উত্তর কোরিয়া: করোনার তাণ্ডবে কার্যত লন্ডভন্ড উত্তর কোরিয়া। মাত্র এক সপ্তাহেই ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ কিমের সমস্ত দম্ভ, অহংকার। ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে যখন একটু একটু করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে মারণ ভাইরাস করোনা তখন থেকেই বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশগুলি এই মহামারী রোধে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু ব্যাতিক্রম উত্তর কোরিয়া। দেশবাসীর নিরাপত্তার থেকেও সেই সময় বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উনের অহংকার। আর তাই ২০২০ এবং ২১ সালে করোনার প্রথম দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ঢেউয়ের সময় যখন কার্যত লন্ডভন্ড বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশ তখনও কিম তাঁর দেশের মানুষের নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করেই বীরবিক্রমে ঘোষণা করেছিলেন যে তাঁর দেশ উত্তর কোরিয়া নাকি এখনও করোনামুক্ত। কিন্তু হল না শেষ রক্ষা। সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ, সীমান্তে নিষেধাজ্ঞা শত চেষ্টার পরেও করোনা সংক্রমণ তথা করোনা সংক্রমনের খবর আটকাতে পারল না উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উন। জানা যাচ্ছে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই উত্তর কোরিয়ায় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। করোনা আক্রান্ত হয়ে এদেশে মৃত্যুর সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে। মাত্র দুদিনের মধ্যে উত্তর কোরিয়ায় করোনায় মৃতের সংখ্যা পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মাত্র ৩ দিনে এই দেশে মোট সাড়ে ৮ লক্ষ মানুষ করোনার গ্রাসে পড়েছে। পরিস্থিতি দিন দিন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। ইতিমধ্যেই দেশে উত্তরোত্তর বাড়তে থাকা করোনার সংক্রমণ রোধে উত্তর কোরিয়া জুড়ে লকডাউন শুরু হয়েছে। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি খুব একটা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদ মাধ্যম KCNA দেশের করোনা পরিচিতি প্রসঙ্গে জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহ ধরে এই দেশের মানুষ অজানা এক জ্বরের কবলে পড়েছে। ইতিমধ্যেই রবিবার সকালে এই জ্বরের প্রকোপে আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মাত্র ৩ দিনে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪২। অন্যদিকে, জানা যাচ্ছে সংক্রমনের খবর প্রকাশ্যে আসার মাত্র তিন দিনের মধ্যে উত্তর কোরিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লক্ষ ২০ হাজার ৬২০ জন। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অন্ততপক্ষে ৩ লক্ষ ২৪ হাজার ৫৫০ জন। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে রাতারাতি কার্যত কোণঠাসা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী করোনার সংক্রমণ রুখতে ইতিমধ্যেই উত্তর কোরিয়ার রাজধানীসহ, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শহর, প্রদেশ এবং শহরতলীতে জারি হয়েছে লকডাউন। বন্ধ হয়েছে দেশের প্রায় অধিকাংশ কলকারখানা এবং অফিস-কাছারি। দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশজুড়ে জরুরী ভিত্তিতে চালু হয়েছে কোয়ারেন্টাইন পরিষেবা। অন্যদিকে এর মধ্যেই জানা যাচ্ছে, বারবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুরোধ সত্বেও দেশের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখনো করোনার কোনও টিকা নেননি। আর তার জেরেই মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে এই সংক্রমণ। যতদিন এগোচ্ছে ততই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
অন্যদিকে স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বর্তমানে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উন। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সংক্রমনের ফলে উত্তর কোরিয়ায় বিরাট পরিবর্তন এসেছে। দেশের অর্থনীতিও বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। এখনও পর্যন্ত এটাই উত্তর কোরিয়ার সবথেকে বড় বিপর্যয়। কিম জং উনের কথা প্রকাশ্যে আসতেই আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহলের মত, অবশেষে করোনার কাছে হার মানতে হয়েছে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানকেও। তবে কিছুদিন আগে থেকে যদি তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতেন এবং সরকারি তৎপরতায় যদি দেশের সাধারণ মানুষকে করোনার টিকা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আরও উৎসাহিত করা যেত তাহলে এত বড় বিপর্যয় অনেক আগেই রোখা যেত। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে লকডাউন কিংবা কোয়ারেন্টাইনের মত প্রাথমিক করোনা রোধের পদক্ষেপগুলি দেশের এমন ভয়াবহ সংক্রমণ রুখতে কতটা কার্যকর হবে সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে আন্তর্জাতিক মহলে।