১৪৪ মিসাইল, হাইপারসনিক আগ্নেয়শক্তি! আসছে ভারতের ‘নেক্সট-জেন’ যুদ্ধজাহাজ

Indian Navy warship project নয়াদিল্লি: ইউক্রেন থেকে গাজা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইন্দো-প্যাসিফিক—বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা সংকট আর সামরিক উত্তেজনার আবহে ভারত তার প্রতিরক্ষা কাঠামোকে নতুন করে গড়ে…

Indian Navy warship project

Indian Navy warship project

নয়াদিল্লি: ইউক্রেন থেকে গাজা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইন্দো-প্যাসিফিক—বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা সংকট আর সামরিক উত্তেজনার আবহে ভারত তার প্রতিরক্ষা কাঠামোকে নতুন করে গড়ে তোলার পথে এগোচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটেই ভারতীয় নৌবাহিনী শুরু করল তার ইতিহাসের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও ভবিষ্যতমুখী যুদ্ধজাহাজ প্রকল্প-‘প্রজেক্ট-১৮’।

১৩ হাজার টনের এক স্টেলথ ডেস্ট্রয়ারের মাধ্যমে ভারত নৌশক্তির এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করতে চলেছে, যা কেবল দেশীয় সমুদ্রসীমা রক্ষাই নয় বরং আন্তর্জাতিক জলপথে ভারতের উপস্থিতিকে আরও জোরালো করে তুলবে।

ক্ষমতা ও কৌশলে নজিরবিহীন

প্রজেক্ট-১৮ ডেস্ট্রয়ার হতে চলেছে ভারতের সবচেয়ে বড় এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে সবচেয়ে উন্নত সারফেস কমব্যাট্যান্ট। বর্তমান বিশাখাপত্তনম-শ্রেণির তুলনায় বহুগুণ বেশি পরিণত ও বিধ্বংসী। এর মাধ্যমে ভারতীয় নৌবাহিনী প্রথমবারের মতো এমন একটি যুদ্ধজাহাজ পেতে চলেছে, যার ক্ষমতা আমেরিকা, চিন বা রাশিয়ার অত্যাধুনিক ক্রুজার শ্রেণির সঙ্গে তুলনীয়।

এই যুদ্ধজাহাজে থাকবে ১৪৪টি ভার্টিকাল লঞ্চ সেল, যেটা ভারতের যেকোনও নৌযানের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত-

  • ৩২টি VLS সেল, দীর্ঘপাল্লার PGLRSAM মিসাইলের জন্য (শত্রু বিমান ও ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিরোধে সক্ষম),
  • ৪৮টি সেল, ব্রহ্মোস এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ ও অন্যান্য দেশীয় ল্যান্ড-অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইলের জন্য,
  • ৬৪টি সেল, অত্যল্প পাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য এবং
  • ৮টি স্ল্যান্ট লঞ্চার, যেখানে আগামী প্রজন্মের হাইপারসনিক ব্রহ্মোস-২ মোতায়েনের সম্ভাবনা।

এই বহুমাত্রিক অগ্নিশক্তির সংমিশ্রণে প্রজেক্ট-১৮ হয়ে উঠবে এক ‘লেয়ারড ডিফেন্স’ যুদ্ধজাহাজ, যা একই সঙ্গে আকাশ, জল, স্থল ও জলতলের শত্রুর মোকাবিলা করতে পারবে।

পরিচালনায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ছাপ Indian Navy warship project

প্রজেক্ট-১৮ জাহাজে থাকবে পরবর্তী প্রজন্মের রাডার ও সেন্সর স্যুট, যা যৌথভাবে তৈরি করছে DRDO ও BEL। চারটি বৃহৎ AESA রাডার (S-band সহ), মাল্টিসেন্সর মাস্ট ও উন্নত ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম, যা ৫০০ কিমি-রও বেশি দূরে শত্রুর উপস্থিতি নির্ণয় ও প্রতিরোধে সক্ষম হবে।

সাইবার হুমকি, রেডিও জ্যামিং বা শত্রু রাডার ব্লাইন্ড করার পরিস্থিতিতেও এই যুদ্ধজাহাজ কার্যকরভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র সফল প্রতিফলন

প্রজেক্ট-১৮ কেবল প্রতিরক্ষা নয়, ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানেরও প্রতীক। প্রায় ৭৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত হবে। থাকবে সম্পূর্ণ ইন্টিগ্রেটেড ইলেকট্রিক প্রোপালশন (IEP) সিস্টেম, উন্নত স্টেলথ ডিজাইন, এবং স্বয়ংক্রিয় জলতল ড্রোন পরিচালনার সুবিধা, মাইন ক্লিয়ারেন্স ও সাবমেরিন সনাক্তকরণে যার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

এছাড়া, থাকবে দুটি মাল্টি-রোল হেলিকপ্টার মোতায়েনের সুবিধা এবং দ্রুত লঞ্চ ও স্টোরেজের জন্য রেললেস ট্র্যাভার্সিং ব্যবস্থা।

ভারতীয় নৌবাহিনীর ভবিষ্যতের ভরকেন্দ্র

২০২৮ সালের মধ্যে প্রজেক্ট-১৮-এর ডিজাইন সম্পূর্ণ হওয়ার কথা। নির্মাণ এবং কমিশনিং পরবর্তী দশকে চলবে। মুম্বইয়ের Mazagon Dock Shipbuilders এবং কলকাতার Garden Reach Shipbuilders প্রকল্পটির নেতৃত্বে থাকবে।

এই ডেস্ট্রয়ারগুলো ভারতীয় নৌবাহিনীর সেই ভবিষ্যত ভিশনকেই বাস্তব রূপ দেবে, যেখানে ২০৩৫ সালের মধ্যে ১৭০–১৭৫টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। ভারত মহাসাগর থেকে দক্ষিণ চিন সাগর পর্যন্ত সামুদ্রিক কৌশলে ভারতের আধিপত্য বজায় রাখতে প্রজেক্ট-১৮ হবে এক চাবিকাঠি।

India: Indian Navy launches “Project-18,” an ambitious plan to build a 13,000-ton stealth destroyer. The warship will be a game-changer with 144 vertical launch cells for BrahMos-2, PGLRSAM, and other missiles, establishing a new benchmark in naval power.