ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন মহাদেব’-এর সময় কাশ্মীরের হরওয়ানে খতম হয় লস্কর প্রশিক্ষিত জঙ্গি হাবিব তাহির ওরফে ছোটু। প্রথমে খবরের কেন্দ্রে ছিল এই সফল সেনা অভিযান। কিন্তু এরপর যা ঘটেছে, তা সীমান্তের ওপার পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK)-এ অভূতপূর্ব।
ছোটুর পৈতৃক গ্রাম কুইয়ানে তাঁর দাফনকে ঘিরে কোনও জঙ্গি সংগঠন যাতে উপস্থিত থাকতে না পারে, সেই সিদ্ধান্ত নেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, এই মৃত্যুকে ‘শহিদি অনুষ্ঠান’ বা ‘নবীন নিয়োগ উৎসবে’ পরিণত হতে দেওয়া হবে না। লস্কর কমান্ডার রিজওয়ান হানিফ যখন অস্ত্রধারীদের সঙ্গে হাজির হন, তখনই ঘটে বিস্ফোরণ, ভয়ের স্থানে তৈরি হয় বিদ্রোহ। উত্তেজনার মধ্যে তাঁর আত্মীয় বন্দুক তুলতেই পিছিয়ে যায় জনতা নয়, বরং পালায় জঙ্গিরাই।
এই দৃশ্য সাধারণ নয়, অভাবনীয়। দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্কে মৌন থাকা এলাকার মানুষ এবার রুখে দাঁড়াচ্ছেন এই ঘটনা সেই নীরব বিপ্লবের সূচনা।
‘জিগরা’ ডাকছে জনতা, এবার মুখোমুখি জঙ্গিরা নয়, সমাজ
পোকে-র কুইয়ান ও খয়ালা গ্রামে এবার জনসভার আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে, তবে রাজনৈতিক নয়, বরং সামাজিক। ‘জিগরা’ নামে পরিচিত এই লোকায়ত সভায় ঘোষণা করা হবে, এখানে আর কেউ সন্ত্রাসে যোগ দেবে না। যারা জেহাদের নামে আমাদের সন্তানদের দিচ্ছে মৃত্যুর দিকে ঠেলে, তাদের বিরুদ্ধে এবার সমাজের রায়।
এ কোনও সংগঠিত প্রতিরোধ নয়, বরং ক্লান্তির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। বহু দশক ধরে যেসব পরিবার তাদের ছেলেদের ভারতে পাঠিয়ে আর ফিরে পায়নি, তারা এবার প্রশ্ন তুলছে,‘আমাদের ছেলে মরবে, আর তোমাদের ছেলে ইউরোপ-আমেরিকায় পড়বে?’
আতঙ্কের বিরুদ্ধে শিক্ষক, ভাইরাল বার্তায় জেহাদের মুখোশ খুলে দিলেন বিলাল PoK Anti-Terrorism Rebellion
ছোটুর এক প্রাক্তন শিক্ষক লিয়াকত আলি ওরফে সরদার বিলালের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। আট মিনিটের সেই বার্তায় তিনি সাফ বলেন, “যারা আমাদের ছেলেদের ব্রেনওয়াশ করে, তাদের সন্তানরা থাকছে বিদেশে। যদি সত্যিই জেহাদে বিশ্বাস করো, তাহলে প্রথম সারিতে তোমরাই যাও।”
এই ভিডিও রাতারাতি ছড়িয়ে পড়ে ইন্ডিগো চ্যাট গ্রুপ ও ব্যক্তিগত শেয়ারে। বিদ্রোহ নয়, বরং বিশুদ্ধ বাস্তববোধের বার্তা, যেটা আগে কখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
পাকিস্তান প্রশাসনের ভূমিকা পাল্টাচ্ছে? একঝলক ভিন্ন হাওয়া
জেলা বাঘ-এ সম্প্রতি এক ব্যক্তি, নওমান শেহজাদ, একটি সভার অনুমতি চাইলে, প্রশাসন তা নাকচ করে। সন্ত্রাসে সহানুভূতিশীলদের নিয়ে সভা যে আগে অবাধে হতো, এবার নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বন্ধ হয়ে গেল। নিঃশব্দ এই অবস্থান বদলই অনেক কিছু বলে দেয়।
ভারতের প্রতিক্রিয়া : ‘শুধু অস্ত্র নয়, ন্যারেটিভেও জয়’
অমিত শাহ রাজ্যসভায় বলেন, “পোক কংগ্রেস ছেড়ে দিয়েছিল, বিজেপিই তা ফেরত আনবে।” অপারেশন সিন্ধুর ও মহাদেবের সাফল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই প্রতিরোধ ভারতীয় কৌশলের বৈধতা প্রমাণ করে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, “পাকিস্তান সন্ত্রাসের জনক। পোকের মানুষ নিজেরাই চাইবেন ফের ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে।”
প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে বলেন, “যদি পাকিস্তানের সঙ্গে কখনও কথা হয়, তা হবে কেবল সন্ত্রাস ও পোক নিয়ে।”
এখনও নির্মূল নয়, তবে নাড়া লেগেছে ভিতরে
ডেকান হেরাল্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানের আইএসআই এখনও ছোট ছোট শিবির বানিয়ে সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে, নতুন রকম প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কিন্তু এই মুহূর্তে এক অজানা অঙ্ক ঢুকে পড়েছে খেলায় পোকের জনগণ।
যখন পরিবারেরাই রুখে দাঁড়ায়, দাফনে লস্করের জায়গা হয় না, শিক্ষক জেহাদ খারিজ করেন আর প্রশাসন সভা বন্ধ করে, তখন বোঝা যায়, এই যুদ্ধ শুধু সীমান্তের নয়। পাকিস্তানের সত্যিকারের যুদ্ধে এবার তার অভ্যন্তরীণ সমাজ।
World: In an unprecedented rebellion, locals in PoK’s Quyiān village chased away LeT commander Rizwan Hanif from a militant’s funeral. This signifies a major public shift against terrorism and jihadi recruitment, as families question the cost of violence.