বাতাসে ছড়াচ্ছে করোনা! গবেষকদের দাবিতে মানতে নারাজ WHO, বাড়ছে জল্পনা

বাতাসে ছড়াচ্ছে করোনা! গবেষকদের দাবিতে মানতে নারাজ WHO, বাড়ছে জল্পনা

নয়াদিল্লি: ৩২টি দেশের ২০০-রও বেশি গবেষকরা যেখানে দাবি করছেন, করোনা ভাইরাস বায়ুবাহিত এবং একটি ছোট্ট কণাও মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে৷ তার প্রমাণও রয়েছে৷ তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এবিষয়টি নিয়ে এখনও পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে৷ আর এনিয়ে ইতিমধ্যেই সংস্থার কাজ ও পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গবেষকদের একটা বড় অংশ৷

সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে গবেষকদের এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে৷ বলা হয়েছে, বার, রেস্তোঁরা, অফিস, বাজার এবং ক্যাসিনোতে মানুষের যাতায়াতের কারণে বিশ্বব্যাপী করোনার ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভাইরাসগুলি সেইসব জায়গায় আবদ্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা এই সংক্রমণের ধারাবাহিক নিশ্চিত করছে৷ যা নিজের বাড়িতে কাছের মানুষগুলিকেও প্রভাবিত করে। অবশ্য এই দাবি নতুন নয়। বিগত কয়েক মাস ধরেই এমন দাবি জানিয়েছেন গবেষকদের একাংশ।

প্রতিবেদনে উল্লিখিত রিপোর্ট অনুসারে, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে লেখা একটি খোলা চিঠিতে, ৩২ টি দেশের ২৩৯ জন গবেষক দাবি করেন মানুষকে সংক্রামিত করার জন্য ক্ষুদ্র কণাগুলির মারাত্মক প্রভাব রয়েছে এবং এবিষয়ে সংস্থাকে তাদের ধারণা পরিবর্তন করার জন্য আবেদন করেছিলেন৷’’ গবেষকরা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে এটি একটি সায়েন্স জার্নালেও এই গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন৷

গবেষকরা তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে সতর্ক করেছেন, একটি মহামারীর ক্ষেত্রে যদি বায়ুবাহিত সংক্রমণ একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হয়, বিশেষত  বায়ুচলাচল কম হয় এমন জনবহুল জায়গাগুলিতে, তবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এর পরিনাম ভয়াবহ হবে। সেক্ষেত্রে এমনকি সামাজিক-দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি বাড়ির ভিতরেও মাস্ক পরার প্রয়োজন হতে পারে। স্বাস্থ্যপরিষেবায় নিযুক্ত কর্মীদেরও এন-৯৫ মাস্ক পড়তে হতে পারে যা সামান্য শ্বাস প্রশ্বাস থেকেও ছড়িয়ে পড়া কনাগুলি ফিল্টার করতে সক্ষম। যেহেতু তাঁরা করোন আক্রান্ত রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার কাজে নিযুক্ত। স্কুল, নার্সিং হোমস, আবাসন এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভেন্টিলেশন ব্যবস্হা এমন রাখতে হবে যেখানে হাওয়া চলাচল করে এবং সেখানকার হাওয়া জীবাণুমুক্ত রাখতে পোক্ত ব্যবস্থার প্রয়োজন হতে পারে। আবদ্ধ জায়গায়  ভাসমান জীবাণু যুক্ত ছোট ছোট কণাগুলি মারার জন্য আল্ট্রাভায়োলেট লাইটের প্রয়োজন হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে যে, করোনভাইরাস মূলত জোরদার গতিসম্পন্ন শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে নির্গত কনা থেকে ছড়িয়ে পড়ে, যা কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বেরিয়ে আসে এবং দ্রুত মেঝেতে পড়ে যায়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে লেখা ২৩৯ জন গবেষকের খোলা চিঠিতে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে যে খুব ছোটো কনা থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে যা হাওয়ায় ভাসমান অবস্থায় থেকে রায়। করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত গত ২৯ জুন প্রকাশিত হু-এর নতুন তথ্য অনুসারে একমাত্র চিকিৎসা প্রক্রিয়া চলাকালীন সেখান থেকে নির্গত  হাওয়ার মাধ্যমেই এই ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে অথবা ভাইরাসটির যদি ৫ মাইক্রণের থেকেও ছোট হয়। তাই তাঁদের গাইডলাইন অনুযায়ী একমাত্র সেইসব ক্ষেত্রেই এন-৯৫ মাস্কের প্রয়োজন।

তবে হু-এর এক ডজন বিশেষজ্ঞ সহ প্রায় ২০ জন গবেষকের সাক্ষাৎকার, পরামর্শদাতা এবং কমিটির একাধিক সদস্য যারা নির্দেশিকা তৈরি করেছিল – এবং অভ্যন্তরীণ ইমেলগুলি এমন একটি প্রতিষ্ঠানের চিত্র তুলে ধরছে যেখানে ভাল উদ্দেশ্য সত্ত্বেও তা বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ বহির্ভূত। এই বিশেষজ্ঞদের বেশিরভাগ হু-এর ক্রমবর্ধমান কাজ এবং সঙ্কুচিত বাজেটের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন এবং এই কর্মপরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আছে  কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার মত বিষয়টিও মা বিশেষত মার্কি যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে তৈরী হয়েছে। প্রতিদিনের বিবৃতি দেওয়া এবং মহামারী সম্পর্কে অক্লান্তভাবে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য তাঁরা হু-এর কর্মীদের প্রশংসাও করেছেন।

ইনফেকশন প্রিভেনশন ও কন্ট্রোল কমিটির বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বৈজ্ঞানিক প্রমাণগুলির একটি কঠোর এবং ভীষণভাবে চিকিৎসা সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা আবদ্ধ, যা তাঁদের গাইডলাইনগুলি আপডেট করার গতিকে ধীর এবং ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। পাশাপাশি কিছু রক্ষণশীল মত পোষণকারীদের ক্ষমতাবৃদ্ধি করছে। এপ্রিলের শুরুতে, ৩৬ জন বিশেষজ্ঞের একটি দল হু-কে এই বিষয়টি মেনে নিতে বলেছিলেন এবং  করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত সংক্রমণ সম্পর্কিত ক্রমবর্ধমান প্রমাণ বিবেচনা করে বায়ুর গুণমান এবং এরোসোল সম্পর্কে তাদের গবেষণাকে মান্যতা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তখন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওই গবেষকদের গ্রুপ লিডার এবং হু-এর দীর্ঘদিনের পরামর্শদাতা লিডিয়া মোরাউস্কাকে একটি বৈঠকের আয়োজন করতে বলেছিল হু। তখন সেই আলোচনায় কয়েকজন বিশেষজ্ঞের হাত ধোওয়ার ওপর জোর দিয়ে ওই গবেষটদলের দাবিকে প্রতিহত করেছিল।

এই দাবির পক্ষে বিপক্ষে নানান মতামত রয়েছে। তবে তাদের বেশিরভাগের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতি অনাস্থাই জোরদার হচ্ছে। যদিও,ডাব্লুএইচও'র প্রধান গবেষক ডঃ সৌম্য স্বামীনাথন বলেছেন, “সংস্থার কর্মীসদস্যরা যত দ্রুত সম্ভব নতুন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মূল্যায়নের চেষ্টা করছেন, তবে তাদের পর্যালোচনার গুণগত মান ছাড়াই। তিনি আরও বলেছেন যে সংস্থার সকলের মতামতের গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কমিটিগুলির দক্ষতা এবং যোগাযোগ আরও প্রশস্ত করার চেষ্টা করবে। স্বামীনাথন জানিয়েছেন, ‘‘গবেষক, সাংবাদিক এবং অন্যান্য কেউ যখন সংস্থাকে চ্যালেঞ্জ করছে, দাবি করেছে যে আমরা আরও ভালো কিছু করতে পারি তখন পুরো বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে দেখব৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × four =