বাম-কংগ্রেস জোটে হঠাৎই কী ঘনাচ্ছে কালো মেঘ? তবে কী পশ্চিমবঙ্গে একাই লড়বে কংগ্রেস?

বাম-কংগ্রেস জোটে হঠাৎই কী ঘনাচ্ছে কালো মেঘ? তবে কী পশ্চিমবঙ্গে একাই লড়বে কংগ্রেস?

নিজস্ব প্রতিনিধি:   চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে নয়, একাই লড়তে পারে কংগ্রেস!  এমনটা দেখা দিলে অবাক  হওয়ার কিছু থাকবে না। এর নেপথ্যে রয়েছে মহম্মদ সেলিমের এক মন্তব্য। তাতে হঠাৎই  বাম-কংগ্রেস জোটের মধ্যে কালো মেঘ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী স্পষ্ট বলেছেন, “বামেদের সঙ্গে আমাদের যে জোট হয় তা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বা সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সঙ্গে কথা বলেই হয়েছিল। এখন কে কী বলছে জানি না। আমরা একাও লড়তে করতে পারি। তাতে আমাদের কোনও ভয় বা দ্বিধা নেই।” নাম না করে সেলিমের উদ্দেশেই যে অধীর এমন মন্তব্য করেছেন তা স্পষ্ট। কংগ্রেসকে নিয়ে কী মন্তব্য করেছেন সেলিম? সম্প্রতি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বলেছেন,”স্পেশাল প্লেন নিয়ে ভোরের অন্ধকারে রাহুল গান্ধীর ঘরে চলে গেলেন। রাহুল গান্ধীর পা ধরে বলছে দাদা আমাকে বাঁচাও। কংগ্রেসকেও বুঝতে হবে, যদি তারা ২০১১ সালে সমর্থন না করত তাহলে তৃণমূল ক্ষমতায় আসতে পারত না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হিম্মত ছিল না রাইটার্স বিল্ডিংয়ে যাওয়ার।” এখানেই শেষ নয়, সেলিম সরাসরি রাহুল গান্ধীকে নিশানা করে বলেছেন,”বাংলায় যখন বাম-কংগ্রেস শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে, তখন রাহুল কোন যুক্তিতে অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক করলেন?” যেভাবে রাহুলের নাম করে তিনি বক্তব্য রেখেছেন তাতেই গোটা বিষয়টি সম্পূর্ণ মাত্রা পেয়েছে। এরপরই সেলিমের সেই বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।   

২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও বাম জোট করে লড়ে। যদিও পরে সেই জোট ভেঙে যায়। এরপর একুশের বিধানসভা নির্বাচনে আবার দুই দল একসঙ্গে জোট করে। কিন্তু সেই জোটও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। যদিও সাগরদিঘি ও ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনে ফের বাম-কংগ্রেস জোট বেঁধে লড়াই করেছে। অর্থাৎ জোট ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে জমাট ভাব কিছু দেখা যায়নি।  এই আবহের মধ্যে সেলিমের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক হবে এটাই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে অধীর একটি সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন,”আমি বিমানবাবু বা সূর্যকান্ত মিশ্রদের সঙ্গে জোট করেছিলাম। বাকি নেতাদের চিনি না। সেলিম ভাইকে আমি যতটা সিপিএম নেতা হিসেবে চিনি, তার থেকেও বেশি চিনি প্রাক্তন সাংসদ হিসেবে। তাই কে কি বলছেন জানি না। বিমানবাবুর সঙ্গে যে জোট আমাদের হয়েছিল সেটা আমি ভাঙিনি।”

বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সবচেয়ে বড় দল কংগ্রেস। তবে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের ভোট অধিকাংশ বিধানসভা কেন্দ্রে দূরবিন দিয়ে খুঁজতে হয়। সেখানে বাংলায় সিপিএমের ভোট কংগ্রেসের তুলনায় অনেকটাই বেশি রয়েছে। কিন্তু সেটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কোনও একটি বা দুটি নির্দিষ্ট লোকসভা আসনে কেন্দ্রীভূত ভাবে সিপিএমের তেমন ভোট নেই বললেই চলে। তাই রাজ্যের ৪২টি লোকসভার মধ্যে বামেরা একটিতেও জিতবে, এমন বলার মতো জায়গায় নেই আলিমুদ্দিন। উল্টোদিকে রাজ্যে কংগ্রেসের ভোট শতাংশ সিপিএমের থেকে কম হলেও বহরমপুর, জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ, রায়গঞ্জ, মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের উল্লেখযোগ্য ভোট রয়েছে। তাই তারা একটি বা দুটি আসনে জয় পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কংগ্রেসের দাবি সেক্ষেত্রে বামেদের সমর্থন ছাড়াই তারা জয় পেতে পারে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে একা লড়েই পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস চারটি কেন্দ্রে জয় পেয়েছিল। সেবার চতুর্মুখী  প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল বাংলায়। তাই চব্বিশের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক কেন্দ্র নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হাত শিবির।এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আর শেষ পর্যন্ত সেটা হলে বেশ কয়েকটি আসনে জয় পরাজয়ের সমীকরণ বদলে যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের জোটে মূল বাধা কোথায় ?

আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের জোটে মূল বাধা কোথায় ?

কলকাতা: আসাদুদ্দিন ওয়াইসির সঙ্গ ছাড়ুন, নয়ত কোনও জোট নয়। ফুরফুরা শরীফের আব্বাসউদ্দীন সিদ্দিকীকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বাম-কংগ্রেস। প্রসঙ্গত, বাংলায় এসে আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট করে ভোটে লড়তে চাইছিলেন AIMIM। ওয়াইসি এই মর্মে আব্বাসের সঙ্গে দেখাও করে যান। জোর আলোচনা হতে থাকে – আব্বাসের ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট এবং AIMIM একসঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোটে যোগ দেবে। আপাতত, সে গুড়ে বালি।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য তৃণমূল যথেষ্ট কাজ না করায় এবং পরিবর্তে এটি একটি ভোট ব্যাংক হিসাবে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন, সিদ্দিকী। ২১ জানুয়ারিতে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) চালু করেছিলেন এবং কংগ্রেস এবং বাম দলগুলিকে তার মিত্র ও অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। “মুসলিম, আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের স্বার্থ” রক্ষা করা – ছিল মূল বক্তব্য।

ওয়াইসির বঙ্গে ভোটে লড়াই নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস মনে করে তাদের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকে হাত দিয়ে বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে এসেছেন ওয়াইসি। ঠিক যেমন বিহার নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস-ওয়াইসি রাষ্ট্রীয় জনতা দলের স্বপ্ন চুরমার করে দেয়। কিন্তু বিজেপি সরকার বানায়। পশ্চিমবঙ্গেও সেরকম কিছু হতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মন্ত্রী এবং জমিয়তে উলামায়ে হিন্দদের রাজ্য শাখার সভাপতি সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীও ঘোষণা করেছেন যে ওআইসির বাংলায় কোনও স্থান নেই। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ তাদের ভোট ব্যাংকে হাত পড়ার আশঙ্কা করতেই পারে। যেমন তৃণমূল বাংলায় মুসলিম ভোটের ১০০ শতাংশ হস্তগত করতে চায়। সেই ভোট ভাগ হতে দিতে তাদের বিপদ বাড়বে।

কিন্তু, ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকী মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন বাংলায় সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন হয়নি। আব্বাসের জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি মনে করেন, তৃণমূলের আমলে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সংখ্যাগুরুদের দুরত্ব বেড়েছে। কারণ নীতি। সেই কারণেই তিনি বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে আসতে চেয়েছে। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র নিজেই বলেছেন, আব্বাসের কথায় সাম্প্রদায়িকতা নেই। কিন্তু AIMIM এর সঙ্গে আব্বাসের জোটের প্রশ্নেই মূল আপত্তি।

এই পরিস্থিতিতে ৪৪টি আসন চায় আব্বাসের ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। কিন্তু কংগ্রেস বা সিপিএম কেউ তা ছাড়তে রাজি নয়। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বিষয়টি নিয়ে সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখেছেন। সংবাদে প্রকাশ সিপিএম পলিটব্যুরো নেতা মহম্মদ সেলিম আব্বাসকে জানিয়েছেন AIMIM এর সঙ্গে জোট হলে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বাম কংগ্রেস জোটে থাকবে না। সংবাদে প্রকাশ আব্বাস পাল্টা বলেছেন, বাম-কংগ্রেসকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। ওরা নিল না। কিছু করার নেই। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন সংখ্যালঘু ভোট ১২০টি বিধানসভায় ফ্যাক্টর হতে পারে।

২০১১ সালের আদমশুমারির সময় বাংলার মুসলিম জনসংখ্যা ২৭.০১% ছিল এবং এখন প্রায় ৩০% বেড়ে গিয়েছে মনে করা হচ্ছে। মুসলিম জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি এমন জেলাগুলির মধ্যে মুর্শিদাবাদ (৬৬.২৮%), মালদা (৫১.২৭%), উত্তর দিনাজপুর (৪৯.৯২%), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৩৫.৫৭%), এবং বীরভূম (৩৭.০৬%) জেলা রয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা, উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং নদিয়াতেও প্রচুর মুসলিম ভোটার রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *