গরমের ছুটি শেষ! স্কুল খুলছে ৩ জুন, কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা যাবে কবে থেকে?

কলকাতা: প্রবল গরমের দাপটে এগিয়ে আনা হয়েছিল স্কুলে গ্রীষ্ণকালীন ছুটি৷ তবে এখন পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক৷ তীব্র দাবদাহ আর নেই৷ এবার স্কুল খোলার পালা৷ গরমের ছুটি…

কলকাতা: প্রবল গরমের দাপটে এগিয়ে আনা হয়েছিল স্কুলে গ্রীষ্ণকালীন ছুটি৷ তবে এখন পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক৷ তীব্র দাবদাহ আর নেই৷ এবার স্কুল খোলার পালা৷ গরমের ছুটি কাটিয়ে ৩ জুন থেকে ফের খুলছে স্কুল৷ তবে এখনও স্কুলে যাবে না পড়ুয়ারা৷  ক্লাস শুরু হবে ১০ জুন থেকে৷ ৩ জুন থেকে শিক্ষক–শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা স্কুল আসবেন। এমনই নির্দেশিকা জারি করল স্কুল শিক্ষা দফতর। তবে, এখন দেশজুড়ে চলেছে লোকসভা ভোট৷ রাজ্যে এখনও এক দফ ভোট বাকি৷ ফলে একাধিক স্কুলে আধাসেনা রয়েছে৷ সেই কারণে ৯ জুনের আগে স্কুলগুলো ক্লাসের উপযোগী হয়ে উঠতে পারবে না। সে কথা মাথায় রেখেই ১০  জুন থেকে ছাত্র ছাত্রীদের পঠনপাঠন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ (Education Department Announced)

এমনিতে গরমে ১২ দিনের ছুটি থাকে৷ এবার তা বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়েছিল। স্কুলে শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারীরা ভোটের কাজে ব্যাস্ত থাকায় গরমের ছুটি আরও বাড়ানো হয়৷

আগামী ১ জুন শেষ হচ্ছে সাত দফার লোকসভা নির্বাচন৷ স্কুল খোলার পর সিলেবাস শেষ করার জন্য অতিরিক্ত ক্লাস করাতে হবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ইতিমধ্যেই সেই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে৷ ভোটের কাজে স্কুলগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় সেখানকার অবস্থা কী, তা জানতে চাওয়া হয়েছে৷

গরমের জন্য ২২ এপ্রিল থেকেই রাজ্যের স্কুল-কলেজগুলিতে গরমের ছুটি ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। যাতে ছাত্রছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে না  পড়ে৷ ২ জুন পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেই মতো ৩ তারিখেই খুলছে স্কুল৷ তবে পড়ুয়ারা যাবে ১০ জুন থেকে৷

এবিষয়ে শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ছুটি বাড়িয়ে ৯ জুন পর্যন্ত করা হলো। যদিও শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীদের ৩ তারিখ থেকে বিদ্যালয় যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আবহাওয়া যেহেতু অনুকূল তাই ভোটের ফলাফলের পরের দিন থেকে ছাত্র-ছাত্রীসহ সবার জন্য বিদ্যালয় খুলে দেওয়া উচিত। তার আগে বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার যথেষ্ট সময় রয়েছে।’

স্কুল খোলার তারিখ পিছানোর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি৷ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নীলকান্ত ঘোষ বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে রাজ্য শিক্ষা দফতরের অনীহা সর্বজনবিদিত। যেখানে রাজ্যের বেশিরভাগ স্কুল এবং মাদ্রাসায় শিক্ষক সংখ্যা অপ্রতুল, বাড়িতে দেখানোর কেউ নেই অর্থাৎ প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী, সেখানে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ রেখে দেওয়া এবং বর্তমান সময়ের অনেক পূর্বেই তাপমাত্রা হ্রাসের পরেও যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যেত সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকা শিক্ষা সম্পর্কে প্রশাসনের দায়সারা ভাবের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়। একটানা ৪৯ দিন স্কুল বন্ধ রেখে দেওয়া ও শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে রাজ্য সরকারের উদাসীনতা সর্বস্তরে আলোচিত এবং সমালোচিত হচ্ছে। কোন যুক্তিতে বছরের পর বছর গ্রীষ্মের ছুটি দশ দিন রাখা হয় তা কোন বোধসম্পন্ন মানুষের বোধগম্যতার মধ্যে আসে না। আশা করা যায় কীভাবে শিক্ষার্থীর ১০০০ ঘণ্টা শিখন সময় সুনিশ্চিত করা যাবে সে সম্পর্কে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রকাশ করা হবে। সমিতি পর্ষদের থেকে সেই দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে যাতে শিক্ষা বাঁচে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে অকাল মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা করা যায়।’

মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির অফিস সম্পাদক পরিমল হাঁসদা বলেন,  ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে রাজ্য শিক্ষা দফতরের অনীহা সর্বজনবিদিত। যেখানে রাজ্যের বেশিরভাগ স্কুল এবং মাদ্রাসায় শিক্ষক সংখ্যা অপ্রতুল, বাড়িতে দেখানোর কেউ নেই অর্থাৎ প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী, সেখানে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ রেখে দেওয়ার উদ্দেশ্য শিক্ষা ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে কী! বর্তমান সময়ের অনেক পূর্বেই অনুকূল আবহাওয়ায় যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যেত তখনও উদাসীন ছিল শিক্ষা প্রশাসন। একটানা ৪৯ দিন স্কুল বন্ধ রেখে দেওয়া ও শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে রাজ্য সরকারের উদাসীনতা সর্বস্তরে সমালোচিত হচ্ছে। কোন যুক্তিতে বছরের পর বছর গ্রীষ্মের ছুটি ১০ দিন রাখা হয় তা কোন বোধসম্পন্ন মানুষের বোধগম্যতার মধ্যে আসে না। আশা করা যায় কিভাবে শিক্ষার্থীর ১০০০ ঘন্টা শিখন সময় সুনিশ্চিত করা যাবে সে সম্পর্কে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রকাশ করা হবে। সমিতি পর্ষদের থেকে সেই দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে যাতে শিক্ষা বাঁচে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে অকাল মৃত্যু্র কবল থেকে রক্ষা করা যায়।”

বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডা বলেন, ‘তাপপ্রবাহের অজুহাতে গত ২২ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য চলা গরমের ছুটির পর আজ রাজ্যের শিক্ষা সচিব স্কুল খোলার নির্দেশ করেছেন কিন্তু বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি তাকে বিভ্রান্তিমূলক বলে অভিহিত করেছে। ঘটনা এই যে, নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যদি স্কুলে নির্বাচনের জন্য ফোর্স থেকে থাকে তবে শিক্ষকদের ৩ জুন এবং ছাত্রদের ১০ জুন থেকে যেতে হবে। কিন্তু যে সমস্ত স্কুলে ফোর্স নেই বিশেষতঃ প্রাথমিকে যেখানে প্রায় কোন স্কুলে ফোর্স থাকে না। তবে সেখানেও কি একই রকম হবে?  স্কুল খোলার বিভ্রান্তিমূলক নির্দেশিকা বাতিল করে ফোর্স বিহীন স্কুলে আগামী ৩ জুন থেকে পাঠদান শুরু করবার অবিলম্বে নতুন নির্দেশিকা জারির দাবি করছি৷’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *