এতো ট্রেড ইউনিয়নের ধর্মঘট, রাস্তায় তাণ্ডব কেন?

তিয়াষা গুপ্ত: ১. বনধ ডেকেছ কারা? কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ১৮ টি শ্রমিক সংগঠন ৪৮ ঘণ্টার বনধ ডাকে দেশজুড়ে। সমর্থন করেছে অল ইন্ডিয়া কিষাণ সভা, আদিবাসী অধিকার রক্ষা মঞ্চ, ভূমি অধিকার আন্দোলন ও আরো অনেকে। ২. ইস্যু কী? শ্রমজীবী মানুষের ন্যূনতম মাসিক ছয় হাজার টাকা পেনশন, শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সমকাজে সমবেতনের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন। কেন্দ্রীয়

এতো ট্রেড ইউনিয়নের ধর্মঘট, রাস্তায় তাণ্ডব কেন?

তিয়াষা গুপ্ত:  ১. বনধ ডেকেছ কারা? কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ১৮ টি শ্রমিক সংগঠন ৪৮ ঘণ্টার বনধ ডাকে দেশজুড়ে। সমর্থন করেছে অল ইন্ডিয়া কিষাণ সভা, আদিবাসী অধিকার রক্ষা মঞ্চ, ভূমি অধিকার আন্দোলন ও আরো অনেকে।

২. ইস্যু কী? শ্রমজীবী মানুষের ন্যূনতম মাসিক ছয় হাজার টাকা পেনশন, শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সমকাজে সমবেতনের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে বনধ।

৩. প্রশ্ন হল তাণ্ডব কেন? বনধ ডেকেছ শ্রমিক সংগঠনগুলি। শ্রমিক স্বার্থে এই বনধ। বারবার এমনটাই ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি মমতা বন্দ্যাোপাধ্যায়ের কাছে বনধ সমর্থনের প্রস্তাব আসে। কোনো রাজনৈতিক দল নয়, তাঁর সমর্থন চেয়েছে বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন সিটু। ধর্মঘট সমর্থন করতে মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটুর রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। যদিও তিনি সাফ জানিয়ে দেন, বনধ হবে না। বনধ বানচাল করতে রাস্তায় প্রচুর বাস নামানো হয়। ধর্মঘটীদের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রেফতারও করা হয়।

তাণ্ডবের নজির সকাল থেকে রাস্তায় বনধ সফল করতে বেড়িয়ে পড়েন বাম কর্মী সমর্থকরা। সড়ক-রেল অবরোধ। বাস ভাঙচুর। যাদবপুর ৮ বি বাসস্ট্যান্ডে বাম কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। গড়িয়ায় বাস ভাঙচুর। বারাসতে পড়ুয়াভর্তি স্কুল বাসে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি চালককে মারধর।

হাওড়ার বালিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ, সোদপুরে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ। শোভাবাজারে ব্যাপক উত্তেজনা। চলন্ত বাসে আগুন লাগানোর চেষ্টা বনধ সমর্থকদের। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ।

প্রশ্ন হল, শ্রমিক স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে যে ধর্মঘট, আন্দোলন তাকে ঘিরে এমন তাণ্ডব হবে কেন? কেন মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে দেওয়ার চেষ্টা হবে? বনধকে সমর্থন করেছে বিভিন্ন কৃষি মঞ্চ। কৃষক সমস্যা এই মুহূর্তে সারা দেশে মারাত্মক আকার নিয়েছে। সারা দেশে ব্যাপক কৃষি আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছে দেশ। কিন্তু এমন তাণ্ডব কি সুস্থ রাজনীতির পরিচয় হতে পারে?

সময় বদলেছে। এখন মানুষ আর ধর্মঘট করে দিবানিদ্রায় বিশ্বাস করে না। তাই সল্টলেক সেক্টর ফাইভে বনধের কোনো প্রভাবই পড়েনি। আইটি সেক্টর দেখিয়ে দিল বনধ এখন বস্তাপচা হাতিয়ার। কর্মনাশা বনধ কীভাবে জনজীবনের সর্বনাশ করে, তা মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন। অতীতে এই রাজ্যের বুকে কৃষক স্বার্থে, শ্রমিক স্বার্থে আন্দোলন বামেদের জমি মজবুত করতে সাহায্য করেছে। মেহনতি মানুষের স্বার্থে আওয়াজ তুলেছে তারা। এবারও সেই পথেই হাঁটতে চলেছে তারা। কিন্তু পুরনো রাজৈনতিক সংস্কৃতি আঁকড়ে হালে পানি পাবে বামেরা? প্রথম দিনের বনধে সেই সম্ভাবনা তৈরি হল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *