কলকাতা: গত এক সপ্তাহে গ্লোবাল সাউথে কূটনৈতিক তৎপরতা হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে। ভারত, চিন, ব্রাজিল, এমনকি ‘গ্লোবাল নর্থ’ থেকে বহিষ্কৃত রাশিয়াও আলোচনায় সক্রিয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী ট্যারিফ নীতি ও প্রকাশ্য আক্রমণের জবাব দিতেই পুরনো ব্রিকস জোট-এখন পাঁচটি নতুন দেশ নিয়ে আরও সম্প্রসারিত-সংহত হচ্ছে। লক্ষ্য- মার্কিন ডলারের প্রভাব খর্ব করা ও ট্রাম্পের প্রতিদিনের অর্থনৈতিক চাপের পাল্টা জবাব দেওয়া।
ট্রাম্প সম্প্রতি ভারত, রাশিয়া, চিন ও ব্রাজিলের পণ্যে শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০% করেছেন, ভারতের ক্ষেত্রে যুক্তি-রাশিয়ান তেলের আমদানি বৃদ্ধি (যা ভারতের মোট তেল আমদানির ৩৬%)। ব্রাজিলকেও সমান হারে ট্যারিফ দিয়ে তিনি অভিযোগ তুলেছেন, তারা সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোকে রাজনৈতিকভাবে নিপীড়ন করছে। ট্রাম্প সরাসরি ব্রিকসকে “অ্যান্টি-আমেরিকান” বলে কটাক্ষ করেছেন, ভারত ও রাশিয়াকে বলেছেন “মৃত অর্থনীতি”।
মোদী-পুতিন ঘনিষ্ঠতা, লুলার স্পষ্ট বার্তা
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে “খুব ভালো ও বিস্তারিত” আলোচনা করেছেন এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একদিন আগে মস্কোয় ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। খবর আছে, পুতিন এই বছর শেষের দিকে নয়াদিল্লি সফরে যাবেন।
এদিকে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা মোদীর সঙ্গে টেলিফোনে ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা করেছেন। তিনি ট্রাম্পের সরাসরি বাণিজ্য আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, “আমি নিজেকে অপমান করব না।” বরং তিনি ব্রিকসের সভাপতির দায়িত্ব ব্যবহার করে সম্মিলিত জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। লক্ষ্য, ভারত ও চীনের সঙ্গে একসঙ্গে পরিকল্পনা করে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মোকাবিলা।
চিনের সঙ্গে নতুন উষ্ণতা
মোদী চলতি মাসের শেষে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চিন যাচ্ছেন-৭ বছরের মধ্যে এটাই তার প্রথম সফর। চিনের রাষ্ট্রীয় মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস ভারতের প্রতি সুর নরম করেছে।
ট্রাম্পের ক্রিপ্টোকারেন্সি কৌশল BRICS anti-US tariffs
একসময় বিটকয়েনকে “প্রতারণা” বলা ট্রাম্প এখন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব ক্রিপ্টো রাজধানী বানানোর প্রচারে নেমেছেন। সম্প্রতি তিনি এক নির্বাহী আদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি ও বিকল্প বিনিয়োগ (প্রাইভেট ইকুইটি, রিয়েল এস্টেট) 401(k) রিটায়ারমেন্ট অ্যাকাউন্টে অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন দিয়েছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ব্রিকসের সম্ভাব্য কমোডিটি-সমর্থিত মুদ্রা পরিকল্পনা ও ‘ব্রিকস পে’ উদ্যোগের পাল্টা হিসেবেই এই পদক্ষেপ।
ব্রিকসের সম্মিলিত অবস্থান
বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৪৬% ও বৈশ্বিক জিডিপির ৩৫.৬% অবদান রাখা ব্রিকস এখন ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি ও শুল্ক যুদ্ধের বিরুদ্ধে একজোট হচ্ছে। মোদী ও লুলার আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০২৪ সালের ১২ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০৩০ সালে ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঘনিষ্ঠতা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আধিপত্যের চ্যালেঞ্জ বাড়াবে এবং বহুমেরু বিশ্ব ব্যবস্থার গতি ত্বরান্বিত করবে। ট্রাম্পের শুল্ক চাপের জবাব হিসেবে ব্রিকসের পাল্টা ঝড় আসন্ন।
World: Global South diplomatic activity intensifies as BRICS nations, including India, Russia, and Brazil, unite against Trump’s aggressive 50% tariffs. PM Modi’s talks with Putin and President Lula’s defiance signal a concerted effort to challenge the US dollar’s dominance and combat mounting economic pressure.