রাজনৈতিক উত্থান থেকে বিতর্কের শিরোনাম! এক ধূসর অধ্যায়ের উত্তরাধিকার খালেদা জিয়া

khaleda zia political journey কলকাতা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যে ক’জন নেতা-নেত্রীর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তাঁদের মধ্যে খালেদা জিয়া নিঃসন্দেহে একজন। তিনিই দেশের প্রথম মহিলা…

khaleda zia political journey

khaleda zia political journey

কলকাতা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যে ক’জন নেতা-নেত্রীর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তাঁদের মধ্যে খালেদা জিয়া নিঃসন্দেহে একজন। তিনিই দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী, যিনি একাধারে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনবারের সরকারকে, আবার সময়ের পরিক্রমায় হয়েছেন কারাবন্দি। এই উত্থান-পতনের পথে তিনি কখনও ছিলেন সংগ্রামী, কখনও ছিলেন বিতর্কের কেন্দ্রে। তবে সব ছাপিয়ে, তিনি হয়ে উঠেছেন এক অনিবার্য রাজনৈতিক চরিত্র।

খালেদার জন্ম

খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে। তাঁর পিতার নাম ইস্কান্দর আলী মজুমদার, যিনি ছিলেন চা ব্যবসায়ী। পরিবারসহ ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) চলে আসেন। শিক্ষাজীবনে তিনি নিজেকে “স্বশিক্ষিত” হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তবে তাঁর মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। তিনি দিনাজপুর মিশনারি স্কুল ও দিনাজপুর গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন।

বিবাহ বন্ধন ও রাজনৈতিক সফর khaleda zia political journey

১৯৬০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন৷ বিয়ের পর তাঁর নাম হয় খালেদা জিয়া। জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয়েছিল ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি থেকে। স্বামী জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তিনি রাজনীতিতে আসেন। দলীয় অভ্যন্তরীণ সংকট কাটিয়ে বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালে সরাসরি ভোটে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার অর্থনৈতিক উদারীকরণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। তবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধ, হরতাল এবং সংসদ বর্জনও ছিল এই সময়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

জামাত-সমর্থিত সরকার

২০০১ সালে জামাত-সমর্থিত জোট নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসেন খালেদা জিয়া। এই মেয়াদে বাংলাদেশ জঙ্গি উত্থানের এক ভয়ঙ্কর সময় দেখেছে। ২০০৫ সালে দেশজুড়ে একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। আন্তর্জাতিক মহলে এবং দেশের অভ্যন্তরেও প্রশ্ন উঠেছিল, উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান নিয়ে। সেইসঙ্গে মাইনরিটি নির্যাতন ও প্রশাসনের দলীয়করণ নিয়েও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ছিল তীব্র অভিযোগ।

খালেদা জিয়ার জীবনের বড় অধ্যায় হয়ে ওঠে দুর্নীতির মামলা ও কারাবাস। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে খালেদা জিয়াসহ অনেক রাজনীতিবিদকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৪ সালে তিনি এবং তাঁর দলের নেতারা এতিমখানা ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট তহবিল দুর্নীতিকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হন। ২০১৮ সালে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা পরবর্তীতে ১০ বছরে উন্নীত হয়।

একের পর এক দুর্নীতি

এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির দায়ে দেওয়া প্রথম শাস্তি। সরকারপন্থী ও বিরোধী মহলে এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক ছিল—একপক্ষ এটিকে আইনের প্রয়োগ বললেও, অন্যপক্ষ একে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে অভিযোগ তোলে।

খালেদা জিয়া ও বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই ভারতবিরোধী রাজনীতির জন্য পরিচিত।
বিশেষ করে তিনি ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ত্রিপুরা চুক্তি, জল বণ্টন, সীমান্ত ইস্যুতে কড়া অবস্থান নেন। ভারত থেকে তাঁর রাজনৈতিক দূরত্ব দেশের কূটনৈতিক মহলে আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়। এছাড়ও তাঁর জমানায় ২০০৫ সালে সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা এবং উগ্রপন্থীদের উত্থান বড় বিতর্কের জন্ম দেয়।

শর্তসাপেক্ষে মুক্তি

পরবর্তীতে স্বাস্থ্যগত কারণে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যার চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। কাতারের আমিরের সহায়তায় বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে পাঠানো হয়। তার এই বিদেশ যাত্রা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়।

ব্যক্তিগত জীবনে খালেদা জিয়া ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও রক্ষণশীল। শিক্ষা জীবন নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেও, রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় তিনি ছিলেন অসাধারণ। তবে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি কখনও—জন্মতারিখ পালন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের শহিদ সংখ্যা নিয়ে মন্তব্য, সবই তাঁকে ঘিরে বিতর্কের জাল বিস্তার করেছে।

২০২৫ সালে তিনি বিদেশ থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে এসেছেন। তবে তার শরীর আর রাজনীতি, আগের মতো সক্ষম নেই। বর্তমান রাজনীতির পালাবদলের মধ্যে খালেদা জিয়া এখন এক প্রতীক—কারও কাছে গণতন্ত্রের শহিদ, কারও কাছে অতীতের প্রতিনিধি।

তবে ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে—একজন নারী, যিনি পুরুষশাসিত রাজনীতিতে নিজের অবস্থান গড়ে নিয়েছিলেন সাহস, কৌশল আর দৃঢ়তায়।

World: Explore the political journey of Khaleda Zia, Bangladesh’s first female Prime Minister. From leading three governments to imprisonment, her life is marked by struggle and controversy. Learn about her rise, tenures, and the corruption charges.