কলকাতা: হিন্দুদের উপর অকথ্য অত্যাচারের পর, দুর্গাপূজো নিয়ে সাঙ্ঘাতিক ফতোয়া জারি বাংলাদেশে।ভেতরে ভেতরে দেশটাকে হিন্দু শূন্য করার চক্রান্ত? খুনের হুমকি দিয়ে ধর্মান্তকরনের ফর্মে সই!এরপরেও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে শর্ত দেয় কী করে বাংলাদেশ?
যখন বাংলাদেশে রীতিমত বিপন্ন হিন্দুরা, যখন ওপার বাংলার বুকে অ্যান্টি ইন্ডিয়ান মেন্টালিটি ক্রমেই ডেভেলপ করছে, ঠিক তখন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুস ভারতের সঙ্গে শো সম্পর্ক স্থাপন করতে রাখলেন বড়সড় একটা শর্ত। বললেন, ভারত ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তাঁরা সুসম্পর্ক চান, কিন্তু তা স্বচ্ছতা ও সমতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। কিন্তু কোন স্বচ্ছতা বা সমতার কথা বললেন ইউনুস?
যে বাংলাদেশে অ্যান্টি ইন্ডিয়ান মেন্টালিটি ক্রমেই জাঁকিয়ে বসেছে, খেলা থেকে শুরু করে বন্যা সব ক্ষেত্রেই ভারতের দোষ দেখা হয়। সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হিন্দুদের বাড়ি ঘর দোকান পাট মন্দিরে একের পর এক হামলা চালানো হয়, মোদ্দা কথা বাংলাদেশ জুড়ে যখন হিন্দু নিধনযোগ্য চলছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বারংবার উঠে আসছে, খোদ অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসন থেকে হিন্দু আধিকারিকদের তাড়ানো শুরু করেছে, জামাতে ইসলামী গ্রাম অঞ্চলে হিন্দুদের দেশ ছাড়া ও প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে দলে যোগ দেওয়ানো চলছে, সঙ্গে ধর্মান্তকরণের ফর্মে সই আদায়ের কাজ চলছে, যে দেশে মৌলবাদীদের চাপের মুখে কার্যত গুটিয়ে হিন্দুরা, যখন ভেতরে ভেতরে বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করার ছক কষা হচ্ছে, এমনকি বাংলাদেশের জমি ব্যবহার করে সীমান্ত লাখোয়া পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলোতে যখন নতুন করে জঙ্গি স্লিপার্সেল খোলার উদ্যোগ নিয়েছে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই, এবং সেখানে সেই পরিকল্পনায় পুরোপুরি ইনভল্ভ আছে ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত রাজাকার বাহিনীর সরকার। যখন জেল থেকে ছাড়া হচ্ছে একের পর এক প্রখ্যাত জঙ্গিকে। ঠিক তখন ইউনুস ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে শর্ত চাপাচ্ছেন?
না এটুকুই নয় হিন্দুদের দুর্গাপূজোতেও বাংলাদেশ রীতিমতো ফতোয়া জারি করেছে। পুজোর দিনগুলোতে আজানের কমপক্ষে পাঁচ মিনিট আগে থেকে মাইক, ঢাক বা অন্য বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে। নামাজ শেষের পর তা আবার চালু করা যাবে। একইসঙ্গে,স্থানীয় বাসিন্দা ও মাদ্রাসার পড়ুয়াদের পাহারায় দুর্গাপুজো পালিত হবে পড়শি রাষ্ট্র বাংলাদেশে। একইসঙ্গে, পুজোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিযুক্ত করা হবে পুজো মণ্ডপগুলোতে। বিভিন্ন শিফটে মণ্ডপ পাহারা দেবেন তাঁরাও। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে,তাহলে কি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে দুর্গাপুজো করার মতো সুস্থ পরিবেশ নেই? যদিও একথা মানতে নারাজ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলছেন, পুজো মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি যাতে পুজোর সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও অক্ষুণ্ণ থাকে, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে। কিন্তু হাসিনার পদত্যাগ দেশটাকে পর থেকে যা যা ঘটেছে বাংলাদেশে সেই ছবি কিন্তু অন্য কথা বলছে। যেখানে হিন্দুরা মোটেই সেফ নয়। সবটাই দেখছে নয়া দিল্লি। কিন্তু বিপাক্ষিক সম্পর্কে এখনো কোনো প্রভাব ফেলতে দিতে চাইছে না মোদী সরকার। তাই বলে স্বচ্ছতা আর সমতা বজায় রেখে সুসম্পর্ক রাখার যে শর্ত দিচ্ছেন ইউনুস, সেটা বাংলাদেশের তরফ থেকে কতটা মেন্টেন করা হচ্ছে? এই প্রশ্নটা তো থেকেই যায়।
এদিকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও বেহাল। জিনিসপত্রের দাম আগুন। প্রোটিনের উৎস ডিম ভারত থেকে নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এরপরেও আরো দিন ভারত থেকে যাবে বাংলাদেশে। কিন্তু পুজোর সময় ইলিশ বাংলাদেশ থেকে পাঠানো হবে না ভারতে। এমনটাই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ডিম পাঠানোর পর ভারত ইলিশের আবদার করেছে বাংলাদেশের কাছে। অর্থাৎ দুই দেশের মাঝে সৌজন্যতার ছবিগুলো বদলে গেলেও ভারত কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে কতটা আগ্রহী এবং বাংলাদেশকে এখনো কতটা বন্ধুত্বের মর্যাদা দিচ্ছে নয়াদিল্লি, তা কার্যত আরো একবার প্রমাণিত। সেক্ষেত্রে ভারতের তরফে কিন্তু কোন শর্ত বা কন্ডিশন এখনো পর্যন্ত রাখা হয়নি বাংলাদেশের সামনে। অথচ বাংলাদেশ এর অন্তর্বর্তী সরকার রয়েছে স্বমহিমায়। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ার ডাক দিলেও, অন্তর্বর্তী সরকার এর তরফে এখনো তেমন কোন পদক্ষেপ চোখে না পড়লেও, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে শর্তের ভাবনা নিয়েই এগোচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনুস।