মৃত্যুর কাছে হার মানলেন ‘গরিবের রবিনহুড’ এই IPS অফিসার, পড়ুন পুলিশকর্তার অবদান

শাম্মী হুদা: রোগ বড় বালাই, দুর্নীতি নয়, কোনও অন্যায় প্রলোভনও নয়, দূরারোগ্য ব্যধির কাছে হার মানলেন সৎ আইপিএস অফিসার মধুকর শেট্টি। মাত্র সাতচল্লিশেই নিভে গেল জীবন দীপ। কিডনি ও ফুসফুসের সংক্রমণ জনিত কারণে গত ২৮ ডিসেম্বর মৃত্যু হল তাঁর। মধুকর শেট্টির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় পুলিশ সার্ভিসের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। এমন এক শূন্যস্থান তৈরি

মৃত্যুর কাছে হার মানলেন ‘গরিবের রবিনহুড’ এই IPS অফিসার, পড়ুন পুলিশকর্তার অবদান

শাম্মী হুদা: রোগ বড় বালাই, দুর্নীতি নয়, কোনও অন্যায় প্রলোভনও নয়, দূরারোগ্য ব্যধির কাছে হার মানলেন সৎ আইপিএস অফিসার মধুকর শেট্টি। মাত্র সাতচল্লিশেই নিভে গেল জীবন দীপ। কিডনি ও ফুসফুসের সংক্রমণ জনিত কারণে গত ২৮ ডিসেম্বর মৃত্যু হল তাঁর। মধুকর শেট্টির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় পুলিশ সার্ভিসের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। এমন এক শূন্যস্থান তৈরি হল যা পূরণ করতে গেলে ফের একজন মধুকর শেট্টির আইপিএস হয়ে ওঠার অপেক্ষা। আদৌ তা কোনওদিন সম্ভব কি না তা আলোচনা সাপেক্ষ।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

এবার আসি এই স্বগর্ত পুলিশকর্তার কথায়। ১৯৯৯ –এর আইপিএসের ব্যাচে মনে রাখার মতো ব্যক্তিত্ব এই মধুকর শেট্টি। তাঁর স্বল্প চাকরি জীবনে সততার পক্ষেই থেকেছেন শেট্টি। শেষ দুটি বছর দূরারোগ্য রোগভোগ সামলেও হায়দরাবাদ পুলিশ অ্যাকাডেমির ডেপুটি ডিরেক্টরের পদ সামলেছেন। তাই কাজের মধ্যে থাকতে থাকতেই পরলোকে চলে গেলেন এই পুলিশকর্তা। ২০০৫ -৬ সাল নাগাদ কর্ণাটকের চিক্কামাগালুরুতে পুলিশ সুপার হয়ে আসেন শেট্টি। রাজ্যের সীমানায় তখন নক্সালদের আনাগোনা বাঘা বাঘা পুলিশকর্তাদের ঘুম কেড়েছে। এদিকে রাজ্যের সীমানাতে রয়েছে সারগদ কুন্দর বনাঞ্চল। সেই সংরক্ষিত বন লাগোয়া এলাকাতেই বসবাস করে বেশ কিছু পরিবার। প্রশাসনের নির্দেশে এই পরিবারগুলিকেই সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে উঠিয়ে দেওয়া হয়। বলাবাহুল্য, প্রায় ৩৫টি পরিবার দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী। তাদের পক্ষে অন্য কোথাও গিয়ে বসতি গড়ে তোলার সংস্থান ছিল না।

মধুকর শেট্টি সহকারী আইপিএস হর্ষ গুপ্তা এই পরিবারগুলির গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করেন। বেশকিছু পড়ে থাকা সরকারি জমি বাসযোগ্য করে তোলেন।তার মধ্যে ৬৪ একর জমি এই ৩৫টি পরিবারের নামে নথিভুক্ত করে দেন। যাতে সন্তান সন্ততি নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিতে পারে ওই পরিবারগুলি। এই কাজের মধ্যে দিয়ে এক সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার সূত্রপাত ঘটাতে চেয়েছিলেন শেট্টি। জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের পরবর্তি প্রজন্ম যে নক্সালদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে তা রুখতেই এই ব্যবস্থা। এদিকে শেট্টির এই উদ্যোগ জঙ্গলের বাসিন্দাদের মনে ধরেছিল। তাই নক্সাল আক্রমণ ঠেকাতে প্রায়ই স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতেন ওই আইপিএস।তাদেরকে বোঝাতেন, বন্দুকের নিশানা কখনও সুস্থ সভ্যতার জন্ম দিতে পারে না। অভাব অভিযোগ সবার থাকে তা আলোচনার মধ্যে দিয়েই সমাধানের রাস্তা খুঁজে নেয়ে এক্ষেত্রেও তেমনটাই কাম্য।পরিবারের বয়স্করা যেন যুব সম্প্রদায়কে বোঝান, বন্দুকের নল নয়, লেখাপড়া করলেই আগামীর ভবিষ্যৎ অনেক বেশি উজ্জ্বল হবে। এই সৎ পুলিশকর্তা মনে করতেন, একজন জন্ম থেকেই অপরাধী হয়ে ওঠে না, অপরাধ প্রবণতার জন্য অনেকাংশেই দায়ী থাকে ব্যক্তি মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থান। যার বদল খুব জরুরি।

মধুকর শেট্টি পেশাগত সততা বজায় রাখতে নেতা মন্ত্রীদেরও তোয়াক্কা করেননি। একবার রাজ্যের এক মন্ত্রী বেঙ্গালুরু বিমান বন্দরের বেশকিছু জমি অন্যায়ভাবে দখল করছিলেন। খবর পেয়ে সেই জমি উদ্ধারের পাশাপাশি ওই মন্ত্রীকে শ্রীঘরে পাঠাতে দুবার ভাবেননি মধুকর শেট্টি। তাঁর কেরিয়ারের শুরুর দিকে চন্দন দস্যু বীরাপ্পনকে ধরার জন্য তামিলনাড়ু ও কর্ণাটক সরকার যৌথভাবে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছিল। সেই দলে নবাগত আইপিএসের তালিকায় ছিলেন শেট্টি। সালটা ২০০৪,চন্দন দস্যুকে হাতেনাতে ধরতে না পারলেও এনকাউন্টারে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশের হয়ে যোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন মধুকর শেট্টি। পরবর্তিতে তাঁর মনে হয়েছিল শিক্ষায় কিছু ফাঁক থেকে গিয়েছে, তাই পাবলিক অ্ঠাডমিনিস্ট্রেশনের উপরে পিএইচডি করতে নিউইয়র্ক চলে যান।২০১৬-তে ফিরে এসে ফের নিজের কাজে যোগ দেন এই আইপিএস।

কাজের জায়গায় কখনওই পদের সুযোগ নিতেন না। ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতেন না। কোথাও পরিদর্শনে গিয়ে এক কাপ চা খেলেও নিজের পকেট থেকেই বিল মেটাতেন। সেই সঙ্গে বাকি টাকা ফেরত নিয়ে আসতেন। নিজের নীতি থেকে কখনও সরে যাননি। তাঁর নেতৃত্বে যেসব জুনিয়র ক্যাডাররা এসেছেন তাঁর যদি ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতেন, তা জানতে পারলে তিরস্কার করতে দ্বিধাবোধ করতেন না মধুকর শেট্টি।জুনিয়রদের বাসে চড়ে যাতায়াতের পরামর্শ দিতেন। আজকের দিনে শেট্টির মতো আইপিএসদের খুব প্রয়োজন নব ভারত গঠনে এঁরাই দিশা দেখাতে পারবেন।

এই সংক্রান্ত আরও খবর জানতে ফেসবুক পেজ লাইক করুন facebook.com/Aajbikal ও aajbikel.com-এ ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × four =