কলম্বো: অচলাবস্থা বিদ্যমান দেশের সর্বত্র। খাদ্যদ্রব্য থেকে জ্বালানি গ্যাস সবকিছুই বাড়ন্ত। এমনকি বেঁচে থাকার জন্য নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় ওষুধটুকু পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। আর তার জেরেই বিক্ষোভের আগুনে রণক্ষেত্রের রূপ নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা। প্রাণ বাঁচাতে শ্রীলঙ্কার সর্বহারা সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে মাসখানেক আগে থেকেই রাস্তায় নেমেছেন। যতদিন এগিয়েছে, একটু একটু করে আরও ফাঁকা হয়েছে কোষাগার, ততই বেড়েছে সেই বিক্ষোভের তেজ। আর সেই বিক্ষোভ, আন্দোলন সর্বোপরি দেশের মানুষের রোষের সামনে আর টিকে থাকতে পারলেন না শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। শেষমেষ প্রধানমন্ত্রীকে ইস্তফা দিতেই হল। জানা যাচ্ছে সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে ইস্তফাপত্র তুলে দিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের এই ইস্তফা গ্রহণ করেছেন।
উল্লেখ্য, তীব্র আর্থিক সংকটের মুখে পড়ার পর থেকেই শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন সেই দেশের সাধারণ নাগরিকরা। রবিবারের আগেও বেশ কয়েকবার তাঁরা রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু রবিবারের দেখানো বিক্ষোভ কার্যত সমস্ত সীমা অতিক্রম করে। স্থানীয় সূত্রে খবর শ্রীলঙ্কা আর্থিক অনটনের মুখে পড়ার পর থেকেই দেশজুড়ে লুটপাটের ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সমস্ত কিছু দেখার পরেও কার্যত নিজের চোখ বন্ধ করে নিয়েছে সরকার। একদিকে ভাত, ডাল, দুধ, পাউরুটির মতো সাধারণ খাবার যোগাড় করতেই দীর্ঘ লাইন আর অপেক্ষা, অন্যদিকে জ্বালানি গ্যাস থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ পরিষেবা সবকিছুই থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশের মানুষ। কিন্তু তারপরেও মাশ খানেক কেটে গেলেও দেশের পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি। ফলে সম্প্রতি ফের রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে দেশের মানুষ। রবিবারের সেই বিক্ষোভ চরমে ওঠে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে আহত হযন অন্তত ২০ জন। ফের জারি করা হয় কার্ফু। কিন্তু তারপরেও দেশের মানুষকে কোনওভাবেই নিয়ন্ত্রণে না আনতে পাড়ায় শেষমেষ পদত্যাগেরই সিদ্ধান্ত নিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য গত এপ্রিল মাস থেকেই শ্রীলঙ্কায় শুরু হয়েছে আর্থিক সংকট। দেশের মুদ্রা ভান্ডার থেকে গচ্ছিত সম্পত্তি সবকিছুই একটু একটু করে হয়েছে খালি। ফলে জ্বালানি থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, খাদ্যসামগ্রীর ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে ভয়াবহ সংকট। আর্থিক সংকটের শুরুতেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল ব্যাপক আন্দোলন ও বিক্ষোভ। তখনই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি ওঠে। কিন্তু সেই সময় পদত্যাগ করতে অস্বীকার করলেও শেষমেষ শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রাজাপক্ষেকে সিংহাসনচ্যুত করেই ছাড়ল শ্রীলঙ্কার মানুষ।