‘আমি থাকলে এই ১০টি প্রশ্নও যুক্ত করতাম’, বিচারপতির সাক্ষাতকার নিয়ে বললেন দেবাংশু

‘আমি থাকলে এই ১০টি প্রশ্নও যুক্ত করতাম’, বিচারপতির সাক্ষাতকার নিয়ে বললেন দেবাংশু

কলকাতা: এখন একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে চর্চা বিরাট মাত্রায় হচ্ছে। সোমবার বাংলার এক জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বর্তমানে রাজ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যা যা নির্দেশ আসছে বা পদক্ষেপ হচ্ছে তার সিংহভাগ কারণ তাঁকেই বলা যায়। সেই বিচারপতির সাক্ষাৎকার নিয়ে বিতর্কও হচ্ছে। তিনি কি আদতে এভাবে সাক্ষাৎকার দিতে পারেন, তাই নিয়ে প্রশ্ন। তবে এই বিষয় নিয়ে মুখ খুলে সেভাবে কোনও বিতর্কে না গেলেও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য বিচারপতিকে প্রশ্ন করার বিষয়ে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন- বগটুই কাণ্ডের মূল পাণ্ডা সিবিআই জালে, সিউড়ি থেকে পাকড়াও

ফেসবুক লাইভে এসে দেবাংশু জানিয়েছেন, তিনি যদি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নিতেন তাহলে আরও ১০ টি প্রশ্ন তার সঙ্গে যুক্ত করতেন। তাঁর কথায়, বিচারপতিকে যা যা প্রশ্ন করা হয়েছে তা ভালো, কিন্তু তিনি থাকলে আরও ১০ টি প্রশ্ন করতেন। কোন কোন প্রশ্ন করতেন তাহলে দেবাংশু, সেটাও বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন তিনি। তৃণমূল নেতার যুক্তি, একজন বিচারপতির যেমন বাকস্বাধীনতা আছে, সাক্ষাৎকার দিতে পারেন, তেমনই একজন নাগরিক হিসেবে তিনিও এই প্রশ্নগুলি পাবলিকের সামনে শেয়ার করতে পারেন। এখন সংক্ষেপে দেখা যাক, কোন কোন প্রশ্নের কথা বলেছেন দেবাংশু ভট্টাচার্য।

আরও পড়ুন- ‘বিধানসভায় যে ভুল বিজেপি করেছিল, তৃণমূল সেই ভুলটা করল’

দেবাংশুর প্রথম প্রশ্ন – কোনও একটি মামলা চলাকালীন আপনি রাহুল গান্ধীর সম্পত্তি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার কথা বলেছিলেন। মামলায় পার্টি নয় এমন কোনও ব্যক্তিকে যখন টেনে আনলেনই তখন অন্তত নিরপেক্ষতার স্বার্থে আপনি ভারতীয় জনতা পার্টির কোনও নেতার নাম নেওয়ার সাহস করেননি কেন? নাকি আপনি বিশ্বাস করেন বিজেপিতে কোনও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি নেই?

দেবাংশুর দ্বিতীয় প্রশ্ন – বিজেপির মাথায় বিচার ব্যবস্থার একজনের হাত রয়েছে বলার জন্য আপনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলে ঢোকানোর হুমকি দিলেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো আপনার নাম নেননি, হঠাৎ করে ঠাকুরঘর থেকে আপনি কলা খাইনি বলে ডেকে উঠলেন কেন?

দেবাংশুর তৃতীয় প্রশ্ন – এই রাজ্যে বসে আপনি একের পর এক নেতা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন। অন্যায় হলে অবশ্যই করতে পারেন, অসুবিধা নেই। কিন্তু সমস্ত বিষয় নিয়ে যদি আপনার মন কাঁদে, তবে আপনারই সহযোগী বিচারপতি লোহিয়ার মৃত্যু নিয়ে আপনাকে আওয়াজ তুলতে দেখা যায়নি কেন?

দেবাংশুর চতুর্থ প্রশ্ন – আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে একটা লাইন বললেন, ‘আমি শুনেছি উনি খুব রেগে যান। প্রতিশোধ নেন।’ একজন বিচারপতি হিসাবে আইনের বাইরে গিয়ে একজন ব্যক্তির চরিত্র বিশ্লেষণ করা কি আইনের মধ্যে পড়ে? মুখ্যমন্ত্রীর মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত, জনপ্রিয় এক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে কুৎসা করতে পারেন?

দেবাংশুর পঞ্চম প্রশ্ন – এতই যদি নিয়ম মেনে আপনি চলেন তাহলে অনুব্রত মণ্ডলের কন্যাকে টেট পাশের সার্টিফিকেট নিয়ে সুদূর বোলপুর থেকে কলকাতায় ডাকিয়ে এনে আবার ফিরে যেতে বললেন কেন? আপনি বা আপনার আদালত কি তাঁর কলকাতা অবধি আসার খরচ বহন করেছে?

দেবাংশুর ষষ্ঠ প্রশ্ন –  প্রাজ্ঞ আইনজীবী অরুণাভ গাঙ্গুলি বার বার বলেছেন আপনি নাকি আইনের কিছুই জানেন না। বহু নির্দেশের ক্ষেত্রেই আইনকে অমান্য করা হয়েছে। জনসাধারণ আইন সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্থ তা আপনি যখন ইন্টারভিউ দিতে রাজি হলেনই তাহলে আপনি কি এই চ্যানেলেই অরুণাভ গাঙ্গুলির সঙ্গে বিতর্কে বসতে চাইবেন?

দেবাংশুর সপ্তম প্রশ্ন – বহু মানবিক রায় আপনি দিয়েছেন এটা সত্য। ভারতবর্ষের পিছিয়ে পড়ার পিছনে দুর্নীতি আছে এটাও সত্যি। অঙ্কিতা অধিকারী শাস্তি পেয়েছেন। অন্যায় করলে পাবেন। কিন্তু অঙ্কিতা অধিকারী মন্ত্রী বাবার প্রভাব কাজে লাগিয়ে চাকরি পেয়েছেন এটা কোথাও প্রমাণ হয়নি। যে মামলার পার্টি নন সেই মামলার পার্টি না হয়ে তিনি কীভাবে শাস্তি পান?

দেবাংশুর অষ্টম প্রশ্ন – ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আসার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন। কথায় কথায় উঠে এল বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা। এদিকে কেন্দ্রের শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি নিয়ে নিশ্চুপ ছিলেন। এরপর বাংলার মানুষ যদি সরলীকরণ করার চেষ্টা করেন তবে ভুল করবেন কি?

দেবাংশুর নবম প্রশ্ন –  দেশের একাধিক বিচারপতিরা যে ভাবে অবসর নেওয়ার পরে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের রাজ্যসভার সদস্য হয়ে যাচ্ছেন তাতে সাধারণ মানুষের মনে তাঁদের পূর্বকার্য নিয়ে কি প্রশ্ন উঠছে না বলে মনে করেন?

দেবাংশুর দশম প্রশ্ন – আগে বহু বিচারপতি বহু যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন, বহু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে জেলে পুরেছেন। লাইমলাইটে  আসা যদি আপনার উদ্দেশ্য না হয় তবে যে কাজ আপনার কোনও পূর্বসূরি করেনি সেই রেওয়াজ ভেঙে আপনি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন কেন?

পরে দেবাংশু একটা বিষয় স্পষ্ট করে দেন যে, অরুণাভ গাঙ্গুলী নয়, ব্যক্তির নাম হবে অরুণাভ ঘোষ। তাঁর কথায়, ”অরুনাভ গাঙ্গুলী নয়, অরুনাভ ঘোষ হবে। আসলে চতুর্দিকে এত গাঙ্গুলী..”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *