যুদ্ধে ভাল ফল পাচ্ছেন না পুতিন, পরাজয়ের দিকেই কি এগোচ্ছে রাশিয়া?

যুদ্ধে ভাল ফল পাচ্ছেন না পুতিন, পরাজয়ের দিকেই কি এগোচ্ছে রাশিয়া?

মোস্কো: রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যেকার সংঘাত ইতিমধ্যেই পার করেছে ৮০ দিন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী এতদিনের একটানা হামলায় ইউক্রেনের মেরুদণ্ড এতদিনে ভেঙে যাওয়ার কথা। তবে শুধু রাশিয়া নয়, ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের প্রথমে রুশ বাহিনীর আক্রমণের তীব্রতা দেখে অনেকেই মনে করেছিলেন যে, খুব শীঘ্রই হার স্বীকার করে নেবে ইউক্রেন। কিন্তু বর্তমানে যুদ্ধ পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে ইউক্রেনের জায়গায় রাশিয়াই কোণঠাসা, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। অন্যদিকে সম্প্রতি রাশিয়ার এক শীর্ষস্থানীয় সেনা আধিকারিকও যুদ্ধ প্রসঙ্গে জানান, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এই যুদ্ধ সম্পর্কে  যেমন পরিকল্পনা এবং আশা করেছিলেন আদতে এই যুদ্ধে তেমন কিছুই ঘটেনি। এই বিবৃতির সামনে আসার পর থেকেই মাথাচাড়া দিয়েছে আরও একটি প্রশ্ন, তাহলে কি ইউক্রেনের জায়গায় রাশিয়ারই পরাজয় ঘটতে চলেছে এই সংঘাতে?

অন্যদিকে ইউক্রেন রাশিয়া সংঘাত শুরুর পর থেকেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে উত্তরোত্তর সম্পর্ক খারাপ হয়েছে রাশিয়ার। একদিকে যেমন রাশিয়ার এই অতর্কিত হামলার নিন্দা করে এই দেশকে কার্যত কোণঠাসা করে দিয়েছে ইউরোপ এবং আমেরিকার একাধিক দেশ, অন্যদিকে ন্যাটো অধ্যুষিত দেশগুলিও পুতিনের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে নিয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এমতাবস্থায় জানা যাচ্ছে রাশিয়ারই প্রতিবেশী আরও দুটি দেশ ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন ন্যাটোর সদস্য পদ গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সংঘাতের কয়েক দিন পরেই এই দুই দেশের ন্যাটোয় যোগদানের খবর প্রকাশ্যে আসার পরপরই কার্যত নড়েচড়ে বসে মস্কো। ইতিমধ্যে এই দুটি দেশকে একাধিক জোরালো বার্তা এবং হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে রাশিয়ার তরফ থেকে। এমনকি তাদের পরমানবিক ক্ষেপনাস্ত্রেরও ভয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার কোনও বার্তাকেই যে আর পাত্তা দিচ্ছে কেউই সম্প্রতি তারই প্রমাণ মিলেছে যখন রবিবার ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট যৌথভাবে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে যে তারা ন্যাটোয় যোগদান করতে আগ্রহী এবং ইতিমধ্যেই ন্যাটোর সদস্য পদ গ্রহণের কাজকর্ম শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায় রাশিয়ার প্রতিবেশী এই দুই দেশ যদি ন্যাটোয় নাম লেখায় তাহলে আদতে রাশিয়ার ওপর চাপ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। একইভাবে ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্সের মতো একাধিক দেশ এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিরোধিতা করে ইউক্রেনকে সমস্ত রকম সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সংঘাতের প্রথম থেকেই। ইতিমধ্যেই বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি তথা জো বাইডেনের স্ত্রীয়ের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন পরিদর্শন করেছেন এবং ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দেখা করে এই যুদ্ধে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তার জেরে দিন যত এগিয়েছে কূটনৈতিক দিক থেকে ইউক্রেন ততই হয়েছে শক্তিশালী।

 অন্যদিকে জানা যাচ্ছে কূটনৈতিক দিক ছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রেও রাশিয়ার বাহিনী রীতিমতো কোণঠাসা। ইউক্রেন রাশিয়া সংঘাতের প্রথম থেকেই রুশ বাহিনীর সঙ্গে কার্যত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়েছে ইউক্রেনের বাহিনী। ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের একাধিক শহর বা শহরতলীতে যা রুশ বাহিনী তাদের দখলে নিয়েছিল সেগুলি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। বর্তমানে তারা খারকিভ থেকে রুশ বাহিনী দের বিতাড়িত করতে মরণপণ যুদ্ধ চালাচ্ছেন। এমতাবস্থায় ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইউক্রেন রাশিয়ার সংঘাতের প্রথমদিকে রুশ বাহিনীর যা ঝাঁজ ছিল তার এক-তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যেই হারিয়েছে পুতিনের সেনা। এই প্রসঙ্গে ব্রিটেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফ থেকে একটি টুইটে লেখা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি যা তাতে রাশিয়া আগামী ৩০ দিনের মধ্যে নাটকীয় ভাবে পরাজয়ের মুখে পড়লেও পড়তে পারে। একই মত ন্যাটোরও। সম্প্রতি তারা ইউক্রেন বাহিনীর সাহায্যে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছেন এই যুদ্ধে ইউক্রেন জয় লাভ করতে সক্ষম। এইসবের মধ্যেই খবর মিলছে ইউক্রেনের বহু রিফিউজি যারা একসময় রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল তারাও ধীরে ধীরে ঘরে ফেরা শুরু করেছে। জানা যাচ্ছে আগের তুলনায় অনেক কম গোলাবর্ষণ করছে রুশ বাহিনী, তার জেরেই ধীরে ধীরে ঘরে ফিরছেন আত্মবিশ্বাসী ইউক্রেনবাসীরা।

সবকিছু খতিয়ে দেখলে এখন একটা জিনিসই বোঝা যাচ্ছে যে, দিন যত এগোচ্ছে ততই পরিস্থিতি যেন একটু একটু করে হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে পুতিন বাহিনীর। আর এমনটা চলতে থাকলে  আর মাত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রুশ বাহিনীকে নিজেদের দেশ থেকে পুরোপুরিভাবে বিতাড়িত করতে সক্ষম হবে ইউক্রেন সেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven + 12 =