাইকে নিয়ে কড়া অবস্থান কেন্দ্রের, বড় ঘোষণা

আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে ১৫১৮ সালে এমনই এক বিচিত্র ‘সংক্রামক’ রোগের সম্মুখীন হতে হয়েছিন মানবজাতিকে। অদ্ভুত সেই রোগের নাম ‘ডান্সিং প্লেগ’। মূলত মহিলাদের মধ্যেই এই রোগের সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল৷ রোম সাম্রাজ্যের আলসেসের (বর্তমানে ফ্রান্স) স্ট্রাসবুর্গ শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল এই বিচিত্র অসুখ।

এই রোগের লক্ষণ ছিল সম্পূর্ণ অচেনা৷  এক বার কেউ ডান্সিং প্লেগে আক্রান্ত হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সে নেচে চলত৷ একবার নাচ শুরু করলে দিনভর চলত সেই নাচ৷ এই রোগ এতটাই সংক্রামক ছিল যে, নাচ দেখার পর অন্যদের মধ্যেও তৈরি হত নাচের ইচ্ছা। ডান্সিং প্লেগে আক্রান্ত মহিলারা শহরের পথে দিনভর নাচতেন৷ ৫০ থেকে ৪০০ মহিলা এক সঙ্গে নাচতে থাকতেন। নাচতে নাচতেই একাধিক মহিলার মৃত্যুও হয়৷ এমনটাই দাবি করেন ইতিহাসবিদদের একাংশ। যদিও এই রোগ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। 

তবে এমন রোগ যে স্ট্রাসবুর্গ শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল তার বহু প্রমাণ মিলেছে। সেই সময়ের চিকিৎসকদের নথি, স্থানীয় সংবাদপত্র ও শহর প্রশাসনের নথি থেকে যার প্রকৃষ্ট প্রমাণ৷

সেই সব তথ্য থেকেই জানা যায় ১৫১৮ সালে মূলত মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। ঐতিহাসিক নথি বলছে, সে বছর জুলাই মাসে এক মহিলা হঠাৎ নাচতে শুরু করেন। তার পর তাঁর থেকে একে একে অন্য মহিলাদের মধ্যে এই রোগ ছড়ায়৷ তাঁরাও নাচতে শুরু করেন৷  যিনি প্রথম নাচতে শুরু করেছিলেন তাঁর নাম ফ্রাউ ট্রফিয়া। তবে ওই মহিলার নাম নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যাঁরা তাঁর সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচতে শুরু করেছিলেন তাঁদের সংখ্যা নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।

ডান্সিং প্লেগ

তবে এর আগে ১১ শতকের মধ্যযুগেও এমন রোগ লক্ষ্য করা গিয়েছিল৷ তবে সেই সময় মনে করা হত এটা ‘শয়তানের’ প্রভাব বা ‘ঈশ্বরের শাস্তি’৷ ১৫ শতকে এক মহিলাকে ট্যারান্টুলা কামড়ায়৷ যার বিষে ওই মহিলার খিঁচুনি দেখা দেয়৷ যা অনেকটা নাচের মতোই ছিল। ঐতিহাসিক নথি ঘেঁটে জানা যায়, এর প্রতিকার হিসাবে এক ধরনের মৃদু সঙ্গীত বাজানো হয়েছিল৷ তবে গণনাচের কারণ হিসাবে দুটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে৷ একটি হল ছত্রাকের বিষক্রিয়া৷ অন্যটি হল গণ হিলস্টিরিয়া৷ 

সেই সময় পাউরুটির মধ্যে ছত্রাকের গুঁড়ো ব্যবহারের চল ছিল৷ সেখান থেকে বিষক্রিয়া ছড়িয়েছিল বলে অনেকের বিশ্বাস৷ যদিও সেই তত্ত্ব খারিজ করে মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এ লেখক জন ওয়ালার লিখেছেন, ‘‘এই তত্ত্বটি একেবারেই যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ ছত্রাকের বিষক্রিয়ার জেরে একসঙ্গে এত মানুষ দীর্ঘক্ষণ ধরে নাচতে পারেন না।” তবে গণ হিস্টিরিয়ার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, এক জনের উদ্ভট আচরণ খুব দ্রুত অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, দীর্ঘ মানসিক চাপের ফলে এমনটা হতে পারে৷ ঐতিহাসিকরা মনে করেন, সেই সময়  আলসেসের বাসিন্দারা প্রবল মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। 

ভারতেও গণহিস্টিরিয়ার উদাহরণ রয়েছে৷ যেমন গণেশের দুধ খাওয়া৷ সেই সময় দেশের প্রচুর মানুষ বাটি বাটি দুধ নিয়ে মন্দিরে হাজির হয়েছিলেন গণেষকে দুই খাওয়ানোর জন্যে৷ ডান্সিন প্লেগ নিয়ে আজও তর্ক বিতর্ক রয়ে গিয়েছে৷ এই রোগের নিরাময় নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন৷