কানাডায় কারনি জমানার সূচনা, ঘুচবে দিল্লি-অটোয়ার দূরত্ব?

India Canada relations Carney কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে লিবারেল পার্টির জয় এবং মার্ক কারনির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিষেক, ভারত-কানাডা সম্পর্কে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। কূটনৈতিক টানাপোড়েনের…

India Canada relations Carney

India Canada relations Carney

কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে লিবারেল পার্টির জয় এবং মার্ক কারনির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিষেক, ভারত-কানাডা সম্পর্কে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। কূটনৈতিক টানাপোড়েনের দীর্ঘ অধ্যায়ের পর দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার আবহ তৈরি হতে শুরু করেছে।

‘সংকটেই আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন’ — কারনির আত্মবিশ্বাস

অর্থনীতিবিদ ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান মার্ক কারনি রাজনীতির ময়দানে একেবারে নতুন মুখ। নির্বাচনী প্রচারে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন হবে তাঁর অগ্রাধিকার। এক সাক্ষাৎকারে কারনি বলেন, “যদি আমি প্রধানমন্ত্রী হই, আমি চাই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তুলতে। বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বের মধ্যে যেন একটা মূল্যবোধের মিল থাকে, সেটাই লক্ষ্য।”

ট্রুডো অধ্যায়ের উত্তাপ, কূটনৈতিক বিপর্যয়ের স্মৃতি India Canada relations Carney

২০২৩ সালে খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যার জন্য ভারতীয় গুপ্তচরদের অভিযুক্ত করে কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সেই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করে ভারত। পাল্টা পদক্ষেপে, দুই দেশ একে অপরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে, বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ হয়, স্থগিত হয় দ্বিপাক্ষিক সফর।

ভারতের অভিযোগ, কানাডা দীর্ঘদিন ধরে তাদের শিখ প্রবাসীদের চরমপন্থার দিকে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ট্রুডোর সরকার অতিরিক্ত সহানুভূতিশীল এবং ভারতের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাত—এমনই মনে করতেন নয়াদিল্লির কূটনীতিকরা।

নতুন নেতৃত্ব, নতুন ভরসা

৬০ বছর বয়সি মার্ক কারনি, যিনি ব্যাংক অফ কানাডা এবং ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের প্রধান ছিলেন, এবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং নতুন বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বের কথা বলেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে মার্কিন শুল্কনীতির হুমকির প্রেক্ষিতে, কারনির প্রতিশ্রুতি—ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা।

“নতুন মানুষ, নতুন নীতি, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি”—কারনির এই উক্তি এখন দুই দেশের কূটনীতিতে আলোচনার বিষয়।

নরেন্দ্র মোদীর অভিনন্দন বার্তা

মার্ক কারনির জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে লেখেন,
“ভারত ও কানাডা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইন প্রতিষ্ঠার প্রতি অঙ্গীকার এবং প্রাণবন্ত জনগণের সম্পর্ক দ্বারা আবদ্ধ। আমাদের অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী করে তুলতে আমি আপনার সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছি।”

প্রবাসী ভারতীয়দের ভূমিকা

ভারতীয়রা কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম অভিবাসী গোষ্ঠী। প্রায় ২.৮ মিলিয়ন ভারতীয় কানাডায় কর্মী, শিক্ষার্থী বা স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে রয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ লক্ষের বেশি শিক্ষার্থী কেবল কানাডার উচ্চশিক্ষা ও শ্রমবাজারে বিশাল ভূমিকা রাখেন।

ট্রুডোর জমানায় রাজনৈতিক স্তরে সম্পর্কে ফাটল দেখা দিলেও, ভারত থেকে অভিবাসনের হার উচ্চই ছিল। কারনির অধীনে অভিবাসন, বিশেষ করে দক্ষ পেশাজীবী, প্রযুক্তি কর্মী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য, স্থিতিশীল থাকবে বলেই ধারণা।

বাণিজ্যে বরফ গলতে পারে

নিজ্জার হত্যাকাণ্ড ঘিরে CEPA (Comprehensive Economic Partnership Agreement) বাণিজ্য আলোচনায় ব্রেক কষা হয়েছিল। তবে কারনির বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, সেই আলোচনার পুনরুজ্জীবন সম্ভব।

২০২৩ সালে ভারত-কানাডা দ্বিপাক্ষিক পরিষেবা বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৩.৪৯ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার। দুই দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সবুজ শক্তি, ফিনটেক ও উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাবনা আগেই খতিয়ে দেখেছিল। কারনির আমলে সেই সম্ভাবনা ফের আলোচনায় আসতে পারে।

World: Mark Carney‘s election as Canada’s PM offers new hope for India-Canada relations after diplomatic tensions. Liberal Party victory signals potential reset. Carney prioritizes rebuilding ties, emphasizing shared values and trade.