সৌরবায়ু পরীক্ষায় সূর্যের পথে আদিত্য এল-১, এই অভিযানের গুরুত্ব কী?

সৌরবায়ু পরীক্ষায় সূর্যের পথে আদিত্য এল-১, এই অভিযানের গুরুত্ব কী?

বেঙ্গালুরু: মহাকাশে চন্দ্রবিজয়ের পর এবার পাড়ি সূর্যের দেশে৷ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে চাঁদের ‘কুমেরু’ জয়ের নজির গড়ার ১০ দিনের মধ্যে সৌর মিশনে নেমে পড়ল ভারত৷ সেই সঙ্গে দেশের মুকুটে জুড়ল সাফল্যের আরও একটি পালক৷ 

শনিবার সকাল ১১টা বেজে ৫০ মিনিট। আরও এক ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী থাকল দেশবাসী। সূর্যের পথে পাড়ি দিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর তৈরি মহাকাশযান আদিত্য-এল১। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা সতীশ ধাওয়ন স্পেস রিসার্চ সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে ইসরোর রকেট ‘পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল’ (পিএসএলভি)-এ চেপে সূর্যের উদ্দেশে রওনা দিল সেই মহাকাশযান। শনিবার সকালে রবির-রহস্য ভেদে নেমে পড়ল আদিত্য। সেই সঙ্গেই ভারতের প্রথম সোলার স্পেস অবজারভেটরি মিশনেরও সূচনা হল। সফল ভাবে উৎক্ষেপনের পর পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে একটি হ্যালো কক্ষপথে অবস্থান করবে আদিত্য। গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় ১২০ দিন৷ সূর্যের পৃষ্ঠদেশে নজর রাখবে সে। সূর্যের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে আদিত্য-এল১৷ সেই সঙ্গে সৌর ঝড় পৃথিবীর উপর কী কী প্রভাব ফেলতে পারে তা জানার চেষ্টা চালাবে ইসরোর এই সৌরযান। 

আর কী লক্ষ্য রয়েছে এই মিশনের ?
 

সূর্যের বায়ুমণ্ডলের খোঁজ নেওয়া ছাড়াও এই মিশনের লক্ষ্য সৌর কার্যকলাপ এবং  মহাকাশ আবহাওয়ার উপর তাদের প্রভাব কতখানি, তা পর্যবেক্ষণ করা। সূর্যের উপরের বায়ুমণ্ডল এবং সৌর বায়ুর সঙ্গে এর যোগাযোগ পরীক্ষা করাও হবে আদিত্যর কাজ৷
 

সৌর বায়ু কী ?
নাসার বিজ্ঞাবীরা জানাচ্ছেন, সৌর বায়ু হল কণা এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের একটি ধ্রুবক প্রবাহ যা সূর্য থেকে নির্গত হয়ে থাকে। এই সৌর বায়ু সমগ্র সৌরজগৎ জুড়ে প্রবাহিত হয়৷ এটি গ্রহের গায়েও আঘাত হানতে পারে যদি না তা বায়ুমণ্ডল বা চৌম্বক ক্ষেত্র বা উভয়ের দ্বারা লক্ষ্যচ্যুত হয়। পৃথিবীতে যে চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে, তা আমাদের সৌর বায়ুর হাত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু সৌর বায়ু খুব তীব্র হলে, সেই রক্ষাকবচ ভেঙে দেয় এবং মেরুর কাছে মেরুপ্রভা বা আকাশে দৃশ্যমান আলোকচ্ছটা সৃষ্টি করতে পারে। যখন এটি চাঁদের কাছে আসে, তখন পাতলা বায়ুমণ্ডলের জেরে সরাসরি চন্দ্র পৃষ্ঠে আঘাত করে। চাঁদের পৃষ্ঠজুড়ে চৌম্বক ক্ষেত্রের ছোট বুদবুদে শুধুমাত্র সামান্য বিচ্যুতি ঘটে। 

সৌর বায়ু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেন গুরুত্বপূর্ণ ?

ইসরোর তৈরি আদিত্য এল১-এ সাতটি পেলোড রয়েছে। তার মধ্যে আদিত্য সোলার উইন্ড পার্টিকেল এক্সপেরিমেন্ট নামে যে পেলোডটি রয়েছে, তার কাজ হবে সৌর বায়ুর গঠন এবং গতিশীলতা পরিমাপ করা। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সৌর বায়ু এবং অন্যান্য বিস্ফোরক সৌর ঘটনা, যেমন- করোনাল মাস ইজেকশন মহাকাশের প্রকৃতিকে প্রভাবিত করতে পারে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র করোনাল মাস ইজেকশন-এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তা নীল গ্রহের কাছে চৌম্বকীয় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এটি স্যাটেলাইট বা উপগ্রহের মত মহাকাশ সম্পদের কার্যকারিতার উপরেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে৷ 

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানী নীলেশ দেশাই জানান, এই উপগ্রহের মূল পেলোডটি তৈরি করেছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স। বাকি ছ’টি পেলোডও ভারতেরই বিভিন্ন সংস্থা তৈরি করেছে। এর মধ্যে চারটি পে-লোড সরাসরি সূর্যের উপর ‘নজর’ রাখবে। বাকি তিনটি পে-লোডের কাজ হবে ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট ১-এ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *