চাকরি ছেড়ে চাষবাস, মাসে আয় ৩০ লাখ! দেশের কৃষি মানচিত্রে শুরু নয়া অধ্যায়

তিয়াষা গুপ্ত: কৃষি আর কৃষক সমস্যা নিয়ে জেরবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিরোধীরা কৃষি অস্ত্রে মোদীকে বিদ্ধ করে চলেছে। এই অবস্থায় লোভনীয় চাকরি ছেড়ে কৃষিকে হাতিয়ার করে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন কৃষকদেরই কেউ কেউ। দেশের কৃষির রূপ বদলে দিতে তাঁরা অগ্রণী। ঋণের বোঝা, জলের অভাব, উপযুক্ত দাম না পাওয়া এর জেরে কৃষক আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এই সব

চাকরি ছেড়ে চাষবাস, মাসে আয় ৩০ লাখ! দেশের কৃষি মানচিত্রে শুরু নয়া অধ্যায়

তিয়াষা গুপ্ত:  কৃষি আর কৃষক সমস্যা নিয়ে জেরবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিরোধীরা কৃষি অস্ত্রে মোদীকে বিদ্ধ করে চলেছে। এই অবস্থায় লোভনীয় চাকরি ছেড়ে কৃষিকে হাতিয়ার করে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন কৃষকদেরই কেউ কেউ। দেশের কৃষির রূপ বদলে দিতে তাঁরা অগ্রণী। ঋণের বোঝা, জলের অভাব, উপযুক্ত দাম না পাওয়া এর জেরে কৃষক আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এই সব চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কৃষিকে লাভদায়ী পেশা করার সলুক সন্ধন বাতলে দিলেন ১০ কেরিয়ারিস্ট।

চাকরি ছেড়ে চাষবাস, মাসে আয় ৩০ লাখ! দেশের কৃষি মানচিত্রে শুরু নয়া অধ্যায়পুনের ২ ভাই চাকরি ছেড়ে কৃষি অবলম্বন করেছেন, মাসে আয় প্রায় ৩০ লাখ৷ এঁরা হলেন আজিনকেয়া ও সত্যজিৎ হাঙ্গে। এঁরা লোভনীয় চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের গ্রামে ফিরে এসে কৃষি কাজ শুরু করেন। আত্মীয়-পরিজন বন্ধু সবাই চমকে উঠেছিলেন তাঁদের সিদ্ধান্তে। তাঁরা ডালিম, পেঁপে, তুর ডাল, মুগ ডাল, উরদ ডাল, কলা, আঁখ চাষ শুরু করেন। তাঁদের ২০টি দেশি গাই আছে। প্রথম ২ বছর লোকসানে ডুবে গেছেন তাঁরা। তাসত্ত্বেও হাল ছাড়েননি। এখন লাভের অঙ্ক ঘরে আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিন তাঁদের ফসল পৌঁছে যায়। এছাড়া নিজেরা অনলাইনের মাধ্যমেও ক্রেতার কাছে ফসল পৌঁছে দেন।

চাকরি ছেড়ে চাষবাস, মাসে আয় ৩০ লাখ! দেশের কৃষি মানচিত্রে শুরু নয়া অধ্যায়জমি নয়, সার নয়, বোতলে চাষের অভিনবত্ব ৪১ বছরের পুনের আইটি প্রফেশনাল দেখিয়েছেন জমি ছাড়াই চাষ সম্ভব। কথাটায় খটকা লাগলেও সত্যি। তিনি হাতেনাতে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন পেট বোতলে বিশেষ ধরণের হার্বস থেকে সরিষা, টমেটো থেকে শাকসবজি চাষ করা যায়। এমনকী দইয়ের ভার, খাবারের প্লাস্টিকের কন্টেনারেও চাষ সম্ভব।

চাকরি ছেড়ে চাষবাস, মাসে আয় ৩০ লাখ! দেশের কৃষি মানচিত্রে শুরু নয়া অধ্যায়প্রতিদিন বাগানে ১২ কেজি সবজি চাষ, কীভাবে? প্রেমানন্দন কেজিকোড়ের মোজিক্কাল শহরের ভিজিল্যান্স সাব ইন্সপেক্টর। গত ৮ বছরে তিনি বাড়ির প্রয়োজনের জন্য কোনো সবজি কেনেননি। নিজেরাই নানা ধরণের সবজি চায করেছেন।  কারণ প্রতিদিন তিনি বাগানে ১২ কেজি সবজি উৎপাদন করেন। নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকে। বর্ষার জলই ১২ মাস চাষের ভরসা। বর্ষাকালে জল ধরে রেখে খরা মরসুমেও অবাধে চাষ করেন। লঙ্কা, বেগুন, টমেটো, বিনস প্রতিদিন তাঁর বাগানে উৎপাদন হয়।
দেশীয় বিশেষ ধরণের ঘাস উৎপাদন

চাকরি ছেড়ে চাষবাস, মাসে আয় ৩০ লাখ! দেশের কৃষি মানচিত্রে শুরু নয়া অধ্যায়তামিলনাড়ুর চাষীকে লাভের মুখ দেখিয়েছে, এক সম্ভ্রান্ত চাষীর নাম সি পানদিয়ান। তামিলনাড়ুর শিবাগঙ্গা জেলায় তাঁর ১০ একর জমি আছে। এখানে তিনি এক বিশেষ ধরণের ঘাস উৎপাদন করেন, যার নাম ওয়ান্ডার গ্রাস। এই ঘাসের চাহিদা ওষুধ ও প্রসাধনী তৈরিতে। ফলে এই চাষ তাঁকে লাভের মুখ দেখিয়েছে।

চাকরি ছেড়ে চাষবাস, মাসে আয় ৩০ লাখ! দেশের কৃষি মানচিত্রে শুরু নয়া অধ্যায়পেঁয়াজ চাষে লাভের সন্ধান মধ্যপ্রদেশের চাষী রোহিত প্যাটেল, বয়স মাত্র ২১ বছর। উদ্যম আর পরিশ্রমের জোরে কৃষিকে হাতিয়ার করে তিনি বিপুল আয়ের সন্ধান পেয়েছন। তিনি পেঁয়াজ চাষ করেন। গরম কালে পেঁয়াজ চাষ করে লাভ হয় না। মার্চ, এপ্রিল নাগাদ প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২ থেকে ৩ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ বর্ষার সময় এর প্রায় তিন গুণ দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। পেঁয়াজ সংগ্রহ করে রাখার পদ্ধতি যথেষ্ট। তিনি নিজের মতো করে বাড়ির কাছেই স্টোররুম বানিয়ে নিয়েছেন। রোহিত একসময় আয় করতেন ৩০০০ কুইন্টালে ৯০০০০ টাকা। এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি আয় করছেন এক কোটি ৫ লাখ টাকা। তার মানে প্রায় ৯৬ লাখ টাকা লাভ।

চাকরি ছেড়ে চাষবাস, মাসে আয় ৩০ লাখ! দেশের কৃষি মানচিত্রে শুরু নয়া অধ্যায়হাই টেক কৃষকের হাতে কলা চাষে লাভ উত্তরপ্রদেশের রামসরণ ভার্মা হাইটেক চাষী নামে পরিচিত। ১৫০ একর জমিতে কলা চাষ করে তাঁর মাসিক আয় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। ১৯৮৪ সালে তিনি সারা দেশ ঘুরে সফল চাষী, কৃষি বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর গ্রামে ফিরে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলা চাষ করার পর লাভের মুখ দেখতে বেশি সময় লাগেনি।

চাকরি ছেড়ে চাষবাস, মাসে আয় ৩০ লাখ! দেশের কৃষি মানচিত্রে শুরু নয়া অধ্যায়পাহাড়ের কোলে ফার্ম, দম্পতির হাতে প্রকৃতির নব রূপ পাঁচকুলায় পাহাড়ের কোলে একটা ছোট্ট গ্রামে গড়ে উঠেছে ফার্ম, নাম আনন্দ পার্মাকালচার ফার্ম। এক দম্পতির চেষ্টায় এই ফার্ম অভিনব চেহারা নিয়েছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে এই ফার্ম নজির তৈরি করেছে। এখানে এলে কানে ভাসবে পাখির কুজন। মনীষা ও আগমের কোনো প্রথাগত চাষের কৌশল জানা ছিল না। বই পড়ে, নানাভাবে পাঠ নিয়ে এঁরা ফার্ম তৈরি করেছেন। গ্রামের বাসিন্দারাও তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।

চাকরি ছেড়ে চাষবাস, মাসে আয় ৩০ লাখ! দেশের কৃষি মানচিত্রে শুরু নয়া অধ্যায়চাকরি ছেড়ে চাষের সাহসি পদক্ষেপ পুনের এক প্রন্তিক কৃষক তিনি। অফিস বয় হিসেবে একসময় কাজ করতেন। বছরে ১২ লাখ টাকা আয় হতেই চাকরি ছেড়ে পাকাপাকিভাবে চাষের কাজ শুরু করেন। দয়ানেশ্বর বোদকেকে এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

চাকরি ছেড়ে চাষবাস, মাসে আয় ৩০ লাখ! দেশের কৃষি মানচিত্রে শুরু নয়া অধ্যায়ইঞ্জিনিয়ার থেকে কৃষক, ৬.৫ লাখ থেকে ২০ লাখ আয় অরূপ পাটিল পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। এখন তিনি সম্ভ্রান্ত কৃষক। কীভাবে? আইটিতে কাজ করতেন অরূপ। তিন মাস তিনি গুজরাত, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটকের কৃষকদের মুকোমুখি হন। তারপর চাকরি ছেড়ে পাকাপাকিভাবে কৃষিকাজ শুরু করেন। জানালেন, ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তাঁর যা আয় হত এখন তার থেকে দ্বিগুণ আয় হয়।

চাকরি ছেড়ে চাষবাস, মাসে আয় ৩০ লাখ! দেশের কৃষি মানচিত্রে শুরু নয়া অধ্যায়পরিবেশ রক্ষার নিদর্শন কৃষকদের ফসল চাষের পর যে অবশিষ্ট পড়ে থাকে তা জ্বালিয়ে দেন কৃষকরা। এতে দিল্লি ও পাশ্ববর্তী আঞ্চলে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছেন পঞ্জাবের ২ কৃষক সুখবীর ধালিওয়াল ও কমলজিৎ সিং। তাঁরা ফসলের অবশিষ্ট কাজে লাগিয়ে তৈরি করছেন বিশেষ ধরণের বায়োকোল, যা থেকে প্রকৃতিক শক্তি উৎপাদন সম্ভব। এতে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি খুলে যাচ্ছে নতুন আয়ের পথ।

কেউ আইটি পেশাদার, কেউ আবার ইঞ্জিনিয়ার, কেউ আবার অন্য কোনো পেশায় যুক্ত। সে যাই হোক কৃষিকে হাতিয়ার করে যে ভালোভাবে বেঁচে থাকা যায়, সেই পথের সন্ধন দিলেন এঁরা। ফলে আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। সরকার কৃষক স্বার্থে পদক্ষেপ করুক, কিন্তু এঁদের দেখানো পথ নিয়েও ভাবনা চিন্তা দরকার, কারণ আমাদের দেশ কৃষিমাতৃক। কৃষিকে উপেক্ষা করার কোনো জায়গাই নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *