কলকাতা: বৈচিত্রে ভরা আমাদের দেশে লুকিয়ে রয়েছে হাজারো রহস্য৷ সেই সব রহস্যের কিনিরা আজও সম্ভব হয়নি৷ তেমনই এক রহস্যের সন্ধান মেলে কর্নাটকের চেন্নাকেশব মন্দিরে৷ এই মন্দিরের অপর নাম বিজয়নারায়ণ মন্দির। আরাধ্য দেবতা নারায়ণ বা বিষ্ণু৷
মন্দিরে ঢুকলেই দেখা যাবে পুণ্যার্থীদের ভিড়। কেউ ঘণ্টার দড়িতে টান দিতে ব্যস্ত, কেউ আবার দাঁড়িয়ে আছেন পুজো দেওয়ার লাইনে। কিন্তু এই মন্দিরের মূল আকর্ষণ কিন্তু বিগ্রহ নয়। বরং কর্নাটকের চেন্নাকেশব মন্দিরের মানুষ ছুটে যায় পর্যটনের জন্য৷ কর্নাটক ভ্রমণে গেলে এই প্রাচীন হিন্দু মন্দির হয়ে ওঠে পর্যটকদের অন্যতম মূল আকর্ষণ৷ এর নেপশ্যে রয়েছে ‘মহাস্তম্ভ’। চেন্নাকেশব মন্দির প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে থাকা ৪২ ফুট লম্বা স্তম্ভ দেখতেই মূলত ভিড় জমে এখানে।
স্তম্ভ তো অনেক জায়গাতেই দেখা যায়৷ তাহলে এর বিশেষত্ব কী? আসলে চেন্নাকেশব মন্দির প্রঙ্গনে দাঁড়িয়ে থাকা এই স্তম্ভটি আর পাঁচটি সাধারণ স্তম্ভের মতো নয়। এই স্তম্ভ বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করেছে। এই স্তম্ভটিকে ঘিরে যে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, তার সমাধান আজ পর্যন্ত হয়নি।
খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকে কর্ণাটকে চেন্নাকেশব মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু করেন তৎকালীন সম্রাট বিষ্ণুবর্ধন৷ তিনি ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত। ইস্ট দেবতার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বেছে নেন বেলুরে যগচী নদীর ধারে এক বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণকে৷ ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, এই বিশাল মন্দিরটির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করতে ১০৩ বছর সময় লেগে যায়৷ এই মন্দির তার স্থাপত্য কীর্তির জন্য দক্ষিণ ভারতে প্রসিদ্ধ। মন্দিরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যের ছোঁয়া৷
গোটা মন্দিরজুড়ে একাধিক সুক্ষ্ম কারুকার্য খচিত স্তম্ভ রয়েছে। তবে মন্দির প্রাঙ্গণে থাকা ৪২ ফুটের স্তম্ভটি বরাবরই চর্চার বিষয় হয়ে থেকেছে৷ ইতিহাসবিদ থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী, প্রত্নতত্ত্ববিদ— নানা সময়ে নানা ভাবে পরীক্ষা করে দেখেছেন। কিন্তু কেউই রহস্যের কিনারা খুঁজে পাননি৷
ইতিহাসবিদরা দাবি করে থাকেন, এই স্তম্ভটি কোনও অবলম্বন ছাড়াই দাঁড়িয়ে রয়েছে। সাধারণত উঁচু স্তম্ভ তৈরির জন্য মাটির নীচে যে পর্যাপ্ত গাঁথনির প্রয়োজন হয়, তা এ এখানে নেই। আর বিস্ময়টা এখানেই৷ কী ভাবে কোনও রকম ভিত্তি ছাড়াই ৪২ ফুট উঁচু একটা স্তম্ভ খাড়া দাঁড়িয়ে থাকতে পারে৷ এই স্তম্ভের নীচে শুধুমাত্র তারার মতো খাঁজকাটা কয়েক হাত বিস্তৃত একটা প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। মাটির নীচ থেকে স্তম্ভকে আকড়ে ধরে থাকার মতো কোনও ব্যবস্থা নেই।
স্তম্ভের নীচে ছড়ানো প্ল্যাটফর্মটি শক্ত গ্রানাইট শিলা দিয়ে তৈরি। তবে স্তম্ভটিতে কোন পাথর ব্যবহার করা হয়েছে, এই ধরনের পাথর কোথায় পাওয়া যায়, তা আজ পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত ভাবে বলতে পারেননি৷ এই মহাস্তম্ভ কার্তিক দীপোৎসব স্তম্ভ নামেও পরিচিত। স্তম্ভটি তিন দিক থেকে নিজের ভার বহন করছে৷ তবে চতুর্থ দিকটিতে রয়েছে একটা ফাঁকা জায়গা। এই স্তম্ভটি ফাঁপা।
অনেকের মনে, বেলুরের এই মহাস্তম্ভ তৈরি হয়েছে সোপস্টোন বা সাজিমাটি দিয়ে। কারণ, যে সময়কালে এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল, সেই সময়কার অন্য স্থাপত্যেও ওই শিলা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে স্তম্ভে ব্যবহৃত পাথর নিয়ে আরও বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, স্তম্ভটির কাঠিন্যে তাঁরা বিস্মিত৷
বছরের পর বছর ধরে বেলুরের এই মহাস্তম্ভ এক ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ বহু প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বিপত্তির এসেছে। কিন্তু, এই স্তম্ভের গায়ে একটুকুও আঁচড় লাগেনি। ভূমিকম্পও টলাতে পারেনি অবলম্বনহীন এই স্তম্ভকে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>