রাশিয়ার তেল নিয়ে ভারতকে রীতিমতো হুমকি দিচ্ছেন ট্রাম্প, কিন্তু কেন?

Trump threatening India over Russian oil কলকতা: রাশিয়ার তেল কিনে তা আবার বিশ্ববাজারে বিক্রি করে ‘বিশাল মুনাফা’ করছে ভারত, এমন অভিযোগ তুলে এক বিস্ফোরক বার্তায়…

Trump threatening India over Russian oil

কলকতা: রাশিয়ার তেল কিনে তা আবার বিশ্ববাজারে বিক্রি করে ‘বিশাল মুনাফা’ করছে ভারত, এমন অভিযোগ তুলে এক বিস্ফোরক বার্তায় ভারতের উপর আমেরিকায় রফতানি হওয়া পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির হুঁশিয়ারি দিলেন নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু আদতে রাশিয়া নয়, বরং আমেরিকার নিজের জ্বালানি বাজার ও ভূ-কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের প্রয়াস।

ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করে ট্রাম্প বলেন, “রাশিয়ার বিপুল পরিমাণ তেল কিনছে ভারত। সেই তেলের এক বড় অংশ তারা আবার বাজারে বিক্রি করছে মুনাফার জন্য। তারা তোয়াক্কাই করছে না ইউক্রেনে কত মানুষ মরছে রুশ যুদ্ধযন্ত্রে। তাই আমি ভারতের উপর আমদানিশুল্ক অনেকটাই বাড়াব।”

রুশ তেলের প্রতি ভারতের ঝোঁক

২০২২ সালের যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ভারত হয়ে উঠেছে রাশিয়ার অন্যতম প্রধান জ্বালানি ক্রেতা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১৭.৫ লক্ষ ব্যারেল রুশ ক্রুড তেল কিনেছে ভারত, যা দেশের মোট তেল চাহিদার প্রায় ৩৬-৪০ শতাংশ। এতে যেমন আমদানি ব্যয় কমেছে, তেমনই নিয়ন্ত্রণে রাখা গিয়েছে মূল্যস্ফীতি। অথচ আশ্চর্যের কথা ২০২২-২৩ সালে ভারতকে রুশ তেল কিনতে আমেরিকাই উৎসাহিত করেছিল বিশ্ববাজারের স্থিতিশীলতার খাতিরে। এখন সেই যুক্তির আর চিহ্নমাত্র নেই।

ট্রাম্পের ‘আসল খেলা’ Trump threatening India over Russian oil

হোয়াইট হাউস দখলের পথে ট্রাম্পের অন্যতম বড় সমর্থক হল মার্কিন তেল ও গ্যাস সংস্থাগুলি। নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, তার নতুন করছাড় প্যাকেজে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা রাখা হয়েছে এই খাতের জন্য। ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করে মার্কিন তেলের চাহিদা বাড়ানোই এখন তাঁর অর্থনৈতিক কৌশল। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫-এর প্রথম ছ’মাসে ভারতের আমদানি করা আমেরিকান তেলের পরিমাণ ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বর্তমানে তা ভারতের মোট তেল আমদানির ৮ শতাংশ।

শুল্ক আসলে চাপ তৈরির কৌশল

ট্রাম্পের শুল্ক হুঁশিয়ারি শুধু শাস্তিমূলক নয়, এটি একটি কৌশলী ‘বার্গেনিং চিপ’। কারণ, ভারতের রফতানির প্রায় ২০ শতাংশ যায় আমেরিকায়। শুল্ক বাড়লে ক্ষতি হবে গার্মেন্ট, ওষুধ, অটো পার্টস ও ইলেকট্রনিক্স খাতের। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, ভারত যদি রুশ তেল কমাতে বাধ্য হয়, তাহলে প্রতি বছরে অন্তত ১১ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হবে তেলের জন্য। আর আমেরিকার শুল্ক লাগু হলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১৮ বিলিয়ন ডলারে। ফলে মধ্যবিত্ত থেকে ক্ষুদ্র শিল্প, সবার উপরই চাপ বাড়বে।

ভারতের অবস্থান: অর্থনৈতিক বাস্তব ও কূটনৈতিক ভারসাম্য

বিদেশ মন্ত্রক (MEA) ট্রাম্পের মন্তব্যে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, “ভারত রুশ তেল কিনেছে সাশ্রয়ী ও নিশ্চিত জ্বালানি সরবরাহের স্বার্থে। ২০২২ সালে মার্কিন প্রশাসনই আমাদের উৎসাহ দিয়েছিল বাজার স্থিতিশীল রাখতে।” পাশাপাশি ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, ২০২৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য ভারত অপেক্ষা বহুগুণ বেশি। এমনকি আমেরিকাও রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম, প্যালেডিয়াম ও সার আমদানি করছে।

নিষ্পত্তির রাজনীতি নাকি শক্তির প্রদর্শন?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে তেলের দখল নিয়ে এক আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক কসাকসির চিত্র। রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেয়েও বড় লক্ষ্য এখন ওয়াশিংটনের, বিশ্বজুড়ে জ্বালানি শৃঙ্খলায় নিজের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে আনা। আর সেই প্রেক্ষাপটে ভারতকে চাপে ফেলা যেন ট্রাম্পের নতুন রাজনৈতিক কৌশলের মেরুদণ্ড হয়ে উঠছে।

 

World: Donald Trump threatens India with higher tariffs for allegedly profiting from Russian oil reselling, a move analysts see as a strategy to boost US energy markets. India’s Russian crude imports have surged to 36-40% of its needs, a trend initially encouraged by the US itself.