ফের জেহাদিদের রুখে দিল পঞ্জশির, মৃত্যুভয় ভুলে নাগরিক বিদ্রোহ!

ফের জেহাদিদের রুখে দিল পঞ্জশির, মৃত্যুভয় ভুলে নাগরিক বিদ্রোহ!

কাবুল: কুড়ি বছর পর আফগানিস্তানের দখল ছিনিয়ে নিয়েছে তালিবান। ফিরেছে অতীতের স্মৃতি, দেশ জুড়ে শুধুই এখন ধ্বংসের ছবি। ক্ষমতা দখলের পর তালিবানি নিয়মের পরিবর্তন হয়েছে বলে জঙ্গিরা দাবি করলেও, কথায় ও কাজে তাঁদের ফারাক চোখে পড়ছে। ইতিমধ্যেই কাবুল, জালালাবাদ জুড়ে চরম নৃশংসতা চালিয়েছে তালিবানরা। আর তাতে একথা প্রমাণিত যে,তালিবান আছে তালিবানেই।

তালিবানি শাসন-শোষণের কথা জানে সেদেশের নাগরিকরা। একাধিক ফতেয়া জারি, কথায় কথায় মৃত্যুদণ্ড। জীবন-মৃত্যুর মাঝে ফারাক নির্দিষ্ট করে শুধুমাত্র একটা ট্রিগার। সেই আবহেই এখন দিন কাটছে আফগানবাসীর।  দেশ জুড়ে তালিবানি বর্বরতা দেখেও যখন বিশ্বের বড় বড় দেশ মুখে কুলুপ এঁটেছে, সেই সময় ‘বিদ্রোহ’-এ নেমেছেন সাধারণ মানুষ। কারণ তাঁরা জানেন, এই লড়াই তাঁদের নিজেদের। তাঁদেরই বুঝে নিতে হবে। আর সেই কারণেই মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে তালিবান বিরোধিতায় রাস্তায় নেমেছেন নাগরিকরা।

একদিকে যখন তালিবান বিরোধিতায় প্রতিবাদ গড়ে তুলছে নাগরিকরা, তখন আরও বড় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে পঞ্জশির৷ উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের একমাত্র এই উপত্যকায় এখনও পর্যন্ত পা জমাতে পারেনি জঙ্গিগোষ্ঠী। রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরের এই অঞ্চলেই আশ্রয় নিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ। বুধবার এই পঞ্জশির দখল করতে গেলে নর্দান অ্যালায়েন্সের বিরোধিতার মুখে পড়ে তালিবান৷ চরম গোলাগুলির পর পিছু হটতে হয় জঙ্গিদের। আগের মতো এবারেও আফগানিস্তানের বুকে দুর্দমনীয় তালিবানকে রুখে দিয়েছে এই প্রদেশ৷

পারস্য শব্দ পঞ্জশিরের বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় পাঁচটি সিংহ৷ ৫১২টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই প্রদেশ৷ রাজধানী বাজারক৷ জনসংখ্যা ১,৭৩,০০০৷ অবস্থান রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে৷ বরাবরই মুক্তাঞ্চল হিসাবে নিজের অস্তিত্ব জাহির করেছে পঞ্জশির৷  ইতিহাস বলছে, আজ পর্যন্ত তালিবান এখানে দাঁত ফোটাতে পারে নি। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করেছে তালিবান৷ সেই সময়েও পঞ্জশিরে ঢুকতে পারেনি তারা৷ এমনকী এখানে পা রাখতে পারেনি সোভিয়েত ও মার্কিন সেনাও৷ এমন প্রদেশের যোদ্ধারা যে সিংহ বিক্রমে শত্রু দমন করতে পারেন, তা এলাকার নামই বলে দিচ্ছে। তালিবানের দখলে গোটা দেশ চলে যাওয়ার পর পঞ্জশিরে আশ্রয় নিয়েছেন আমরুল্লাহ সালেহ। প্রসঙ্গত, পঞ্জশির প্রদেশেই তাঁর জণ্ম৷ এমনকী তাঁর প্রশিক্ষণও হয়েছে এখানে৷ আর তাঁর নেতৃত্বেই আরও শক্তিশালী হয়েছে নর্দান অ্যালায়েন্সের প্রতিরোধ৷

তালিবান মোকাবিলায় নর্দান অ্যালায়েন্স জোট গড়ে উঠেছিল ১৯৯৬ সালে৷ যাদের সমর্থন করেছিল ভারত, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, ইরান ও তুর্কমেনিস্তানের মতো দেশ৷ পঞ্জশিরে ঢুকতে না পারলেও এর চারপাশে তালিবানের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে৷ আফগানিস্তানের ৯৮ শতাংশ এলাকা যখন তালিবানের দখলে তখনও নর্দান অ্যালায়েন্সের প্রতিরোধের জেরে পঞ্জশিরে মাথা গলাতে পারল না জঙ্গিরা। তালিবান বিরোধী এই জোটের পতাকা এখনও উড়ছে পঞ্জশিরে৷ সারা বিশ্ব যখন ভেবেছিল, গোটা আফগানিস্তান তালিবানের দাসত্ব মেনে নেবে। সেই সময় প্রতিরোধ গড়ে ইতিহাস অক্ষত রাখল পঞ্জশির৷ আফগানিস্তান পুনরুদ্ধারের জন্য তাই পঞ্জশিরের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − 11 =