নৈশভোজে যোগী-শাহের পাশে কেন মমতা? তরজায় কংগ্রেস-তৃণমূল

নৈশভোজে যোগী-শাহের পাশে কেন মমতা? তরজায় কংগ্রেস-তৃণমূল

 নয়াদিল্লি:  জি২০ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে ভারত মণ্ডপমে নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু৷ বিদেশি অতিথিদের পাশাপাশি ওই ভোজসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রত্যেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের৷ যত কাণ্ড ওই নৈশভোজেই৷ বসার আসন নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে৷ 

বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট৷ কেন্দ্রের মসনদ থেকে বিজেপি’কে উৎখাত করতে একছাতার নীচে সামিল হয়েছে ২৬টি রাজনৈতিক দল৷ বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে সুসংহত করতে প্রথম থেকেই উদ্যোগী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জোটের দলগুলির মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করতে গঠিত হয়েছে ১৪ সদস্যের কোঅর্ডিনেশন কমিটি৷ সেই কমিটিতে আবার রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধী জোটকে মজবুত করতে মমতা-সহ তৃণমূল নেতৃত্বরা যখন এতটা উদ্যোগী, ঠিক তখন  জি২০ বৈঠকের নৈশভোজে তৃণমূলনেত্রী আসন কেন অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথের পাশে? এই নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। 

ওই দিন খাওয়ার সময় অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথদের সঙ্গে এক টেবিলে দেখা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ওই টেবিলে ছিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনও। জি২০-র বিদেশি অতিথিদের মধ্যে একমাত্র বিন সলমনই ছিলেন ‘স্টেট গেস্ট’। এই আবহে নৈশভোজের আসরে মমতাকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ আর তাতেই চটেছে কংগ্রেস৷ মমতা কেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে বসলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শোরগোল ফেলেছেন প্রদেশে কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী৷ আসন কাণ্ডে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীও৷ তাঁর টিপ্পনি, ‘যোগী-শাহের সঙ্গে এক টেবিলে মুখ্যমন্ত্রী। ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।’

এদিকে, এক টেবিলে বসা নিয়ে চিঠি লিখে অধীর জানতে চেয়েছেন, নৈশভোজে আমন্ত্রিত অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা যখন এড়িয়ে গেলেন, তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কেন সেখানে গেলেন? অধীরের আক্রমণের কড়া জবাব দিয়েছে তৃণমূলও৷ রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন অধীরকে নিশানা করে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন৷ তিনি বলেন, মমতা যেখানে ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে শক্তিশালী করতে মরিয়া, সেখানে অধীর কেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হাত শক্ত করতে চাইছেন?

জি২০ বৈঠকের নৈশভোজে মমতা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নীতীশ কুমার, হেমন্ত সোরেনরাও। তবে তাঁরা বসেছিলেন অন্য টেবিলে। তবে মমতা বসেন শাহ, যোগীদের সঙ্গে। সেই সময় আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উঠে এসে কথা বলেন মমতার সঙ্গে। দু’জনের কুশল বিনিময়ও হয়। ওই নৈশভোজে মমতার আমন্ত্রণ রক্ষা নিয়ে কটাক্ষ করে অধীর বলেন, ‘‘এক টেবিলে যোগী আদিত্যনাথ, অমিত শাহের সঙ্গে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই যোগী উত্তরপ্রদেশে থাকা বাঙালিদের বাংলাদেশি বলে অত্যাচার করেছেন। এই নৈশভোজ দেশের মুখ্যমন্ত্রীদের বড় অংশ প্রত্যাখ্যান করেছেন। নৈশভোজে গিয়ে কী বার্তা দিতে চাইলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী? উনি না গেলে মহাভারত অশুদ্ধ হতো না। কোরান অপবিত্র হত না।’

অধীরের অভিযোগের জবাব দিয়েছেন শান্তনু৷ তাঁর কথায়, ‘‘আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের সম্মানের স্বার্থেই ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কাছে সবার আগে দেশের সম্মান৷ অধীর চৌধুরী এই প্রশ্ন তুলে কী প্রমাণ করতে চাইছেন? মমতা ইন্ডিয়া জোটকে সুদৃঢ় করছেন। সেখানে অধীর বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপিকে শক্তিশালী করছেন। বিজেপির হাত শক্ত করতেই কি উনি এই সব অবান্তর প্রশ্ন তুলছেন?’ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *