শিক্ষা ব্যবস্থার এ কী হাল? একশ্রেণির শিক্ষকদের অবস্থা ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে

শিক্ষা ব্যবস্থার এ কী হাল? একশ্রেণির শিক্ষকদের অবস্থা ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে

কলকাতা: বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থার কী হাল, তা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসই বারবার প্রমাণ করে দিচ্ছে! কেউ বাংলায় বানান বলতে পারছেন না, আবার উচ্চমাধ্যমিকের ইংরেজির এক শিক্ষক ইংরেজি জানেন না বলে দাবি করছেন! একশ্রেণির শিক্ষকের এমন অবস্থা রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, চলতি শিক্ষা ব্যবস্থায় কী শিখছে নতুন প্রজন্ম?

প্রাথমিক থেকে নবম-দশম বা একাদশ-দ্বাদশ, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় গোটা রাজ্য। একের পর এক ঘটনা সামনে এসেছে, যা দেখে স্তম্ভিত হয়েছে রাজ্যবাসী। লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি হয়েছে, এ কথা আজ সকলেরই জানা। কিন্তু এর বাইরেও বহু বিষয় আছে। এমন কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা স্কুলগুলিতে পড়াচ্ছেন যাদের শিক্ষার মান দেখলে চমকে উঠতে হয়। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে। এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকার মামলার ভিত্তিতে তাঁকে এজলাসে হাজির হতে বলা হয়েছিল। তাঁকে বিচারপতি বলেন, দুর্গা বানান কী, সেটা বলুন। তাতে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন মামলাকারী।

তাতে বিচারপতি বলেন, মাঠে চাষ করি বানান কী? তাতে মামলাকারী বানান হিসেবে বলেন ‘করী’। তাতে বিচারপতি ভুল শুধরে দিয়ে বলেন, ওটা ই-কার হবে, ঈ-কার হবে না। এরপর বিচারপতি মামলাকারীকে বলেন, তিনি যখন চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন কি প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁকে? তখন মামলাকারী বলেন, তিনি কোন বিষয় নিয়ে পড়াতে চান সেটা তাঁর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এরপরই বিচারপতিকে বলতে শোনা যায়, “এই বিদ্যা নিয়ে পড়াতে যাবেন না!” ‌

 

শুধু এই ঘটনা নয়, কয়েক মাস আগে এমনই একটি ঘটনার সাক্ষী থেকেছে বিচারপতির রুদ্ধদ্বার কক্ষ। এক ইন্টারভিউয়ার চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন। ওই ইন্টারভিউয়ার উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ইংরেজির শিক্ষক। সেদিন রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে সেই শিক্ষক বলেছিলেন, তিনি ইংরেজি জানেন না, তাই বাংলায় উত্তর দেবেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। সেদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে  ক্ষোভের সঙ্গে বলতে শোনা গিয়েছিল, একজন উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজির শিক্ষক  ইংরেজিতে কথা বলতে পারছেন না, এ কেমন কথা! যার এটুকু যোগ্যতা নেই তিনি আবার অন্য চাকরিপ্রার্থীদের কীভাবে ইন্টারভিউ নেবেন? সেদিন এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে।

ওয়াকিবহাল মহল মনে করে এগুলি শুধু কয়েকটি নমুনা মাত্র। যে বা যারা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁদের একে একে সামনে দাঁড় করালে এরকম আরও শিক্ষক-শিক্ষিকাকে পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়গুলি আতঙ্ক ধরিয়ে দিচ্ছে অভিভাবকদের মধ্যে। তাঁদের ছেলেমেয়েদের এমন কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা পড়াচ্ছেন না তো? এই আতঙ্ক গ্রাস করছে তাঁদের মনে। কমবেশি প্রতিটি স্কুলে এরকম একজন বা দু’জন শিক্ষক রয়ে যাননি তো? একশ্রেণির শিক্ষকের শিক্ষার এই হাল দেখে এমন প্রশ্ন ওঠাটাই তো স্বাভাবিক।

বিরোধীদের অভিযোগ,  রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে রীতিমতো লাটে তুলে দিয়েছে শাসকদলের একাংশ। যদিও শাসক দল সেই অভিযোগ মানতে রাজি নয়। এগুলিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই চিহ্নিত করতে চায় তারা। কিন্তু টাকা দিয়ে যে চাকরি হয়েছে সেটা তো আর অস্বীকার করা যাবে না। তাই গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ঘটে যাওয়া এই ধরনের টুকরো টুকরো ঘটনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *