শাসক দলের রোষে পড়লেই কি পুলিশের দ্রুত বদলি হয়? উর্দির আড়ালে কতটা চাপ?

শাসক দলের রোষে পড়লেই কি পুলিশের দ্রুত বদলি হয়? উর্দির আড়ালে কতটা চাপ?

কলকাতা:  মাস খানেক আগের কথা। হঠাৎই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার আইসি অরূপ সরকারকে বদলি করা হয় দার্জিলিংয়ে। তবে এমন বদলি তো হতেই পারে, তাতে আর আশ্চর্যের কি আছে?  সেই সময় প্রশাসন জানিয়েছিল এটা রুটিন বদলি। কোনও যুক্তি বা কার্যকারণ খোঁজার মানেই হয় না। কিন্তু সত্যিই কি তাই? 

 

বিরোধীদের অভিযোগ শাসক দলের রোষের মুখে পড়ার কারণেই তাঁকে দ্রুত দার্জিলিংয়ে বদলি করে দেওয়া হয়েছিল। কোন ঘটনার জেরে এমন দাবি করছেন বিরোধীরা? ঘটনা হল গত মাসে তৃণমূলের তমলুক শহর সভাপতি চঞ্চল খাঁড়াকে রাস্তায় ফেলে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। পরদিন সেখানে গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।

 

সরাসরি আইসি’র নাম করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। কুণালের অভিযোগ, যখন তৃণমূল নেতাকে মারধর করা হচ্ছিল তখন দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও তাঁকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেনি পুলিশ। বেশ কিছুটা সময় কেটে যাওয়ার পর রক্তাক্ত তৃণমূল নেতাকে উদ্ধার করা হয়। কুণালের অভিযোগ বিজেপির হয়ে দালালি করছিলেন ওই আইসি। তাই তৃণমূল নেতাকে দ্রুত উদ্ধার করা হয়নি। আর এর সাত দিন পরেই তমলুক থানার আইসিকে বদলি করা হয়েছিল দার্জিলিংয়ে। বিরোধীদের দাবি এটা একটা উদাহরণ মাত্র। সব সময় শাসকদলকে খুশি করে চলতে না পারলেই পুলিশের এমন অবস্থা হবে। তাই রাজ্য পুলিশ যে যথেষ্ট চাপের মধ্যে কাজ করে সেটা স্পষ্ট।

 

বিষয়টি সত্যিই কি তাই? নাকি এভাবে বলাটা অত্যন্ত সরলীকরণ হয়ে যাচ্ছে? উল্লেখ্য পুলিশ শাসক দলকে খুশি করে চলে, এই অভিযোগে বহুদিন ধরেই সরব বিজেপি-সহ অন্যান্য বিরোধী দল। পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্বে এই অভিযোগ আরও উচ্চগ্রামে ওঠে। এক শ্রেণির পুলিশ অফিসারদের মদতে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি, তাঁদের উপর অত্যাচার হলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি, থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে সেটি নিতে যথেষ্ট টালবাহানা করা হয়েছে, এমন অভিযোগ তখন নিয়মিত উঠতে দেখা গিয়েছে। তবে এত অভিযোগের মধ্যেও বেশ কিছু পুলিশ অফিসার ও পুলিশকর্মী নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করেছেন বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করে। তাই বিরোধীদের দাবি যেসব পুলিশ অফিসারকে হাতের মুঠোয় আনতে পারে না শাসক দল, তাঁদেরই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হয় শাসক দলের ইশারায়। তবে শুধু তৃণমূল আমল বলে নয়, বাম জমানাতেও এমন অভিযোগ হামেশাই শোনা যেত। তবে কী ‘যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ’, এই প্রবাদটা সব অর্থেই ঠিক? আগামী দিনে যদি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় আসে তখনও কী একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। এর উত্তর একমাত্র সময়ই দিতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *