২১-এ চির নতুন, নাম তৃণমূল

আজ, মঙ্গলবার একুশে পা দিল তৃণমূল। প্রতি বছরের মতো এবারেও প্রতি ব্লকে পয়লা জানুয়ারি ঘাসফুল পতাকা তুলে সূচিত হল দলের প্রতিষ্ঠা দিবস। মুখ্যত রক্তদান, শীতবস্ত্র বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মতো নানাবিধ সামাজিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয় দলের জন্মদিন। রাজ্য কংগ্রেস ভেঙে ১৯৯৮ সালের প্রথম দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলের জন্মদিন ঘোষণার পর থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে

২১-এ চির নতুন, নাম তৃণমূল

আজ, মঙ্গলবার একুশে পা দিল তৃণমূল। প্রতি বছরের মতো এবারেও প্রতি ব্লকে পয়লা জানুয়ারি ঘাসফুল পতাকা তুলে সূচিত হল দলের প্রতিষ্ঠা দিবস। মুখ্যত রক্তদান, শীতবস্ত্র বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মতো নানাবিধ সামাজিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয় দলের জন্মদিন।

রাজ্য কংগ্রেস ভেঙে ১৯৯৮ সালের প্রথম দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলের জন্মদিন ঘোষণার পর থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে মমতার ভূমিকা আলাদা ছাপ ফেলেছিল। একাধিকবার কেন্দ্রের শাসক মোর্চার শরিক হয়ে তিনি নিজে তো বটেই, সতীর্থদের নিয়ে মন্ত্রিসভাতে যোগ দিয়েছেন। এনডিএ থেকে দ্বিতীয় ইউপিএ কাউকেই নীতিগত প্রশ্নে রেয়াত করেনি তৃণমূল। কেন্দ্রীয় রাজনীতির পাশাপাশি বাংলার ঘরোয়া আবহে সিঙ্গুর, ভাঙড়, নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনে জাতীয় স্তরে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল মমতার দল। মোটরগাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যে ব্রিটিশ আমলের আইন বলে অধিগ্রহণের নামে বহুফসলি জমি হাসিল করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। রাজ্য বিধানসভায় মাত্র ৩৫ সদস্যের তৃণমূল তখন ১০ বছরও পেরোয়নি। সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানার জন্য অধিগৃহীত জমি ফেরতের দাবিতে ২০০৬ সালে ২৭ দিন অনশন করেন মমতা। ভাঙড়, সিঙ্গুরের পর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের জেরে ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন বদলে নতুন আইন তৈরি করতে বাধ্য হয় ইউপিএ সরকার। মমতার অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলনের অভিঘাত গোটা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রধানত সেই আন্দোলনের সুবাদেই রাজ্যে সাড়ে তিন দশকের বাম শাসনের অবসান ঘটেছিল।

২১ বছরের স্মৃতি রোমন্থন

১. দল গঠন

১৯৯৮ সালের ১লা জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেস দলটি তৈরী হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নেত্রী নির্বাচিত হন। প্রথম বার লোকসভা ভোটে অংশ নিয়ে ৮টি আসনে জয়লাভ করে এই দল।

২. রেল মন্ত্রীত্ব

১৯৯৯ সালের পুনরায় লোকসভা নির্বাচন হয়। ১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতবর্ষের রেল মন্ত্রী হন, তিনি ২০০১ সাল পর্যন্ত রেল মন্ত্রী ছিলেন।

৩. কলকাতা পুরসভা জয়

২০০০ সালে কলকাতা পুরসভা ভোটে অংশগ্রহণ করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে তৃণমূল। এই প্রথম কলকাতার মহানাগরিক হন এক তৃণমূল সদস্য।

৪. প্রথম বিধানসভা ভোট

২০০১ সালে প্রথমবার তৃণমূল কংগ্রেস বিধানসভা ভোটে অংশগ্রহণ করে ও ৬০টি আসনে বিজয়ী ঘোষিত হয়।

৫. কেশপুর ও গড়বেতার নারকীয় হত্যাকান্ড

২০০১ সালের ৪ঠা জানুয়ারী মেদিনীপুর জেলার ছোট আঙারিয়ায় তৃণমূল কর্মীদের কুপিয়ে খুন করে হার্মাদরা।

৬. জাগো বাংলা

২০০৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’ প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা।

৭. সিঙ্গুর আন্দোলন

২০০৬ সালে টাটা কোম্পানির গাড়ির কারখানা তৈরীর জন্য সিঙ্গুরের ১০০০ একর জমি বলপূর্বক অধিগ্রহণ করে নেয় তৎকালীন সরকার। অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে আন্দোলন শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

৮. ২৬ দিনের অনশন

সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের স্বার্থে এবং গ্রামবাসীদের ওপর সিপিএম হার্মাদবাহিনীর নারকীয় অত্যাচারের প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ধর্মতলায় অনির্দিষ্টকালীন অনশন শুরু করেন। ২৬ দিন পর, মাননীয় রাজ্যপাল ও বিদ্বজ্জনদের অনুরোধে অনশন প্রত্যাহার করেন তিনি।

৯. নন্দীগ্রাম আন্দোলন

সিঙ্গুরের মতো নন্দীগ্রামেও বেসরকারি কেমিক্যাল হাব তৈরী করার জন্য অনিচ্ছুক কৃষকদের থেকে বলপূর্বক জমি ছিনিয়ে নিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে তৎকালীন সরকার। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে শুরু হয় আন্দোলন। ১৪ই মার্চ ২০০৭ সালে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে (সরকারি হিসেবে) ১৪ জন গ্রামবাসীর প্রাণ কেড়ে নেয়।

১০. পঞ্চায়েত জয়

২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে অংশ নিয়ে সারা রাজ্যে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস। ব্যাপক ফল করে তৃণমূল কংগ্রেস। পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ দখল করে তৃণমূল।

১১. লোকসভায় জয়

২০০৯ সালে বামবিদায়ের ঘন্টা বাজিয়ে লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক জয়লাভ করে তৃণমূল। রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ১৯টি আসনে বিজয়ী হয়।

১২. পুরসভা জয়

২০১০ সালে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে পুনরায় কলকাতা পুরসভা দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস।

১৩. বিধানসভা জয়

৩৪ বছরের অপশাসন ঘুচিয়ে, বাম সরকারকে পর্যুদস্ত করে মা মাটি মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে প্রথমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে।

১৪. জেলা পরিষদ জয়

২০১৩ সালে বামেদের কার্যত নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৩টি জেলা পরিষদ জয় করে তৃণমূল কংগ্রেস।

১৫. লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয়

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ৩৪টিতে জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস। দেশের চতুর্থ বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে আসে তৃণমূল।

১৬. ৩৩ শতাংশ মহিলা সাংসদ

২০১৪ সালের তৃণমূলের নির্বাচিত লোকসভার সাংসদদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ মহিলা সাংসদ। সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল বহু বছর ধরে আটকে। তা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।

১৭. পুরসভা জয়

২০১৫ সালে কলকাতা পুরসভা সহ রাজ্যের ৭৮টি পুরসভা নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস।

১৮. দ্বিতীয়বার বিধানসভা জয়

২০১৬ সালে ২৯৪ আসনের মধ্যে ২১১ আসন জিতে দ্বিতীয় বারের জন্য বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস।

১৯. সিঙ্গুরে জমি ফেরত

কথা দিয়ে কথা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩১ আগস্ট, ২০১৬ তে সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক রায়ে সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণকে অসাংবিধানিক আখ্যা দেয়। এরপর মমতা ববন্দ্যোপাধ্যায় সেপ্টেম্বর মাসে সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেন। সিঙ্গুর ফিরে আসে শস্যের ভাণ্ডারে।

২০. সর্বভারতীয় দলের স্বীকৃতি

২০১৬ সালে দেশের সপ্তম সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি পায় তৃণমূল কংগ্রেস।

২১. ২০১৯-এ লক্ষ্য দিল্লি

বিজেপিকে হারিয়ে এবার লক্ষ্য দিল্লি৷ জাতীয় রাজনীতিতে নিজের অবস্থান জানানো৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *